ডেস্ক রিপোট:- চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াসহ তিন পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট দিয়ে সেতু নির্মাণের প্রত্যাশায় দিন কাটাচ্ছেন। স্বাধীনতার পর থেকে এই অপেক্ষায় দিন কাটছে এই পথে চলাচলকারী লাখ লাখ মানুষের। মাঝেমধ্যেই খবর আসে, সেতু নির্মাণের প্রকল্প একনেকে পাসের। মানুষ আশায় বুক বাঁধে, কিন্তু পরক্ষণেই সেই খবরও গুজব বলে প্রমাণিত হয়। সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যরাও একই আশ্বাস দিয়েছেন একাধিকবার, কিন্তু সেতু আর হয় না।
সর্বশেষ সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন ও নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। নকশা প্রণয়নসহ সম্ভাব্যতার প্রতিবেদন সওজ’র সেতু বিভাগে দেওয়ার পর তা পরিকল্পনা কমিশন হয়ে তারপর একনেকে উঠবে। এর যেকোন ধাপে এই প্রকল্প বাতিল করা হলে সেক্ষেত্রে সেতুর স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। তাই এখনো অনিশ্চিত চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট সেতুর কাজ। তবে আশার কথা হচ্ছে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নের কাজের মাধ্যমে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।
সম্প্রতি এশিয়ান ইনফু স্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্প পরামর্শদাতা এসিই কনসালটেন্ট লিঃ এর আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু নির্মাণে বিস্তারিত সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন ও নকশা প্রণয়ন প্রকল্পের আর্থ সামাজিক ও পরিবেশ সম্পর্কিত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সেতু নির্মাণ করলে যাদের জমি এবং ঘরসহ ক্ষতির মুখে পড়বে তারাসহ স্থানীয়রা মত প্রকাশ করেন এবং সকলেই ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে জোর সুপারিশ করেন। সভায় বক্তব্য দেন প্রকল্পের সোশ্যাল এন্ড রিসেটেইলমেন্ট বিশেষজ্ঞ মো. ওয়ালিদ আক্তার এবং রাহাত খান মজলিশ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ওয়ালিদ আক্তার জানান, ফেরিঘাট সেতু নির্মাণের জন্য নকশা প্রণয়ন ও সম্ভাব্য ক্ষতিসহ অন্যান্য আর্থ–সামাজিক বিষয় যাচাই করার কাজ করছেন তারা। ৪৭০–৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু হতে পারে। এজন্য তারা নকশা প্রণয়নসহ প্রাথমিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তারা সওজ’র সেতু বিভাগে দেবেন এবং সেখান থেকে পরিকল্পনা কমিশন হয়ে একনেকে উঠে চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। এরপর টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাহায্যে মূল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান। তবে বিষয়টি সময় সাপেক্ষ বলেও জানান তিনি। স্থানীয়রা জানান, রাঙামাটি হয়ে বান্দরবানে যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী নদীর এই ফেরি। কাপ্তাই অংশেও চন্দ্রঘোনার যানবাহন পারাপারের মাধ্যম সওজের ফেরি। কিন্তু নদীতে বালুচর উঠা, পাহাড়ি ঢলসহ নানা কারণে প্রায়ই আটকে যায় ফেরিটা। এ সময় চরম বেকায়দায় আটকে থাকতে দেখা যায় শত শত যানবাহনকে। এর বাইরেও এই সেতু স্বাভাবিক নিয়মে পার হতে গেলে প্রায় এক ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। তাই সেতুটি হওয়া খুবই প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়সহ তিন পার্বত্য এলাকার চালক ও যাত্রীসহ সকলে।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া–কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদী তীরের দু’পাড়ের লোকজনের দীর্ঘ সময়ের দাবি এই সেতু। ১৯৮৯ সালে কর্ণফুলী নদী পারাপারের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। বর্তমানে রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের অধীনে ফেরিটি পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী অলি আহমদ লিচু বাগান ফেরি ঘাটে সেতু নির্মাণ করার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে লিচু বাগান ফেরিঘাটে সেতু নির্মিত না হয়ে গোডাউন দিয়ে কর্ণফুলী নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে লিচু বাগান ফেরিঘাটে সেতু নির্মাণ করার জন্য আর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বাস চালক আবদুল আলী বলেন, লিচু বাগান ফেরিঘাটে সেতু না থাকায় লিচু বাগান এবং রাইখালীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এখানে সেতু নির্মিত হলে মানুষের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। পাশাপাশি কৃষি উন্নয়ন বাড়বে এবং মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে সওজ রাঙ্গামাটি বিভাগের উপ–সহকারী প্রকৌশলী কীর্তি নিশান চাকশা জানান, সেতু নির্মাণের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সম্ভাব্য যাচাই, ক্ষতি নিরূপণ ও নকশা প্রণয়নের জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন আমাদের সেতু বিভাগের মাধ্যমে প্রকল্প প্রণয়নের জন্য একনেকে যাবে, এসব দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়। তবে ব্রিজ নির্মাণের প্রাথমিক ধাপ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সয়েল টেস্ট হয়ে গেছে। প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলেও এই স্থান দিয়ে একটি সেতু নির্মাণ হবে।আজাদী
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com