ডেস্ক রির্পোট:- সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও আলোচিত বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল রয়েই গেছে। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কবর থেকে তার দেহাবশেষ তোলা হয়েছে।
বুধবার সকালে সাভার উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রাসেল ইসলাম নূরের উপস্থিতিতে বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর জালালাবাদ এলাকার জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যিন ঢাকা মাদ্রাসার কবরস্থান থেকে তার দেহাবশেষ তোলা হয়।
গত ৮ অক্টোবর ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের বিচার শাখা থেকে দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক এ পদক্ষেপ নেওয়া হলো। বিষয়টির তত্ত্বাবধানে থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রাসেল ইসলাম নূর।
এর আগে, ৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরীর রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মাহবুবুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য কবর থেকে দেহাবশেষ তুলে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন।
আদালতে হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ কবর থেকে উত্তোলন করে তার পরিচয় প্রমাণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করানো, পরিচয়ের ইতিবাচক ফল, মৃত্যুর সনদ পাওয়া, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থেকে তার নাম মুছে ফেলা এবং তাকে নিজ জেলায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে দাফন করার আবেদন করেন তার মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী।
ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী বলেন, আমার বাবা হারিছ চৌধুরী ১/১১ এর পর থেকে গোপনে ছিলেন।
বাবার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর পুনঃতদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আমার বাবাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি একজন বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে মিথ্যা চার্জশিট দিয়ে চরম অন্যায় করা হয়েছে।
তাই মামলাটির পুনঃতদন্ত করে তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করার দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আমার বাবার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই লেখা হয়েছে। এখানে যাকে প্রফেসর মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা হয়েছিল, তিনিই হারিছ চৌধুরী। বিগত স্বৈরাচারী সরকার তাকে গ্রামে নিয়ে দাফন করতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা করোনার সময় সাভারের এই কবরস্থানে বাবাকে কবর দেই। পরবর্তী সময়ে বাবার মৃত্যু সনদ চেয়ে আবেদন করা হলেও স্বৈরাচার সরকার আমাদের কথা শোনেনি। আপনারা এবার সত্যটা তুলে ধরুন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সামাদ মিয়া বলেন, আমরা জানি প্রফেসর মাহমুদুর রহমানকে এখানে দাফন করা হয়েছে। হারীছ চৌধুরী নামে কাউকে দাফনের বিষয়টি আমরা জানতাম না।
স্থানীয় বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী হারিছ চৌধুরী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমরা তার পরিচয় নিশ্চিত করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, প্রফেসর মাহমুদুর রহমান নামে এখানে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী- এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তার মেয়ের করা এক রিটের ভিত্তিতে পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য দেহাবশেষ উত্তোলন করে ডিএনএ টেস্টের জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে।
সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম রাসেল ইসলাম নূর বলেন, হারিছ চৌধুরীর মেয়ের করা একটি রিটে হাইকোর্টের নির্দেশে দেহাবশেষ তোলা হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিতদের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। হারিছ চৌধুরীর মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হলে তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানিয়ে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের আছরের নামাজের পর প্রফেসর মাহমুদুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদানের মাধ্যমে জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যিন মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী দাবি করেন যে, এটি তার বাবা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com