ডেস্ক রির্পোট,রাঙ্গামাটি:- ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তা’র আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাঙ্গামাটির ‘লুসাই পাহাড়ে পর্যটন উন্নয়ন’ প্রকল্পে অর্থায়ন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কাজটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি টাকা। প্রথম অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০ লাখ টাকা। সেই টাকাও তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের কাজ আজ পর্যন্ত শুরুই হয়নি!
মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে ঠিকাদার দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। কিন্তু হঠাৎ সরকার পতনের কারণে সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী? যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবারও কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া রাঙ্গামাটি শহরে অর্ধকোটি টাকার একটি রাস্তা নির্মাণেও মিলেছে অনিয়মের অভিযোগ। জেলা পলিষদের টেন্ডার কমিটির আহবায়ক এর দায়িত্বে ছিলেন,জেলা পরিষদের সদস্য ও রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর। অভিযোগরে আংগুল মুছা মাতাব্বরের দিকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লুসাই পাহাড়ে পর্যটন উন্নয়নে কোনো কাজই করা হয়নি। কাপ্তাই হ্রদ পরিবেষ্টিত বিচ্ছিন্ন পাহাড়টি আগে যেভাবে ছিল এখনো ঠিক সেভাবেই পড়ে আছে। উন্নয়ন কাজে কোদালের একটি কোপও সেখানে পড়েনি। অথচ কাজের টেন্ডারসহ কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল এক বছর আগে। পাহাড়টিতে কয়েকটি পরিবারের বাড়িঘর দেখা যায়, যারা অনেক আগে থেকেই সেখানে বসবাস করছেন। তারা জানিয়েছেন, ওই পাহাড়ে পর্যটন উন্নয়নে আজ পর্যন্ত কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি। সেখানে এমন কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তাও তারা জানেন না।
এদিকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল শাখায় এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পাওয়া বরাদ্দের বিল যদি গত অর্থবছরের জুন ফাইনালের আগে তোলা না হতো তাহলে টাকা ফেরত যাওয়ার কথা। কিন্তু এ ধরনের কোনো প্রকল্পের টাকা ফেরত যায়নি। কাজেই সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদারের নামে বিলের টাকা পরিশোধ হয়ে গেছে।’ যদিও ঠিকাদারের নাম প্রকাশ না হওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বলেন, ‘লুসাই পাহাড়ের পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পটিতে আসলে অনেক কাজ। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ কোটি টাকা অনুমোদন করা হলেও পুরোপুরি কাজ করতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। বরাদ্দ পেলে কাজ পুরোদমে শুরু হবে।’
এদিকে টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টি সরাসরি না জানালেও ঠিকাদারের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘প্রথম অর্থবছরে পাওয়া বরাদ্দের পরিমাণ (১০ লাখ টাকা) খুবই কম। এ টাকায় কাজ করা সম্ভব না। তা ছাড়া জায়গাটির সীমানা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে চলা বিরোধ সমাধানের কাজ রয়েছে। তাই এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এগুলো সমাধান হয়ে গেলে পর্যায়ক্রমে কাজ শুরু করা যাবে।’
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তার আরেকটি কাজেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাঙ্গামাটি শহরের চম্পকনগরের ‘ওয়াপদা রেস্ট হাউসের দক্ষিণ পাশে অশ্বিনী কুমার চাকমার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ’ প্রকল্পে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। কিছু রড ও সিসি ঢালাই দিয়ে করা ২০০ ফুটের রাস্তাটির কাজ খুবই নিম্নমানের হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, কাজ শেষ হতে না হতেই রাস্তার শুরুর দিকের অংশ পুকুরে ধসে পড়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ের ওপর দিয়ে বানানোর কথা থাকলেও রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছে চম্পকনগর পুকুরের পাড় দিয়ে। এতে মাত্র একটি পরিবার এর সুফল পাবে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া কাজটি চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা। তবে স্থানীয়দের দাবি, কাজটি করতে অর্ধেক টাকাও খরচ করা হয়নি। বরাদ্দের বেশিরভাগ টাকাই চলে গেলে জেলা পরিষদের প্রকৌশল শাখার লোকজন ও ঠিকাদারের পকেটে।
রাঙ্গামাটি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘জেলা পরিষদের বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ আমরা এরই মধ্যে পাচ্ছি। জেলা পরিষদকে আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকায় দেখতে চাই। কিন্তু এভাবে রাষ্ট্রের অর্থের নয়ছয় করাটা খুবই দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’
জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বলেন, ‘পাহাড়ের ওপর দিয়ে রাস্তাটি করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এতে কয়েকটি পরিবারের ঘরবাড়ি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। বাধ্য হয়ে নিচের পুকুরের পাড়ঘেঁষে তা নির্মাণ করতে হয়েছে। এতে আশপাশের অনেকে উপকৃত হবেন।’ রাস্তার সম্মুখ অংশ ধসে যাওয়ার বিষয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি। খবরের কাগজ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com