রাঙ্গুনিয়া:- চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ও দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদীর উপর সেতু নির্মিত হয়নি এখনো। এই একটি সেতুর জন্য যুগের পর যুগ অপেক্ষা করছেন এই দুই ইউনিয়নের মানুষ। পূর্বে সেতু নির্মাণের অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও একটি সেতু নির্মিত হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই ইছামতী নদীর এই দু’পাড়ের যাতায়াতের জন্য ভরসা রশি টানা নৌকা। তবে শুষ্ক মৌসুমে ইছামতী নদীর পানি কম থাকলে তখন এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঁশের অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করে চলাচল করলেও বর্ষায় সেটি ভেঙে যায়। ফলে রশি টানা নৌকায় চরম দুর্ভোগে জীবন পার করছেন এই অঞ্চলের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। রশি টানা নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে প্রায় ঘটছে ছোট–বড় দুর্ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পারুয়া ডিসি সড়কের দক্ষিণ রাজানগর ও রাজনগর ইউনিয়নের শিয়ালবুক্কা ও ফুলবাগিচা গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী। শিয়ালবুক্কা গ্রামে রয়েছে ৩টি গ্রাম, পূর্ব পাশে রয়েছে ৫টি গ্রাম। পশ্চিম পাশের ৩ গ্রামের তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ইছামতী নদী। অনেকটা দ্বীপের মতো। এই গ্রামের প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন রশি টানা নৌকা দিয়ে ইছামতী নদী পাড় হয়ে দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের রাজাভূবন উচ্চ বিদ্যালয় খন্ডলিয়া পাড়া মাদ্রাসা, আলমশাহ পাড়া কামিল মাদ্রাসা, উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজ ও রাণীরহাট কলেজে যাতায়াত করেন। এছাড়া দু্ই পাড়ের মানুষজন নিত্য কাজে শিয়ালবুক্ক ঘাট দিয়ে এই নদী পারাপার হন। একই সাথে জেলা ও উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজসহ কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চাষাবাদ করা, অফিস–আদালত, হাট–বাজার, অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা নিতে যাতায়াত করে এখানকার হাজার হাজার মানুষ।
মো. করিম উদ্দিন নামে একজন বলেন, একটি সেতু নির্মিত না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বিশেষ করে একটি সেতুর অভাবে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রাজানগর ইউনিয়নের শিয়ালবুক্ক এলাকার নদীবেষ্টিত ৩ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছর পরেও একটি সেতু নির্মিত না হওয়ায় এই ৩ গ্রামে পড়েনি তেমন একটা উন্নয়নের প্রভাব।
স্থানীয় নুরুল আজিম জানান, রশি টানা নৌকায় বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিশু–নারী ও বৃদ্ধদের। ঘাটে এসে তাদের অপেক্ষা করতে হয় পুরুষদের জন্য। এরপর রশি টেনে নৌকা নিয়ে নদী পার হতে হয়। বর্ষাকালে এ ভোগান্তি, দুর্দশা তীব্র আকার ধারণ করে। শুধু তাই নয় বর্ষা মৌসুমে এই নদী পার হওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। নদী পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয় এসব গ্রামবাসীদেরকে। প্রায়শই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে বলে জানান এলাকাবাসী।
রাজাভূবন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ইউপি সদস্য আবদুল কাদের বলেন, একটি সেতুর অভাবে এই গ্রামের মানুষদের সারাবছর দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রী এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নৌকা পার হওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। অত্র গ্রামগুলোর মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখানে সেতু নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।
শিয়ালবুক্ক এলাকার বয়োবৃদ্ধ নজীর আহম্মদ বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ ৫৩ বছরে কত সরকার এলো গেলো কিন্তু একটি সেতু হয়নি। দ্রুত ইছামতী নদীতে একটি সেতু নির্মাণের জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম বলেন, যেসব নদীতে সেতু নির্মাণ প্রয়োজন এমন তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারপরও আমি উক্ত স্থান পরিদর্শন করে প্রয়োজনবোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব পাঠাবো। যাতে অতি দ্রুত শিয়ালবুক্কা এলাকার ইছামতী নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা যায়।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com