ডেস্ক রির্পোট:- সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৩৪৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের দেওয়া তালিকা সমন্বয় করে এ সংখ্যা পাওয়া গেছে। আরো দু-একটি মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত তালিকা আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোটায় সরকারি চাকরিজীবীর তালিকা আরো লম্বা হতে পারে।
এসব তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কারা সরকারি চাকরি বাগিয়েছেন তা জনগণকে জানাতে শিগগিরই এই তালিকা অ্যাপসের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
তাঁদের মধ্যে কেউ ‘ভুয়া সনদে’ চাকরি নিয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট অ্যাপসে সে বিষয়ে অভিযোগ করার সুযোগ রাখা হবে। জাল সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের খুঁজে বের করতেই এ তালিকা করা হচ্ছে বলে সূত্র বলছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের তালিকা পেয়েছি। ৪০ হাজারের বেশি নামের তালিকা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করছেন। যাচাই শেষে এগুলো শিগগিরই মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হতে পারে, যাতে যে কেউ এসব সনদের বিষয়ে অভিযোগ করতে পারেন। এ জন্য অভিযোগ করার সুযোগ রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীতে বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ জাল করে চাকরি নেওয়ার দায়ে মোরশেদ আলম নামের এক পুলিশ কনস্টেবলকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা; অনাদায়ে আরো আট মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নোয়াখালীর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এ এন এম মোরশেদ খান এই রায় দেন। দণ্ড পাওয়া আসামি পলাতক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ফেনী জেলায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষায় স্থানীয়ভাবে ৭৩ প্রার্থীকে ফেনী পুলিশ লাইনস মাঠে প্রাথমিক বাছাই করা হয়।
বাছাই করা প্রার্থীদের মধ্যে চূড়ান্তভাবে ৪৫ জন পুরুষের মধ্যে ৯ জনকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নির্বাচিত করা হয়। এর মধ্যে মোরশেদ আলম মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ছিলেন। চূড়ান্ত হওয়ার পর তাঁকে ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পাঠানো হয় এবং প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পদায়ন করা হয়। এরই মধ্যে তাঁর দাখিল করা মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাইয়ের জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হলে সনদটি জাল হিসেবে ধরা পড়ে। এতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
শুধু মোরশেদ আলমই নন, জাল সনদের মাধ্যমে সরকারি চাকরি বাগিয়েছেন হাজারো কর্মকর্তা-কর্মচারী। অভিযোগ আছে, যুদ্ধ না করেও অনেকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন। এমনকি জামুকার মাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ গ্রহণের অভিযোগ তোলা হয়েছিল শেখ হাসিনা সরকারের আমলে খোদ সংসদীয় কমিটিতেও।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর তিন দিন পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। এরপর গত ১৫ আগস্ট সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি তালিকা তৈরি হবে। সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজনের চাকরি হয়েছে, এখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা এবং মুক্তিযুদ্ধ না করে যাঁরা মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর পরই ১৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ক্যাডার, নন-ক্যাডার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য চেয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। এতে সরকারি চাকরিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাঠাতে বলা হয়।
২৯ আগস্ট ফের তাগিদ দিয়ে দুটি চিঠি পাঠানো হয় সব মন্ত্রণালয়ে। একটিতে প্রথম শ্রেণি (ক্যাডার ও নন-ক্যাডার) ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদের তথ্য চাওয়া হয়। অপরটিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে তার মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, সংস্থা, করপোরেশন ও দপ্তরে নিয়োগপ্রাপ্তদের তথ্য জরুরি ভিত্তিতে পাঠাতে বলা হয়। ১৫ আগস্টের চিঠির স্মারক উল্লেখ করে ওই চিঠিতে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তথ্যাদি পাঠানো নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়। এরপর মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ভাগ করে সরাসরি ফোনে তাগিদ দেওয়া শুরু করেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের তথ্য পাওয়া গেলেও এখনো কোটায় চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যায়নি কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের। তাদের ফের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য, ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, ১০ শতাংশ পিছিয়ে থাকা জেলার মানুষের জন্য, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য এবং ১ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ছিল। ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর কোটাবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভা সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (যেসব পদ আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি বলে পরিচিত ছিল) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। চলতি বছর সংস্কারের দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু হয় ৫ জুন। সেই আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। কালের কণ্ঠ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com