চট্টগ্রাম:- পাহাড়ি ঢল আর বানের পানিতে প্রতিবছর ডুবে রাউজান। হাজার হাজার কৃষকের সোনালি ধান, বীজতলা পচে পানির নিচে।
কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কসহ স্থানীয় সড়কগুলোতে হয় কোমর পানি।
আকস্মিক জলাবদ্ধতাই পরিচিতি পায় ‘রাউজানের দুঃখ’ হিসেবে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) প্রকল্পে ঘুচতে চলেছে সেই দুঃখ। জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাষিদের লোকসান লাঘব, অনাবাদি জমি সেচের আওতায় আনাসহ বহুমুখী লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বেরুলিয়া, হাজিপাড়া, কাগতিয়া, বিনাজুরি, লেলাংগারাসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষির মুখে হাসি ফুটছে। নতুন করে চাষে নামার স্বপ্ন দেখছেন অনেকে।
হাজিপাড়ার চাষি রবিউল আলম জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। তারওপর রয়েছে পাহাড়ি ঢল আতঙ্ক। এ কারণে অনেকে ফসল ও মাছ চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অবশ্য চাষের খরচ, মাছের খাদ্যের দামও বাড়ছে। ফলে অনেক অনাবাদি জমি পড়ে থাকছে বিলের পর বিল। নতুন করে খাল পুনঃখনন করায় চাষিরা আগ্রহী হচ্ছে। যত ভালো পরিকল্পনা ও টেকসই কাজ হবে ততই মানুষের স্বস্তি মিলবে।
বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ‘চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হচ্ছে ৬০২ কোটি টাকায়। এর আওতায় চট্টগ্রামের ১৬টি এবং কক্সবাজারের ৯টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে রাউজানে মহেশখালী ও কাশখালী খাল পুনর্খনন, দেড় কিউসেক সোলার চালিত বারিড পাইপ লাইন নির্মাণ এবং ৫ কিউসেক বিদ্যুৎ চালিক বারিড পাইপ নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে বোরো মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৬০০ একর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে এবং বর্ষায় এসব জমির ফসল রক্ষা পাবে। বর্ষাকালে রাউজান পৌরসভা, রাউজান ইউনিয়ন ও বিনাজুরি ইউনিয়নের বন্যজনিত সমস্যা নিরসন হবে।
তিনি জানান, বারিড পাইপ লাইন হচ্ছে কৃষকের জন্য বিভিন্নভাবে উপকারী। প্রথমত এটি মাটির সাড়ে তিন থেকে চার ফুট গভীর দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কৃষি জমির ওপর সেচ নালার প্রয়োজন হয় না, জমির অপচয় রোধ হয়। সোলারে পানি সরবরাহ করায় সেচ খরচ নেই বললেই চলে। প্রকল্পের আওতায় বিনাজুরিতে দেড় কিউসেকের ১২০০ মিটার বারিড পাইপ এবং পৌরসভায় ৫ কিউসেকের ২২০০ মিটার বারিড পাইপ বসানো হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয়ভাবে অন্তত ৮০০ কানি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুম কবির জানান, প্রতিবছর পাহাড়ি ঢল ও বানের পানিতে রাউজানে ব্যাপক ক্ষতি হয় কৃষি, মৎস্য, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে। জলাবদ্ধতা থেকে সুরক্ষা এবং ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে বিএডিসি একটি যুগান্তকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাউজানে। এর ফলে এলাকাবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবেন এবং চাষিরা উৎপাদিত ফসল সুরক্ষা এবং অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে লাভবান হবেন।
তিনি বলেন, দুইটি খাল পুনঃখননের কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে খালের পানি ধারণক্ষমতা বাড়বে, জোয়ারের পানি খালের বিভিন্ন প্রান্তে ঢুকবে, শুষ্ক মৌসুমে চাষিরা সেচ দিতে পারবে আবার বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার হাত থেকে ফসল রক্ষা পাবে। আশাকরি প্রকল্পটির কাজ সুসম্পন্ন হলে চাষির মুখে হাসি ফুটবে।
প্রকল্পের আওতায় সবচেয়ে ভালো এবং বেশি কাজ যাতে রাউজানে হয় সেই প্রচেষ্টা করবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। বাংলানিউজ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com