ডেস্ক রির্পোট:- গত চারবারের মতো এবারও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে সাবেক সচিবদের নাম বেশি আলোচনায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বিএনপিসহ ১৭টি দল ও জোট এবং পেশাজীবী সংগঠন থেকে সিইসি পদের জন্য যাঁদের নাম জমা পড়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই সাবেক সচিব। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এর পাশাপাশি এবার শিক্ষাবিদদের নামও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় জমা পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবেও নাম জমাকারীদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক সচিব রয়েছেন।
আর নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য সুধীসমাজের প্রতিনিধি, সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, বিচারক, শিক্ষক, সিনিয়র সাংবাদিক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীর নামও জমা হয়েছে।
আইন অনুযায়ী আগামী ২১ নভেম্বরের মধ্যে অনুসন্ধান কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের প্রতিটি শূন্য পদের জন্য দুজনের নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে এবং এ মাসেই নির্বাচন কমিশন গঠনের কাজ চূড়ান্ত হবে। তবে এবারও সিইসিসহ পাঁচজন সদস্য নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে কি না, কমিশনে আগের কয়েকবারের ধারাবাহিকতায় এবারও একজন নারী সদস্য থাকবেন কি না তা জানার জন্য এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নাম প্রস্তাব করার শেষ সময় ছিল গত ৭ নভেম্বর বিকেল ৫টা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এসংক্রান্ত চিঠিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য নাম প্রস্তাব করার জন্য রাজনৈতিক দল, জোট ও সংগঠনগুলোর কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির কাছে কোনো নাম চায়নি অনুসন্ধান কমিটি। নামের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত নামের সঙ্গে সবার পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত দেওয়া হয়নি বলে জানা যায়।
এ ছাড়া বিএনপি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রতিটি পদের জন্য দুজন করে মোট ১০ জনের নাম জমা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী মোট আটজনের নাম প্রস্তাব করেছে। গণ অধিকার পরিষদ ছয়জনের নাম প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, এলডিপি, এবি পার্টি, মুক্তিজোট—এসব দলও পৃথকভাবে নাম প্রস্তাব করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর কাছে পাঁচজনের নাম চাওয়া হয়েছিল।
আগের চার সিইসি ছিলেন সাবেক সচিব : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই দেশের প্রথম নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি মো. ইদ্রিস। এরপর বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম, বিচারপতি চৌধুরী এ টি এম মাসুদ, বিচারপতি সুলতান হোসেন খান, বিচারপতি মো. আবদুর রউফ, বিচারপতি এ কে এম সাদেক, মোহাম্মদ আবু হেনা, এম এ সাঈদ, বিচারপতি এম এ আজিজ, ড. এ টি এম শামসুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা ও সর্বশেষ কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পান।
এঁদের মধ্যে সাতজন ছিলেন বিচারপতি এবং ছয়জন ছিলেন সাবেক সচিব। ১৯৭২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাবেক বিচারপতিরাই সিইসি পদে নিয়োগ পেয়ে আসছিলেন। এর পরিবর্তন হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর। ওই সময় বিচারপতি এ কে এম সাদেক পদত্যাগ করেন এবং সিইসি পদে প্রথমবারের মতো একজন সাবেক সচিব (মোহাম্মদ আবু হেনা) নিয়োগ পান। আবু হেনার পর নিয়োগ পান সাবেক সচিব এম এ সাঈদ। এরপর ২০০৫ সালের ২০ মে আপিল বিভাগে কর্মরত একজন বিচারপতি (বিচারপতি এম এ আজিজ) সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেলেও ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর পরের চার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন সাবেক সচিব।
পর পর চারবার একই ছক : নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বিশ্লেষণ, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পর পর চারটি কমিশন প্রায় একই ছকে গঠন হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে সরকারের একজন সাবেক সচিব, নির্বাচন কমিশনার পদে সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা এবং একজন সাবেক বিচারককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিদায়ি কে এম নুরুল হুদা কমিশনে দেশে প্রথমবারের মতো একজন নারীকেও নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়াই পরের নির্বাচন কমিশনগুলোতেও একই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়। এ ছাড়া গত তিনটি নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচজন করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হয়ে আসছে।
নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা বিষয়ে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে আগে বলা ছিল, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে এবং রাষ্ট্রপতি সময় সময় যেরূপ নির্দেশ করবেন সেইরূপসংখ্যক অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এর পরিবর্তন এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়।
এবার যাদের নাম আলোচনায় : সূত্র জানায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য বিএনপি সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিন ও সাবেক সচিব শফিকুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেছে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী কয়েকটি দলও প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য সাবেক সচিব শফিকুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেছে। ছয় দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিটি দলের পৃথকভাবে দেওয়া প্রস্তাবের মধ্যেও সাবেক সচিব শফিকুল ইসলামের নাম রয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি প্রস্তাব করেছে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানের নাম। নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপকসহ মোট ছয়জনের নাম প্রস্তাব করেছে। এই ছয়জনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের নাম রয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঞা, বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম, সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবীর, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সাবেক সদস্য তানজিনা ইসলাম, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এস এম জাকারিয়া, সাবেক সচিব মহিবুল হক, শহিদুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া, সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতিদার আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুহুল আমিন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম হাসান তালুকদার, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, সাবেক জেলা জজ শামীম আহমেদ ও এস এম নুরুজ্জামানসহ আরো অনেকের নাম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com