রাঙ্গামাটি:- রাঙ্গামাটি জজ কোর্টে পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও সহকারী পিপিকে অপসারণ সহ নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে বিতর্কিত সদস্যদের অপসাণের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাঙ্গামাটির সংবাদ সম্মেলন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনেতোরা জানান, গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-শ্রুসিক-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগের পর দেশ ত্যাগ করা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টের এটর্নি জেনারেল থেকে শুরু করে দেশের সব জেলা-মহানগরের আদালতসমূহে নিয়োগকৃত সকল পাবলিক প্রসিকিউটরদের (পিপি) নিয়োগ বাতিলপূর্বক নতুন করে দক্ষ ও নিরপেক্ষ আইজীবিদের নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় স্মারক নং- সলিসিটর/জিপি-পিপি (রাঙ্গামাটি)-২৬/২০২৪ (অংশ-১)-১৬৭ তারিখঃ ৩/১১/২০২৪ খ্রি. এর মূলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সহ সরকারি কৌসুলী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাবলিক প্রসিকিউটর ও সহকারী প্রসিকিউটর নিয়োগ দিয়েছে অন্তবর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আইন ও বিচার বিভাগ, সলিসিটর অনুবিভাগ (জিপি-পিপি শাখা)। আওয়ামী লীগের ঘরোয়া লোকজন ও বিগত সরকারের সময় সুবিধাপ্রাপ্ত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে বিরোধীতাকারী লোকজন সদ্য গঠিত রাঙ্গামাটি জজ কোর্টে পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও সহকারী পিপি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর খুনির দোসরদের এসব পদে বসানো শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁরা সকলেই সকলেই বিগত ১৫ বছর ধরে খুনি শেখ হাসিনার দোসর হিসাবে চিহ্নিত এই সকল আইন আইনজীবীরা পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের সুবিধা ভোগী ছিলেন। আমরা চাই তাদের এই নিয়োগ বাতিল করে নতুন যোগ্য লোকদের নিয়োগ দেওয়া হোক। "বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোল" যাদের নিয়োগ বাতিল চায় তারা হচ্ছেন, প্রতিম রায় পাম্পু (পাবলিক প্রসিকিউটর), গফুর বাদশা (অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর) ও মো. রাইসুল কবির (সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর)
আপনারা ইতিমধ্যে আরও অবহিত হয়েছেন যে, গত ০৭ নভেম্বর ২০২৪খ্রিস্ট্রাব্দ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জনাব তাছলিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে (নং ২৯.০০.০০০০,০০০,২১৪.১৮.০০২২.২৪.-১১৯) অর্ন্তবর্তীকালীন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্নগঠন করা হয়। জেলা পরিষদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতামত নেয়া হয়নি। পার্বত্য উপদেষ্টার এ হেন বৈষম্যমূলক আচরণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মেনে নিবে না। আমরা চাই রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ। দাবি মানা না হলে সকল সম্প্রসায়কে নিয়ে পাহাড়ে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ চার উপজেলা থেকে কোনো প্রতিনিধি না নিয়ে, সে সব উপজেলার শূন্যস্থান সদর থেকে পূরণ করে যে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে তা আমাদের কাছে কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আমাদের প্রত্যাশা ছিলো, গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর নতুন বাংলাদেশে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, সারা দেশের মতো রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায়ও বৈষম্য মুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। জেলার দশ উপজেলা থেকে দল নিরপেক্ষ ও এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত এমন গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্ণগঠন করা হবে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্যি এই প্রথম বারের মতো জেলার অতীব গুরুত্বপূর্ন চারটি উপজেলা কাউখালী, বরকল, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী থেকে কোন প্রতিনিধি না রেখে উপজেলাবাসীকে বঞ্চিত করে বৈষম্যমুলক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্ণগঠন করা হয়েছে। যাহা রাঙ্গামাটি জেলাব্যাপী জনগণের মধ্যে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বেশির ভাগ সদস্য জন বিচ্ছিন্ন এবং পতিত সরকারের দলীয়/সুবিধাভোগী। এমন ও আছে একই পরিবারের একাধিক সদস্য (ভাবী ও দেবর) এবং হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত পলাতক আসামী রয়েছে।
তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েক হাজার ছাত্র জনতা শহীদ হয়েছেন। তাদেরই রক্ত এবং জীবনের বিনিময়ে আন্দোলনের ফলে ৫ আগষ্ট ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতনের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। গঠন করা হয় অর্ন্তভর্তিকালীন সরকার। যেখানে ঘোষনা দেওয়া হয় ফ্যাসিবাদের দোসররা কেউ সরকারী সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেনা। যারই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিবাদ সমর্থিত লোকজনকে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ন জায়গা থেকে ইতিমধ্যে অপসারন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় আমরা নতুন বাংলাদেশ পাওয়ার পরও ফ্যাসিষ্ট সরকারের কিছু পেতাত্তা পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে এখনো বিদ্যমান রয়েছে। ছাত্র জনতার আন্দোলন ও শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করে ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসরদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে অন্তর্বতীকালীন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
সংবাদ সম্মলেনে তারা জেলা পরিষদে নিয়োগে বিতর্কিত সদস্যদের পরিচয় বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন,রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা: তিনি হলেন ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকার মনোনীত সাবেক অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদের সদস্য ও দুর্নীতিবাজ রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগ নেতা রেমলিয়ানা পাংখোয়ার বড় ভাই লাল ছোয়া পাংখোয়ার স্ত্রী, রয়েছে তারই ভাতিজা ড্যানিয়েল লাল মুয়ান সাং পাংখোয়া। রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যাপাংখোয়া সম্প্রদায় বিয়ে করায় তিনি তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। প্রকৃততঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় থেকে নিয়োগ না দিয়ে তাকে নিয়োগ দেওয়ায় তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ক্যসিংমং মারমা: কাপ্তাই আওয়ামিলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তার ১ম ছেলে উক্রছাই মারমা চিৎমরণ ইউপিশাখা যুবলীগ সভাপতি। ২য় ছেলে হ্রাকছাই মারমা চিৎমরণ ইউপিশাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রঞ্জাপন হওয়ার পর এলাকায় প্রচার হয়েছে তিনি কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য অংশুসাইন চৌধুরীর তদবিরে সদস্য পদে মনোনীত হয়েছেন।
নাইউ মারমা: নারী সদস্য নাইউ মারমা রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বাচ্চুমং মারমার স্ত্রী।
লুৎফুন্নেসা বেগম: লুৎফুন্নেসা বেগম হলো আব্বাস উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী। আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী রাঙ্গামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতিও রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর বোনের দেবর। তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগী হিসেবে পরিচিত। সেই সুবাদে আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী একবার দুদক রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিল। নিজে সুযোগ না পেয়ে তার স্ত্রীকে পদটি পাইয়ে দেয়।দয়াল দাশ: সদস্য দয়াল দাশ নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। প্রায় সময় চট্টগ্রাম শহরে থাকেন।
প্রনতি রঞ্জন খীসা: তিনি হত্যা মামলার চার্জশীট ভুক্ত পলাতক আসামী। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা জিআর নং ৩১৯/২০১৮ রাঙ্গামাটির আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
মিনহাজ মুরশিদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা পড়া কালীন সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইনানের রুমমেট ছিলো এবং ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। জনশ্রুতি ছিলো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকীয় পদের জন্য মনোনীত ছিলো।
হাবিব আজম: বাঙালি ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি করলেও তিনি ফ্যাসিস সরকারের সাবেক সাংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের পৃষ্টপোষকতায় তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে বলে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুর্নীতিবাজ ও প্রভাবশালী সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য হাজি মুছা মাতব্বরের ভাতিজি জামাই হাবিব আজম। সে এবং তার সহযোগিরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল।
এ ধরনের বিতর্কিত ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের দিয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্ন্তবর্তীকালীন পুনর্গঠিত পরিষদকে জনগণ প্রত্যাখান করেছে। আমরা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পুনর্গঠনের জোর দাবী জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলেে শিক্ষার্থীরা তাদের ৬ দফা দাবী তুলে ধরেন। দাবি সমূহ- রাঙ্গামাটি জজ কোর্টে পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও সহকারী পিপিকে অপসারণ করে নতুন যোগ্যতাসম্পন্ন আইনজীবীকে উক্ত পদে নিয়োগ দিতে হবে। (প্রতিম রায় পাম্পু (পাবলিক প্রসিকিউটর), গফুর বাদশা (অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর) ও মো. রাইসুল কবির (সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর)
পাহাড়ি-বাঙ্গালী ও সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সমতা বজায় রেখে জনসংখ্যার অনুপাতে জেলা পরিষদের কমিটি সংস্কার করে হবে।
সকল উপজেলা থেকে অবশ্যই জেলা পরিষদে সদস্য রাখতে হবে।
আওয়ামীলীগের ফ্যাসিবাদের পক্ষে বা সমর্থনে যারা ১৬ বছর আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় থেকে সুবিধা ভোগ করে গেছে অবিলম্ব তাদের জেলা পরিষদের সদস্য পদ থেকে অপসারণ করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বতীকালীন পরিষদের নবগঠিত কমিটি সংস্কার করতে হবে।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নবগঠিত কমিটিতে যাদের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে রাখা হয়েছে তাদের সাথে "বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন" রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের দুজনকে অপসারিত করে "বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা থেকে দুইজন ছাত্র প্রতিনিধি দিতে হবে।
ও নবগঠিত জেলা পরিষদ কমিটির সদস্য জনাব প্রনিত রঞ্জন খীসার নামে হত্যা মামলা রয়েছে এবং সে পলাতক আসামি। অবিলম্বে তার সদস্য পদ থেকে তাকে অপসারণ করতে হবে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com