ডেস্ক রির্পোট:- বৈষম্যমূলক পার্বত্য শান্তিচুক্তির ফসল পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু (পাহাড়ি ও বাঙালি) নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা ও প্রেষণে আসা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল হক বহাল তবিয়তে।
কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা ২০১৯ সালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। তার নিয়োগ আরো দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে জনসাধারণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও পাহাড়ের সন্ত্রাসী সংগঠন পার্বত্য জনসংহতি সমিতি প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লামরা ওরফে সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির ফলে সন্তু লারমা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্পেশাল এ্যাফেয়ার্স বিভাগ হতে ১৯৯৭ সালের ০৮ এপ্রিল জারীকৃত পরিপত্র মোতাবেক ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির থেকে বাংলাদেশি উপজাতীয় শরণার্থীর দেশে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত (পাহাড়ি ও বাঙালি) নির্দিষ্টকরণ ও তাদের পুনর্বাসন তথা সরকার ঘোষিত ২০ দফা প্যাকেজ সুবিধা বাস্তবায়নে সহায়তা ও পর্যবেক্ষণকল্পে সরকার ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স গঠন করে। কিন্তু গত প্রায় ২৭ বছরে কোন পাহাড়ি বা বাঙালি উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসন করতে পারেনি এই প্রতিষ্ঠানটি। ফলে প্রতিষ্ঠানটি হাতি পোষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয় জারীকৃত পরিপত্রে এ টাস্কফোর্সটি শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু বিষয়ক টাস্কফোর্স হলেও নাম পরিবর্তন করে এ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত নাম “উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স” রাখা হয়েছে। যার ওয়েবসাইট ঠিকানা : (https://tratf.gov.bd)।
প্রতিষ্ঠানের নামকরণের প্রতিয়মান হয়, এ প্রতিষ্ঠান হতে শুধুমাত্র উপজাতীয় শরণার্থীদের পুনর্বাসন কাজ করা হয় এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের (পাহাড়ি ও বাঙালি) কোন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয় না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ৮ আগস্ট গঠিত ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স অফিস হতে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের (পাহাড়ি ও বাঙালি) পুনর্বাসনে কোন কাজই শুরু করা হয়নি।
অনুসন্ধান বলছে, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সে এ পর্যন্ত ৫ জন উপজাতীয় ব্যক্তি প্রতিমন্ত্রী ও সচিব মর্যাদায় দায়িত্ব পালন করেছে। এরা হচ্ছে সাবেক সংসদ সদস্য কল্পরঞ্জন চাকমা, দীপংকর দেওয়ান, সাবেক খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সমীরণ দেওয়ান, সাবেক সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও সর্বশেষ সাবেক সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সুদত্ত চাকমা।
জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু (পাহাড়ি ও বাঙালি) নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের সদস্য সংখ্যা চেয়ারম্যানসহ ১৬ জন। সদস্যরা হচ্ছে, কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, সদস্য হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তিন
পার্বত্য জেলা প্রশাসক, তিন পার্বত্য জেলা সার্কেল চিফ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও চট্টগ্রাম জিওসি’র প্রতিনিধি ও একজন বাঙালি সদস্য।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও কার্যত এ প্রতিষ্ঠানটি জন্মের পর থেকে শুধুমাত্র উপজাতীয়দের উন্নয়নে কাজ করে আসছেন ।
অনুসন্ধান বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু (পাহাড়ি ও বাঙালি) নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমাকে। কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা মূলত পোস্টাল ক্যাডারের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি তৎকালীন পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার ব্যাচমেট। মূলত স্বজনপ্রীতির কারণে উপসচিব মর্যাদার এ কর্মকর্তা এ পর্যন্ত তিনবার দুই বছর করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়িয়ে টানা ৫ বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছে। যার ০৬ বছরের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ২৭ এপ্রিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের ব্যাচমেট পরিচয় দিয়ে তিনি দাপটের সাথে একজন উপসচিব হয়েও ৬ বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ দেশের ৬-৭ শত উপসচিব ওএসডি হিসেবে সাড়ে ১৫ বছর কর্মরত ছিলেন পদায়নের অভাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট করিম উল্লাহ অবিলম্বে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু (পাহাড়ি ও বাঙালি) নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার জরুরি। অন্যথায় যে কোন সময় তারা ছোবল মারবে।পার্বত্যনিউজ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com