ডেস্ক রির্পোট:- মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিরতদের তথ্য যাচাই-বাছাই কার্যক্রম থমকে আছে। দফায় দফায় চিঠি ও তাগিদ দেওয়ার পর তিন মাসে ৫৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান তথা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য পাওয়া গেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি আট প্রতিষ্ঠান। দেশের ৬২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিরতদের তথ্য গত ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছিল।
৫৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কর্মরত।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী বলেন, অধিকাংশ মন্ত্রণালয়-প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্যাদি পাওয়া গেছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া যায়নি। আমরা অপেক্ষা করছি। সংশ্লিষ্টদের পাঠানো তথ্যাদি মন্ত্রণালয়ের (মুক্তিযুদ্ধ) গেজেটসহ অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে যাচাই করা হবে। তিনি জানান, যারা প্রতিবেদন দেয়নি, তাদের নিয়মিত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক ১৪ আগস্ট দায়িত্ব নেন। ওই দিনই তিনি মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সভায় স্বাধীনতার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটার আওতায় গ্রেড অনুযায়ী কতজন সরকারি চাকরি পেয়েছেন, সে তালিকা করার নির্দেশ দেন। সভায় উপদেষ্টা বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে যে আন্দোলন হয়েছে, তাতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তিযোদ্ধারা ইমেজ সংকটে পড়েছেন।
উপদেষ্টার নির্দেশনার পর ১৫ আগস্ট প্রথম দফায় ‘অনতিবিলম্বে’ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিরতদের তথ্য চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পৃথক চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে সরকারি চাকরিতে প্রথম (ক্যাডার ও নন-ক্যাডার), দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের জীবনবৃত্তান্তসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য চাওয়া হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের পিতা/মাতা/পিতামহ/ মাতামহের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট নম্বর এবং চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার তথ্যও উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ২৯ আগস্ট ফের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তদের তথ্য পেতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৩৭টি প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। এর পর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফোনে প্রতি সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তাগিদ দেওয়া হতে থাকে। সব ক’টি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য না পাওয়ায় এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম গতি হারিয়েছে।
জানা গেছে, ১০টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। এগুলো হলো– প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি
মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা, আইন ও বিচার বিভাগ, সংসদ সচিবালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগ। তবে মন্ত্রণালয়ের পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। শিগগির এগুলো পর্যালোচনা করে দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
জমা হওয়া ৫৪টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সুরক্ষা সেবা বিভাগে ২ হাজার ৪৩ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগে ২ হাজার ৩৪, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৫৮২, স্থানীয় সরকার বিভাগে ৫৬৪, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ৪৬২, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৪৮৯, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ২১৮; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং আইসিটি বিভাগে ১০৬, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১০৬, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ৫৪২, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ৯৪৩, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে ৩০৩, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৩৩০, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ১৭১, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ১৭৪, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১১৬, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগে ১৯৯ জন এবং পিএসসি সচিবালয়ে ৩০ জন কর্মরত আছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা করা হবে। এর পর তাদের তথ্যাদির আলোকে সংশ্লিষ্টদের পিতা/মাতা/পিতামহ/মাতামহের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট নম্বর মন্ত্রণালয়ে থাকা নথি ও অন্যান্য প্রমাণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হলে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া তথ্য বা এ-সংক্রান্ত নথি জাল-জালিয়াতি করে যারা কোটায় চাকরি নিয়েছেন, তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।সমকাল
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com