ডেস্ক রির্পোট:- ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের বাংলাদেশ লাগোয়া একটি সীমান্ত জেলা থেকে বিশাল অস্ত্রের চালান জব্দ করেছে দেশটির পুলিশ। অস্ত্রের এই চোরাচালানে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রসিতপন্থী আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও মিয়ানমারের চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সিএনএফ) জড়িত বলে দাবি করেছে মিজোরাম পুলিশ।
মিজোরাম পুলিশের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) বলেছেন, বুধবার মিজোরামে অস্ত্রের বড় একটি চালান জব্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিজোরামের মামিত জেলার সাইথাহ গ্রামের কাছের একটি এলাকা থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলছে, বুধবার পশ্চিম মিজোরামের মামিত জেলায় মিয়ানমার-ভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (সিএনএফ) নেতাসহ অন্তত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিজোরামের পশ্চিম ফাইলেং থানার সাইথাহ গ্রামের কাছের ওই এলাকায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যৌথ অভিযান চালিয়েছে রাজ্য পুলিশ। এ সময় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়াও সেখান থেকে ছয়টি একে-৪৭ রাইফেল, ১০ হাজার ৫০টি কার্তুজ ও ১৩টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলেছে, মিজোরামে অন্যতম বৃহৎ অস্ত্রের চালান জব্দের ঘটনা এটি। অস্ত্রের এই চালান জব্দের মাধ্যমে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি ঠেকানো গেছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জব্দ করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সক্রিয় সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফপি) ও মিয়ানমারের চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের মাঝে চোরাচালানের পরিকল্পনা ছিল বলে পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা রাজ্যে বিদ্রোহ বিরোধী অভিযানের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন বলে দাবি করেছে মিজোরাম পুলিশ।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘‘এটি মিজোরামের বৃহত্তম অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা; যা এই অঞ্চলের অবৈধ গোষ্ঠীগুলোর কাছে শক্তিশালী সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে। এই ধরনের অস্ত্রের চালান জব্দের ঘটনা আন্তর্জাতিক অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য চলমান হুমকির বিষয়টিকে গুরুতরভাবে তুলে ধরছে।’’
মিজোরাম পুলিশ বলেছে, এই ঘটনায় পশ্চিম ফাইলেং থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। অস্ত্র চোরাচালানের নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ভারতের মিজোরামে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের সাথে ইউপিডিএফের কোনে ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি ২০২৫) ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, মিজোরাম পুলিশের প্রেস বিবৃতির বরাত দিয়ে গতকাল (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে মিজোরামের মামিত জেলার পশ্চিম ফাইলেং থানাধীন সাইথাং গ্রামে একটি অস্ত্রের চালান জব্দের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং জব্দকৃত অস্ত্রের চালানটি মায়ানমারের চিন ন্যাশন্যাল ফ্রন্ট (সিএনএফ) এবং ইউপিডিএফের মধ্যে লেনদেন হচ্ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা আদৌ সত্য নয়।
উক্ত জব্দকৃত অস্ত্রের চালান কিংবা সিএনএফ-এর সাথে ইউপিডিএফের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে এলাকায় অস্ত্রের চালানটি জব্দ করা হয়েছে সেটি বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে এবং এই সীমান্ত অঞ্চলটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা গ্রুপের হাতে।
অস্ত্রের চালানটি ধরা পড়লে তা ইউপিডিএফের কাছে যাচ্ছে বলে স্বীকারোক্তি দিতে ধৃত অস্ত্র চোরাকারবারীদের সাথে চালান গ্রহীতাদের গোপন বোঝাপড়া থাকতে পারে বলে অংগ্য মারমা মন্তব্য করেন এবং বলেন, অস্ত্রের আসল ক্রেতারা নিজেদের আড়াল করতে ও ইউপিডিএফের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে দেয়ার হীন উদ্দেশ্যে উক্ত জব্দকৃত অস্ত্রের চালানের সাথে ইউপিডিএফের নাম জড়ানো হয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইউপিডিএফ একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন। দেশের অন্যান্য গণতান্ত্রিক সংগঠনের মতোই ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকভাবে তার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কাজেই অস্ত্রের চালানোর সাথে ইউপিডিএফের জড়িত থাকার কোন প্রশ্নই উঠে না।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com