ডেস্ক রির্পোট:- জনগণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্য-সমঝোতায় ফিরে আসার জন্য জেএসএস-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক মাইকেল চাকমা।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলসমূহকে সংঘাতের পথ পরিহার করে ঐক্য-সমঝোতায় আসার আহ্বান জানাচ্ছে। হাজার হাজার ছাত্র-তরুণ বিক্ষোভ করেছে। তিনি সন্তু লারমা ও তার দল জেএসএস-এর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখনো সময় আছে জনগণের প্রণের দাবি ঐক্য-সমঝোতায় ফিরে আসুন, জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। তা না হলে আপানদেরকে জনগণ ইতিহাসের আস্তাকঁড়ে নিক্ষেপ করবে, ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর ২০২৪) বিকালে ঢাকায় শাহবাগ এলাকায় একটি হলরুমে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর উদ্যোগে ইউপিডিএফ সংগঠক ও সাবেক পিসিপি নেতা শহীদ মিটন চাকমার স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
শোকসভা শুরুতে শহীদ মিটন চাকমার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ইউপিডিএফ'র সংগঠক মাইকেল চাকমা, পিসিপির সভাপতি অংকন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা। এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছাত্র-যুব-নারী ও কিশোর-কিশোরীরা শহীদ মিটন চাকমার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ মিটন চাকমাসহ অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের সকল বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
“শহীদ মিটনসহ শত শহীদের আত্মবলিদানের বলীয়ান পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই জয়যুক্ত হবে” এই স্লোগানে ক্ষমতার লালসা খুনের নেশায় মদমত্ত সন্তু লারমার ভাড়াটে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় পানছড়িতে ইউপিডিএফ'র সংগঠক ও সাবেক পিসিপি নেতা মিটন চাকমার স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় পিসিপির সভাপতি অঙ্কন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা।
শোকসভায় শহীদ মিটন চাকমার রাজনৈতিক জীবনী পাঠ করেন পিসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা।
সভায় মাইকেল চাকমা বলেন, ইউপিডিএফ গঠনের পর থেকে জেএসএসকে ঐক্য, সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু সন্তু লারমা বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করেছে কিংবা ইউপিডিএফ'র সাখে সমঝোতা হলেও তা জেএসএস লঙ্ঘন করেছে। বর্তমান সময়ে পাহাড়ে শিক্ষার্থীরা সংঘাত বন্ধ করে ঐক্যর কথা বলছে, তারা আঞ্চলিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার আহ্বান জানাচ্ছে। আগেও পাহাড়ে সামাজিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষেরা সংঘাত বন্ধের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।
তিনি সন্তু লারমা ও তার দল জেএসএস-এর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখনো সময় আছে জনগণের প্রণের দাবি ঐক্য-সমঝোতায় ফিরে আসুন, জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। তা না হলে আপানদেরকে জনগণ ইতিহাসের আস্তাকঁড়ে নিক্ষেপ করবে, ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবে
তিনি বলেন, এই ঐক্যের দাবি বা আহ্বান কেবল শিক্ষার্থীদের নয়, এটি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশে বসবাসরত সকল পাহাড়ি জনগণের দাবি। জনগণের এই দাবিকে জেএসএস সন্তু লারমা কোন তোয়াক্কা করেনি, বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে। যারা ঐক্যর দাবি তুলছে, বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে তাদেরকে ইউপিডিএফ তকমা লাগিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তারা শাসকগোষ্ঠীকে লাভবান করছে।
জেএসএস সন্তু লারমা আঞ্চলিক পরিষদের গদি রক্ষা করতে শাসকগোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে মন্তব্য করে ইউপিডিএফের এই নেতা বলেন, সন্তু লারমা ও তার দল জেএসএস আঞ্চলিক পরিষদের গদি রক্ষার জন্য, ক্ষমতা রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই কারণে তারা একটি বিশেষ মহলে নির্দেশনায় পাহাড়ে সংঘাত, হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। ইউপিডিএফ'র উপর একের পর এক সশস্ত্র আক্রমণ চালাচ্ছে। সর্বশেষ পানছড়িতে তারা সাবেক ছাত্রনেতা মিটন চাকমাকে হত্যা করেছে।
মাইকেল চাকমা আরো বলেন, হত্যা করে ইউপিডিএফের আন্দোলন থামিয়ে রাখা যাবে না। জনগণের ভালোবাসায়, জনগণের সমর্থনে, জনগণের সহযোগিতায় এবং ইউপিডিএফ তার নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ, চেতনার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। ইউপিডিএফকে ধ্বংস করতে গঠনের পর থেকে শত শত নেতা-কর্মীকে হত্যা ও অবর্ণনীয় দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইউপিডিএফের ভিত্তি এখনো পর্যন্ত শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। সুতরাং ইউপিডিএফ'র উপর যতই আক্রমণ আসুক না কেন জনগণের ভালোবাসায়, জনগণের সহযোগীতায় ইউপিডিএফ দুঃখী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, যারা বন্ধকী রাজনীতি করে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ভূলন্ঠিত করছে, সংঘাত ও হত্যা রাজনীতি করছে তাদেরকে জনগণ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তারা জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এটাই আমার বিশ্বাস।
শ্রমিক ফ্রন্টের নেতা প্রমোদ জ্যোতি চাকমা বলেন, ১০ নভেম্বর মানবেন্দ্র লারমা মৃত্যুবার্ষিকী দিনেই সন্তু লারমা তার ভাড়াটে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে পানছড়িতে মিটন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইতিহাসে আরো একবার লারমা মৃত্যুবার্ষিকীকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এর আগে জেএসএস অনিমেষ, রূপকদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যারা নিয়োজিত তাদেরকে বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, '৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পূর্ববাংলার জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে শাসকের পক্ষে রাজাকার-আলবদররা ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামেও বর্তমানে নব্য পাক বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য পাহাড়িদের মধ্যেকার রাজাকার, আলবদর সৃষ্টি হয়েছে। তারা জনগণের মতকে উপেক্ষা করে, জনগণের দাবিকে প্রত্যাখান করে দলীয় স্বার্থের জন্য সরকার, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। খুন-খারাবি করে, সংঘাতকে জিইয়ে রাখছে।
যুব নেতা জিকো ত্রিপুরা বলেন, মিটন চাকমা হত্যার ঘটনা অত্যন্ত বেদনা দায়ক। এই ঘটনা আমাকে ব্যথিত করেছে। তিনি পার্টিতে যুক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা লড়াইয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। জেএসএস সন্তু লারমা ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে অঙ্কন চাকমা বলেন, মিটন চাকমা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে বিশ্বদ্যালয়ে গন্ডি পেরিয়ে ব্যক্তি স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য ইউপিডিএফ'র সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। কিছু কিছু মানুষের মৃত্যু পৃথিবীকে গৌরবান্বিত করেছে। এমন মানুষের মৃত্যুর কারণে জাতি মুক্তির পথ দেখিয়েছে। মিটন চাকমাসহ অধিকার প্রতষ্ঠার লড়াইয়ের আত্মবলিদানকারী বীর শহীদের মৃত্যুও পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের মুক্তির দিশা দেখাবে।
তিনি শহীদ মিটন, মিঠুন, এল্টন-তপন-পলাশসহ সকল শহীদদের যে আত্মত্যাগ তা বাস্তবে পরিণত করতে কাজের মাধ্যমে তাদের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস-এর সশস্ত্র সদস্যদের হামলায় সাবেক ছাত্র নেতা ও ইউপিডএফ সংগঠক মিটন চাকমা নিহত হন।প্রেস বিজ্ঞপ্তি
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com