রাঙ্গামাটি:- সাফজয়ী পাহাড়ের তিন কন্যা ঋতুপর্ণা চাকমা, রূপনা চাকমা ও মনিকা চাকমাকে রাঙ্গামাটিতে উষ্ণ সংবর্ধনা প্রদান করেছে জেলা প্রশাসনসহ সর্বস্তরের জনগণ। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে সাড়ে এগারোটায় রাঙামাটি চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
এদিন সকাল দশটায় ঋতুপর্ণা-রূপনাদের আঁতুড়ঘর ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতী এই তিন ফুটবলারকে নিয়ে মোটর শোভাযাত্রা রাঙ্গামাটি শহরের উদ্দেশে যাত্রা করে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচুনীচু রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের পথ ধরে ব্যান্ড পার্টির তালেতালে শোভাযাত্রাটি শহরের দিকে এগোতে থাকে।
এসময় খোলা ট্রাকে তিন ফুটবলার হাত নেড়ে সকলকে শুভেচ্ছা জানান। শহরের প্রবেশমুখ ভেদভেদীতে প্রবেশ করে রাঙাপানি-আসামবস্তি-তবলছড়ি-বনরূপা সড়ক হয়ে শোভাযাত্রাটি চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়ামে এসে সংবর্ধনাস্থলে যোগ দেয়। এসময় স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা ফুলেল শুভেচ্ছায় ও তুমুল করতালিতে কৃতী এই তিন ফুটবলারকে বরণ করে। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে তিন কৃতী ফুটবলারের ভিডিও ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়। ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে জেলা প্রশাসন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন, জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন ক্লাব, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা তিন ফুটবলারকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা ও রূপনা চাকমা ছাড়াও ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান, মঘাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমা, বর্মাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধারশমনি চাকমা, প্রশিক্ষক শান্তিমনি চাকমা, ফিফা রেফারি জয়া চাকমাকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনায় খেলোয়াড়দের জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ ও সেনাবাহিনী থেকে প্রত্যেকে এক লাখ টাকা এবং পৌরসভা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রাঙ্গামাটি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শওকত ওসমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সাবেক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, ফিফা রেফারি জয়া চাকমা।
ঋতুপর্ণা চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, সাফ জয়ের পর দেশে ফেরার পরে আমাদের রাঙ্গামাটি থেকে সবাই ফোন করে জানতে চায় কখন বাড়ি আসবো। তারা আমাদের অপেক্ষায়। নিজ জেলায় এমন সংবর্ধনা সত্যিই ভাগ্যের বিষয়। আমরা তিনজনই খুব খুশি।
এভাবে আপনাদের ভালোবাসা পেলে আরও ভালো খেলতে পারবো দেশের জন্য। তিনি আরও বলেন, আমরা যে মাঠে খেলে আজ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছি মাঠটির অবস্থা খুবই বাজে। তাই চাইবো নতুন নারী আরও খেলোয়াড় তৈরিতে এই মাঠটির সংস্কার প্রয়োজন।
মনিকা চাকমা বলেন, এতো আয়োজন দেখে খুব ভালো লাগছে। আমরা চেষ্টা করবো আরও ভালো খেলার। তবে মনে অনেক কষ্ট। আমাদের বিদ্যালয়টি এখনো জাতীয়করণ করা হয়নি। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হলে নতুন নতুন নারী ফুটবলার তৈরি হতো।
রাঙ্গামাটির রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শওকত ওসমান বলেন, পরিশ্রম করলে সর্বোচ্চ শিখরে যাওয়া যায়, সেটা এই তিন কৃতী ফুটবলারকে দেখে আমাদের যুব সমাজ শিখতে পারে। তাদের এমন সাফল্যে আমরা যাতে শিক্ষা লাভ করতে পারি। এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ-পরিস্থিতি বজায় থাকলে এই ধরনের আরো কৃতী খেলোয়াড় উঠে আসবে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, এই তিন কৃতী ফুটবলার আমাদের পাহাড়ের গর্ব। মহিলা সাফ টুর্নামেন্টে তাদের ফুটবলশৈলিতে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছি। এজন্য আজকে তাদেরকে
রাঙ্গামাটিতে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। তাদের পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন জেলা প্রশাসক।
এসময় তিনি আরো বলেন, রাঙ্গামাটিতে একটি বিকেএসপির একাডেমি করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজও চলছে। এটি শেষ হলে শুধু নারী ফুটবলার না পুরুষ ফুটবলারও বের হবে এই অঞ্চল থেকে।
প্রসঙ্গত, এবারের সাফ টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন রাঙ্গামাটির কাউখালীর মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা, টুর্নামেন্টে সেরা গোলকিপার নির্বাচিত হন রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার মেয়ে রূপনা চাকমা এবং এই টিমের সদস্য মনিকা চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায়। তিনজনই রাঙামাটির ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও খেলাধুলা করে এবং পরবর্তীতে জাতীয় টিমের সদস্য হন।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com