বান্দরবান:- বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে এলাকা ভিত্তিক দালাল সিন্ডিকেট’র মাধ্যমে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।সবচেয়ে বেশী চেষ্টায় ঘুমধুম-তুমব্রু, পশ্চিমকুল, জলপাইতলী, হেডম্যান পাড়া, বাইশ ফাঁড়ী সীমান্ত দিয়ে। মিয়ানমারের ওপাড়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলমান সংঘর্ষের মধ্যেই তৎপর হয়ে উঠেছে দুই দেশের রোহিঙ্গা পারাপারের দালাল চক্রগুলো।
জানা গেছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান আর্মি মিয়ানমারের নাগরিকদের জোরপূর্বক জিম্মি করে টাকার বিনিময়ে সীমান্তের পাশে নিয়ে আসে।
অভিযোগ উঠেছে, অর্থের বিনিময়ে এই চক্রের মাধ্যমে নতুন করে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলো অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে তৎপর রয়েছে। সম্প্রতি কয়েক মাসের ভিতর কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে সে সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য কোনও কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি।তবে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে গত কয়েক মাসের ভিতর অন্তত ১লাখের বেশী রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এদেশে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে।
গত সপ্তাহে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা এপারে গোপনে আশ্রয় নিয়েছেন ল।তারা জানান, প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে এসেছেন। বর্ডার পার হতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দালালকে টাকা দিতে হয়েছে।আর সীমান্তবর্তী স্থল এলাকা পার করে নাইক্ষ্যংছড়ি,তুমব্রু,ঘুমধুম ও বাইশ ফাঁড়ীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে তারা। ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা পারাপারে দালাল চক্র গড়ে ওঠেছে।এতে ৪০ জনের মতো দালাল রয়েছে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের গোপনে অনুপ্রবেশ করাতে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধের সুযোগে কয়েকটি দালাল চক্র রোহিঙ্গা পারাপারের বাণিজ্য গড়ে তোলছে।সেসব দালালদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী উঠছে ঘুমধুমে।যাতে অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য টহল অব্যাহত রাখা ও আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করার পক্ষে জোরালো হচ্ছে। রাতে দুই অংশের দালালেরা টাকা নিয়ে রোহিঙ্গা ঢুকাচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে এপাড়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করাচ্ছে মিয়ানমানে বিভিন্ন মালামাল পাচার করা সিন্ডিকেটের সদস্যরা।তারা একেকজন রোহিঙ্গাদের কৌশলে এপাড়ে এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবং বিভিন্ন ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন মোটাংকের টাকার বিনিময়ে।ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আবুল কাসেমের মতে,রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে পুলিশ বাহিনী সর্বাবস্থায় সতর্ক রয়েছেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালরা ১০/ ২০ হাজার থেকে শুরু ১ লাখ টাকার বিনিময়ে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ অবৈধ পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।এসব কাজে সীমান্তের ঘুমধুম-তুমব্রু’র জকির, ইউনুস, বাইট্রা শাহ আলম, মনিয়া, শাহীন, জামাই কামাল, রুহুল আমিন, আবুল হাসেম, সাইফুল, সরওয়ার, ইব্রাহিম জলপাইতলী পাহাড় পাড়ার আলমগীর, জাহাঙ্গীর, ছাড়াও বাইশপাড়ীর, মাছন, জামাল,আলি আকবর, উছিমং, নবী হোসেন প্রকাশ প্রতিবন্ধিসহ ঘুমধুম সীমান্তের কয়েকজন নারীও রয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, রোহিঙ্গাদের টাকা বহন ও মালামাল পাচার কাজের সহযোগী হিসেবে।
এদের মধ্যে অনেকের নামে ইয়াবা ও মাদক পাচারের মামলাও রয়েছে। তারা আবার অনেকেই সীমান্ত কেন্দ্রীক চোরাকারবারিও। এসব দালাল চক্রের সদস্যরা ঘুমধুমের বাইশফাঁড়ী,তুমব্রু হেডম্যান পাড়া, পশ্চিমকুল, তেতুঁল গাছতলা, নেজার পেঁরা ও ঘুমধুমের মধ্যম পাড়া পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে।
দালালের বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন,সীমান্তের এই পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতাকারীদের (দালালদের) আবির্ভাব যেন না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে যাতে কোনও অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেই বিষয়েও কাজ করছে প্রশাসন। পাশাপাশি যদি এ ধরনের কোন ঘটনা যাতে না ঘটে, আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করবো।
ঘুমধুম ইউনিয়ন মানব পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আবদূর রহিম ভুট্রো বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশে দালাল চক্র জড়িত রয়েছে।বিশেষ করে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে রাতের আধারে। আমি জানতে পেরেছি, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মিয়ানমারের ওপারে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে।ঘুমধুমের সচেতন ব্যক্তি এম.ছৈয়দ আলম বলেন,ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার সীমান্ত কেন্দ্রিক উভয়মুখী পাচার চলছে।শুনেছি বিচ্ছিন্ন ভাবে রোহিঙ্গাদেরও অনুপ্রবেশ করাচ্ছে চোরাকারবারিরা।নতুন করে একটা রোহিঙ্গাও যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।এমনিতেই ১২ লাখের বেশী রোহিঙ্গার আশ্রিত বসবাস রয়েছে আগে থেকেই।মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা উড়ে দেওয়া যায় না।একজন রোহিঙ্গাও যাতে নতুন করে ঢুকতে না পারে তার জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।এদিকে নতুন করে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উক্ত বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি এবং এ কাজে জড়িতদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চিহ্নিত করে দেশের প্রচলিত আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
এদিকে দেশদ্রোহীতায় জড়িতদের উপর্যুপরি সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগ করতে প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট উপজেলার সচেতন মহল দাবী জানিয়েছেন।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com