ডেস্ক রির্পোট:- পার্বত্য জেলা বান্দরবানের প্রতিটি পাহাড়ে এ মৌসুমে ব্যাপক হারে মিষ্টি কুমড়া চাষ হয়েছে। জুমের ধান কাটার পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়াও ছেড়ার শুরু হয়ে গেছে। পাহাড়ে উৎপাদিত হালকা মিষ্টি স্বাদের মিষ্টি কুমড়া ফলটি বেচাকেনা ধুম পড়েছে পাহাড় জুড়ে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় বলে মিষ্টি কুমড়ার চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।
কিন্তু এ বছর পাহাড়ের পাদদেশে কোথাও কোথাও মিষ্টি কুমড়া ফলন ভালো হয়নি। তাছাড়া অনাবরত বৃষ্টি ও পাহাড়ের ধ্বসে কারণের কয়েকটি এলাকায় মিষ্টি কুমড়া বাগান ধ্বসে গেছে। পাহাড়ের মিষ্টি কুমড়া কিছুটা ভালো ফলন হলেও উৎপাদন খরচের তুলনায় নায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষীরা। ফলে আগের থেকে দিনদিন কমে যাচ্ছে মিষ্টি কুমড়া ফলন।
চিম্বুক ওয়াইজংশন সড়ক থেকে শুরু করে নীলগিরী পর্যন্ত আবার সুয়ালক সড়ক থেকে টংকাবতী পর্যন্ত পাহাড়ের পাদদেশে জুম ধানের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া চাষ করেন ম্রো সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা। মূলত এই মিষ্টি কুমড়াও জুমের ধান মত উচুঁ পাহাড়ের চাষ করা হয়। জুমের ধান কাটার পরই মিষ্টি কুমড়া ফল পাওয়া যায়। পার্বত্যাঞ্চলের পাদদেশে বসবাসরত ম্রো সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীদের জীবনধারণের প্রধান উৎস জুম চাষ হলেও বর্তমানে পাহাড়ের ঢালুতে মিশ্র ফলদ বাগানের পাশাপাশি একই জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি কুমড়া সবজির চাষাবাদ করছেন দীর্ঘকাল ধরে। এই সবজি চাষ করে আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল হচ্ছেন তারা। তবে আগে মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হলেও এর তুলনায় এখন দিনদিন কমছে ফলন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ তথ্যনুযায়ী, গেল ২৩-২৪ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে ২৮ দশমিক ১৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার ফলন হয়েছে ২শত ৬২ মেট্রিকটন। যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছিল ৭ হাজার ৩৭৪ মেট্রিক টন। চলতি খরিপ-১ মৌসুমে ১৬ দশমিক শূন্য আট হেক্টর জমিতে ফলন হয়েছে ৩৩৯ মেট্রিক টন যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৪৫২ মেট্রিকটন। গেল বছর চেয়ে চলতি বছরে পাহাড়ের মিষ্টি কুমড়া ফলন চাষ কমেছে প্রায় তিন শতাংশ।
চিম্বুক সড়কে ও টংকাবটী সড়কে দু-পাশে মিষ্টি কুমড়া সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখছে চাষীরা। আবার ম্রো নারী চাষীরা মাথায় থ্রুং দিয়ে কয়েকফুট পাহাড়ের নীচ থেকে সংগ্রহ করছেন মিষ্টি কুমড়া। বেশ কয়েকশন পাহাড়ের উপর মিষ্টি কুমড়া খুঁজে খুঁজে ছিড়তে ব্যস্ত। অপরদিকে ক্রেতাদের সমাগম বেড়েছে মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করতে। কেউ বস্তায় ভরছেন কেউ মাপযোগ। প্রতিবছরের চেয়ে চলতি বছরে অপযার্প্ত বৃষ্টির ফলে জুম ধানের সাথে লাগানো সাথী ফসল মিষ্টি কুমড়ার আকারভেদ একেবারে ছোট আর অনেক ফল নষ্ট হয়ে গেছে।এই মৌসুমে বৈরি আবহাওয়ার অনেক বড় প্রভাব পড়েছে জুম চাষের ওপর। এতে জুমের লাগানো অন্যান্য সবজি উৎপাদনও আশানুরূপ হয়নি।
চিম্বুক পাড়া, এম্পু পাড়া, সিতা পাড়া, টংকাবতী, ব্রিকফিল্ড, রামরিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়কের পাশে জুমের উৎপাদিত ফল ছোট-বড় সাইজের মিষ্টি কুমড়া। খুচরা ক্রেতারা জুমিয়াদের কাছে কিনছেন প্রতিকেজি ২০ টাকা যা প্রতি মণ হিসেবে ক্রয় করছেন ৮শত টাকা। অথচ বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া বিক্রয় হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে। কিন্তু মধ্যস্বত্ব ব্যবসায়ীর দ্বিগুন মুনাফা করার কারণে পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়ার চাষ বাড়লেও নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকেরা। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজারজাতকরণের সহজ উপায়, চট্টগ্রাম ও ঢাকার বড় বড় আড়তদারদের সাথে সরাসরি সম্পর্ক না থাকায় মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্মের কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না জানিয়েছেন কৃষকেরা।
সিতাপাহাড় ও চিম্বুক এলাকার চাষি ডেঞে ও সাতই ম্রো বলেন, জুমের লাগানো আগে মিষ্টি কুমড়া ফল লাগিয়ে দেড় একর পাহাড় জুড়ে। কিন্তু এ বছরে বেশী বৃষ্টি ও রোদে প্রয়োজন সময় রোদ পায়নি বলে এ বছর ফলন কমেছে। আর দামেও কম কেজি ২০ টাকা আর প্রতি মণ ৮০০ টাকা। এ বছর লাভও নাই আর নায্যমূল্যও পাচ্ছিনা।
রামরি পাড়া চাষী রেংলো ম্রো নিজের জুম পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছে প্রায় ২ একরের মতো। তিনি বলেন, পাহাড়ে জুম চাষে উৎপাদিত পুষ্টিকর মিষ্টি কুমড়া প্রতিদিন দুই হতে পাচটি ট্রাক চট্টগ্রাম যাচ্ছে। অথচ আমরা দামে নায্যমূল্য পাচ্ছি না। নতুন ফলন বের হওয়ার সময় দাম ৫০০ শত থেকে ৮শত টাকা প্রতি মণ। পরবর্তিতে মণ প্রতি ৩শত-সাড়ে তিনশত হয়ে যায়। ফলে শ্রমিকের মজুরীর টাকা না উঠায় অনেক চাষী ক্ষেতের মিষ্টি কুমড়া বিক্রির জন্য বাজারেই তুলেনি বলে জানান তিনি।
খুচরা বেপারী আব্দুল রহিম বলেন, পাহাড়ের মিষ্টি কুমড়া গুলোকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ,মিমসাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়। শহরে সাথে পাহাড়ে দামে মিল না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রমিক খরচ, গাড়ি ভাড়া, রাস্তাঘাটে টাকা লেনদেন এসব দিয়ে কিছুটা লাভ থাকে।
জেলা অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ হাসান আলী বলেন, এ বছরে বৃষ্টি পর্যাপ্ত পরিমানে ছিল বিধায় মিষ্টি কুমড়া ফলন মোটামুটি হয়েছে। গেল বছর তুলনায় এই বছরে কিছুটা ফলন কমেছে। তবে পাহাড়ে চাষিরা নায্যমূল্যে না পাওয়া বিষয় হল তৃতীয় পার্টি অর্থাৎ দালালের কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষকরা যদি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিক্রি না করে সরাসরি চট্টগ্রাম কিংবা বান্দরবানে এসে বিক্রি করে তাহলে চাষিরা লাভবান হবে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com