ডেস্ক রির্পোট:- দিল্লির তাঁবেদার কর্র্তৃত্বাবাদী হাসিনার দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতেই ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থান/বিপ্লব ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েছে। ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত এবং গণহত্যা করে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন ভারতে। গুলিতে শহীদ হয়েছেন হাজারো ছাত্র-জনতা। এর আগেই ১৫ বছর দেশের শাসন কাঠামো ভঙ্গুর অবস্থা করে ফেলেছেন। বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, অর্থনীতিসহ সব সেক্টর ধ্বংসপ্রাপ্ত। গণঅভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্যই ছিল দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুঃশাসন, নির্যাতন-নিপীড়ন, দুর্নীতি-লুটপাট-অনিয়ম, গুম-খুন বন্ধ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। পাশাপাশি ভারতের নাচের পুতুল স্বৈরাচার হাসিনার সহযোগী, অংশীদার, সুবিধাভোগী, দোসর তথা অলিগার্কদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা। কিন্তু নোবেলবিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা সেই পথে হাঁটতে চাইলেও তার সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ভিন্নপথে হাঁটতে শুরু করেছেন। আন্তর্জাতিক মহলে পাহাড়সম ব্যক্তিত্বের অধিকারী ড. ইউনূসের ইমেজ কাজে না লাগিয়ে প্রশাসনে চলছে পলাতক হাসিনা ও ভারতকে খুশি করার মহোৎসব। কোনো কোনো উপদেষ্টা যেন দিল্লির এদেশীয় এজেন্ট ও তাঁবেদারকে পুনর্বাসনের খেলায় মেতে উঠেছেন। ফলে ড. ইউনূসের সরকারকে অযোগ্য প্রমাণে ভারত ও আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় তাদের দেশীয় দোসরদের প্রত্যক্ষ মদদে একের পর এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে। যাদের (দু’-একজন উপদেষ্টা) দায়িত্ব এসব শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করার, তারাও নামমাত্র সেই দায়িত্ব পালন করছেন। আবার নানাভাবে আওয়ামী দোসরদেরই পুনর্বাসন করা হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন স্থানে। আর এ ক্ষেত্রে সরকারের মধ্য থেকেই কেউ কেউ কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও জামায়াত গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সংলাপে মিলিত হন। সংলাপে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিটবিরোধীরা সরকারে কেন? তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। বৈঠকে অংশ নেয়া বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা জানান, বিএনপি সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইছে। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষাবিরোধী যাদের সরকারে গুরুত্বপর্ণ পদে বসানো হয়েছে তাদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কারণ, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে মানুষের পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে অনেকেই জনগণের প্রত্যাশার পরিপন্থী কাজ করছেন। অন্য দিকে, মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে জামায়াতের পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। জামায়াত জানিয়েছে, জামায়াত যেসব পরামর্শ দেবে তা আগামী ৯ অক্টোবর জাতির সামনে উপস্থাপন করবে।
সংলাপে বিএনপি স্পষ্টভাবেই জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সরকারের প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ সর্বত্রই স্বৈরাচারের দোসরদের সক্রিয় অবস্থানের কারণে শুরু থেকেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট। এমনকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যেও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ব্যাহতকারী দু’-একজন রয়েছেন। যারা ছাত্র-জনতার রক্তের সাথে বেঈমানি করে, স্পিরিটের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।
এছাড়া সংলাপে তিনি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন কমিশন সংস্কার, কমিশন নিয়োগের আইন বাতিল, বিগত তিনটি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা কমিশনারদের আইনের আওতায় আনা, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রশাসনে আওয়ামী দোসরদের অপসারণ, ২০০৭ সাল থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়ের করা সব রাজনৈতিক, গায়েবি ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ভারতে বসে হাসিনার অপপ্রচার বন্ধে ভারতের সঙ্গে আলোচনা, পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ, গুম-খুনের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরে বিএনপি প্রতিনিধি দল।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানই তার সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার। বিএনপির প্রস্তাব ও দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়গুলো অত্যন্ত সহযোগিতার সঙ্গে তারা দেখছেন। তারা মনে করেন, আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি, আমাদের দাবিগুলো তাদেরও দাবি।
এদিন তৃতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বিএনপির মাধ্যমেই এ দফায় সংলাপ শুরু করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বেলা আড়াইটায় বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করেন। এক ঘণ্টাব্যাপী তাদের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে ছয় সদস্যের বিএনপির প্রতিনিধি দলে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। এতে সরকারের দিক থেকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে ছিলেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। এরপরই প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংলাপে বসেন। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান দলটির নেতৃত্বে দেন।
বিএনপি যেসব প্রস্তাব দিয়েছে
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে দু’-একজন আছেন যারা বিপ্লব-গণঅভ্যুত্থানের যে মূল স্পিরিট তাকে ব্যাহত করছে, তাদেরকে সরানো কথা বলেছি। আমরা গত ১৫ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য বলে এসেছি। প্রশাসনের যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তাদের দোসর হয়ে লুটপাট, অনাচার, অত্যাচার, গুম-খুন, গণহত্যায় সহায়তা করেছে, তাদের বেশির ভাগই এখনো বহাল তবিয়তে স্ব স্ব জায়গায় আছে। অবিলম্বে তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের আনার কথা আমরা বলেছি। জেলা প্রশাসক নিয়োগে নতুন ফিট লিস্ট এবং যেসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ বাতিল, ফ্যাসিবাদের সময়ের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা একটি রোড ম্যাপ দিতে বলেছি। নির্বাচন কমিশন কবে নির্বাচন করবে সে ব্যাপারে একটি রোড ম্যাপ দিতে বলেছি। আমরা এনআইডি কার্ড যেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করতে আইন করা হয়েছিল সেটিকে অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাতিল করতে বলেছি। বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন সংস্কার কমিশনে না যায় সে কথা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমরা বলেছি, ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেসব প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনার ছিলেন তাদেরকে ভুয়া ও ব্যর্থ নির্বাচন, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার অভিযোগে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদেরকে বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান উনাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার। বিএনপির দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিষয়গুলো অত্যন্ত সহযোগিতার সঙ্গে তারা দেখছেন। তারা মনে করেন, আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি, আমাদের দাবিগুলো তাদেরও দাবি।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে সংবিধান ধ্বংস ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ‘মূল হোতা’ অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিচার বিভাগের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি, বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। হাইকোর্ট বিভাগে বেশির ভাগ নিয়োগই ছিল দলীয় ভিত্তিতে এবং প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তবিয়তে কাজ করছেন এখনো। এদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। দলকানা কিছু বিচারক আছেন তাদের অপসারণের কথা বলেছি। একই সঙ্গে অতি দ্রুত পিপি ও জিপি নতুনভাবে নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছি।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ করেছি, যাদেরকে অভিযোগে গ্রেফতার করা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে, দুর্নীতি অথবা হত্যায় সুনির্দিষ্ট মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদেরকে দেখতে পারছি যে, জামিন দেয়া হচ্ছে। এটি খুব উদ্বেগজনক। এ বিষয়টি আমরা দেখার জন্য বলেছি। ২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী শাসনামলে দায়ের করা সব মিথ্যা, গায়েবি, ভুয়া, সাজানো, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিছু আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, সাবেক মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে পালাচ্ছেন, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছেন, সে বিষয়গুলো আমরা দেখার জন্য বলেছি।
আরেকটি বিষয় আমরা জোর দিয়ে বলেছি, আজকে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যেসব অপপ্রচার চলছে, সেটি হচ্ছে কারণ, তিনি ভারতে আছেন। এ বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থান থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি। তারা যেন ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাপারটি গভীরভাবে দেখে সেখানে কারা এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা বলেছি। গুম-খুনের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের মধ্যে একমাত্র জিয়াউল হাসান ছাড়া আর কাউকেই ধরা হয়নি। অবিলম্বে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
দলের মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের একটি দল এসেছে বাংলাদেশে। সেই দলকে যারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে জড়িত আছেন তারা জাতিসংঘের টিমকে সেভাবে সহযোগিতা করছে না। বিষয়টি আমরা বলেছি।
দুর্গাপূজা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্প্রতি দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আপনারা লক্ষ করেছেন, সনাতনী কিছু মানুষ, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উসকে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। হিন্দু কমিউনিটির ওপর নির্যাতন হচ্ছে ইত্যাদি কথা বলছে যা সর্বৈব মিথ্যা। এটি তাদের সুদূর পরিকল্পনা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এ কথাগুলো গুরুত্বের সাথে বলেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে গত ৭ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টার এটি তৃতীয় দফা সংলাপ।
সংলাপে জামায়াতের সংস্কার প্রস্তাব
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে যেসব সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে এবং যেসব পরামর্শ রয়েছে তা আগামী ৯ অক্টোবর জাতির সামনে উপস্থাপন করবে জামায়াত। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে গতকাল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা আজ সংলাপে এসেছি। কিছু মৌলিক বিষয় সরকারকে সংস্কার করতেই হবে। কি কি মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবেন সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। আমরা আশা করছি, আগামী ৯ তারিখ আমরা সেই প্রস্তাবনাগুলো উল্লেখ করব।
দেশের চলমান আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার কীভাবে পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি সাধন করতে পারে এবং সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে তা নিয়ে আমাদের এখানে কথাবার্তা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ জায়গা থেকে সুস্থ পরিবেশ তৈরি করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে। আমরা আশা করছি, এটি বেশি দীর্ঘ হবে না। আমরা শুরু থেকে বলে আসছি, একটি যৌক্তিক সময় আমরা সরকারকে দিতে চাই। এই সময়টা কত দীর্ঘ হবেÑ আমরা তা অচিরেই কাজ শুরু করব। তাও আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম, সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সেই যৌক্তিক সময়টা কী হবে? এ নিয়ে অচিরেই আমরা কাজ করব। এটি দেরি হবে না, এভাবে আমরা সামনে এগোতে চাই। এ সময় দুর্গাপূজায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। জনগণের সঙ্গে সরকারের পার্টনারশিপ লাগবে। জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ যদি একসাথে কাজ করে একটি অভূতপূর্ব দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মের ভাইবোনরা উদযাপন করতে পারবেন। সংস্কারকে এক নম্বর গুরুত্ব দিচ্ছেন জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, সংস্কারের টাইমলাইন কী হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দুটি বিষয় দেশবাসীর পক্ষ থেকে চেয়েছি এবং সরকারের কাছে জানিয়েছি। একটি রোড ম্যাপ হবে সংস্কারের, আরেকটি নির্বাচনের। সংস্কার সফল হলে নির্বাচন সফল হবে। দুটি বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। জামায়াতের আমির বলেন, মিডিয়া জাতির আয়না। কিন্তু সাড়ে ১৫ বছর আপনারা বিবেক অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য করা হয়েছে সমাজকে বিভ্রান্ত করার জন্য। অতীতে যা আছে তা আমরা পেছনে ফেলে দিলাম। তবে যারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত, যারা মানুষ খুন করেছেন, গুম করেছেন, দেশের সম্পদ পাচার করেছেন, আয়নাঘর করেছেন তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক তা আমরা দাবি করি। আমাদের উপর যারা জুলুম করেছে তাদের উপরও জুলুম হোক তা আমরা চাই না। আমরা চাই ন্যায়বিচারের জন্য যাতে সবাই নিজের অধিকার বুঝে পায়।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, আ ন ম শামসুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট সংলাপ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মতবিনিময় করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com