ডেস্ক রিপোট:- ভবন এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মতো স্পর্শকাতর দফতরগুলো এখনো ‘অ্যাডমিন ক্যাডার’ হিসেবে কর্মরত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের করায়ত্ত্বে। এসব আমলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আপাত আনুগত্য দেখালেও তাদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার প্রতি। তারা এতোটাই আওয়ামী-প্রাণ যে, অনেকে এখনো ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া আ’লীগ নেতাদের সঙ্গে রাখছেন নিয়মিত যোগাযোগ। দফতরগুলোর গোপন তথ্য পাচার করছেন তারা। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন গুরুতর অভিযোগ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা, তার মুখ্য সচিব, সচিবসহ হাসিনাঘনিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। কিন্তু গিরগিটির মতো প্রতি সেকেন্ডে রঙ পাল্টিয়ে স্ব স্ব দফতরে থেকে যান বর্ণচোরা কতিপয় আমলা। পট পরিবর্তনের পরপর এদের অনেকে কৌশলে বাগিয়ে নিয়েছেন পদোন্নতিও। পূর্ণ মর্যাদা, সম্মান ও পদ আকড়ে থেকে হাসিনার এই সহযোগীরা ক’দিন পরপর জন্ম দিয়ে চলেছেন নানা ইস্যু। একের পর এক ইস্যু সৃষ্টি করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছেন, বিব্রত করছেন। কখনো বা বিভিন্ন পদক্ষেপকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চেষ্টা চালাচ্ছেন সরকার ও সাধারণ মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হাসিনার গণহত্যা, মাফিয়াতন্ত্র, রাতের ভোট ও ডামি নির্বাচনের সহযোগী আমলাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে তারা এমন ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়’ (বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়) এ পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী। এ কর্মকর্তা পদোন্নতি বাগিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ‘মহাপরিচালক’ পদ বাগিয়ে নেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়ার পর সারাদেশে ডিসি নিয়োগ ও মাঠ প্রশাসনে পদোন্নতি নিয়ে বিতর্ক ওঠে। এই বিতর্কের মূলে ছিলেন প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রশাসনের সর্বত্র কলকাঠি নাড়েন আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী। শেখ হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রের সহযোগী অনেক আওয়ামী কর্মকর্তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশাসনে পুনর্বাসনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। চরম বিতর্কের মুখে গত ২২ অক্টোবর তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বদলি করা হয়।
‘উপ-সচিব’ হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে বদলি করা হয়, বিসিএস বেতার ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তা, শেখ হাসিনার অতিশয় বিশ্বস্ত ডেপুটি প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েসকে। শেখ হাসিনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী ও ইমরুল কায়েস উভয়েই ছাত্র জীবনে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা।
অন্যদিকে ২০২৩ সালে দায়িত্বভার পাওয়ার পর শেখ হাসিনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা দিদারুল আলমকে একান্ত সচিব পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের ২০ ব্যাচের এই কর্মকর্তা ছিলেন হাসিনা সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অবঃ) তাজুল ইসলামের একান্ত সচিব। ওই সময় বহুল আলোচিত বিদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তৈরিকৃত রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ক্যাপ্টেন তাজ মন্ত্রিত্ব হারান। কিন্তু দিদারুল আলম থেকে যান অধরা। এ হেন কর্মকর্তা বঙ্গভবনে বসে এখনো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতির পক্ষে-বিপক্ষে তদবির করছেনÑ মর্মে উল্লেখ করা হয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।
দিদারুল আলমের সঙ্গে ছিলো শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার ঘনিষ্টতা। তার মাধ্যমে লবিং করেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিয়োগ বাগিয়ে নেন দিদার। হাসিনার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজের একান্ত সচিবের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিবের পদে বসেন দিদার। পরে নিয়োগ নেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের পিএস পদ। সরকার পরিবর্তন হলেও মাফিয়া সরকারের এসব কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে রয়েছেন দাপটের সাথে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, হাসিনার আস্থাভাজন কর্মকর্তা আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী প্রেসিডেন্টের এপিএস দিদারুল আলম হাসিনাপন্থি আমলাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। একইসঙ্গে কৌশলে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন ও পদায়নে কাজ করছেন।
শেখ হাসিনার আমলে (২০০৯-২০১৩) একাধিকবার প্রেসিডেন্টের সহকারী প্রেস সচিব পদে ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা, বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা মুহাম্মদ শিপলু জামান। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আব্দুল হামিদের মেয়াদ শেষ দিকে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি পদে পদোন্নতি পান ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এই কর্মী। সরকার পরিবর্তন হলেও বঙ্গভবনে এখনো বহাল রয়েছেন শিপলু জামান। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি শিপলু জামান এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য আওয়ামীপন্থি সংবাদ মাধ্যমে তথ্য পাচার করছেন।
প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর বিএনপি আমলে প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনিরুল ইসলামকে ওএসডি করেন। তার স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় বিতর্কিত ও ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’য় বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আজিজুল হক মামুনকে।
বহুল আলোচিত বারডেম হাসপাতালে স্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তা সানজিদার কথিত প্রেমিক আরেক পুলিশ কর্মকর্তা হারুন উর রশিদকে ছাত্রলীগের কর্মীদের দিয়ে মারধরের ঘটনায় তোলপাড় হয়। দুটি অভিযোগই তদন্ত করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। আজিজুলের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান চলছে।
উপসচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের (বর্তমানে কারাগারে) পিএস মুহাম্মদ নেসারউদ্দিন জুয়েলকে। সরকার পরিবর্তন হলেও এখনো তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন বঙ্গভবনের মতো স্পর্শকাতর দফতরে। এখানে বসে তিনি ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন করছেন। আত্মগোপনে থাকা আ’লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন গোপনে। তথ্য আদান-প্রদান করছেন।
বিসিএস ২৪ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান অনেক দিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়) পরিচালক (প্রশাসন) পদে কর্মরত। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এসব কর্মকর্তা হাসিনার নীল নকশা বাস্তবায়নে কাজ করছেন-মর্মে উল্লেখ করা হয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।ইনকিলাব
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com