ডেস্ক রির্পোট:- গণহত্যা করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। সাড়ে ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে জুলুম-নির্যাতনকারী আওয়ামী লীগ এখন গণধিকৃত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির বিচারের দাবি উঠেছে। এ অবস্থায় এক সময়ের একই সঙ্গে পথচলা রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে মতের মিল থাকলেও আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত কার্যত বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। স¤প্রতি তৃণমূল থেকে শুরু করে দল দু’টির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য ও কথাবার্তায়ও নানা বিষয়ে বৈরীভাব স্পষ্ট হয়েছে। যেটি প্রকাশ্যে আসে গত আগস্টের মাঝামাঝি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন আয়োজনে সময় দেওয়া নিয়ে দু’দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এক ধরনের বাহাস শুরু হয়। মূলত ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে এই বড় দুই দলই যার যার অবস্থান থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে।
অথচ রাজনৈতিক দল হিসেবে জুলুমবাজ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দুই দলের অবস্থান ছিল এক সারিতে। জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল তকমা দিয়ে আওয়ামী লীগ দলটির ওপর সুনামি চালিয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অন্যদিকে বিএনপির বিরুদ্ধে ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছে। তারপর দল দু’টি একে অপরের পরিপূরক ছিল। জামায়াতের ওপর যখনই জুলুম-নির্যাতন হয়েছে বিএনপি প্রতিবাদ করেছে। নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল এমনকি জামায়াতকে অন্যায়ভাবে নিষিদ্ধ করার তীব্র প্রতিবাদ করেছে বিএনপি। তাহলে এমন কী ঘটলো যে হাসিনা পালানোর পরপর নির্যাতিত দল দু’টি একে অপরের প্রতিপক্ষ হতে চলেছে?
জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, জুলাই বিপ্লবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য বড় প্রয়োজন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়টি বারবারই গুরুত্ব দিয়ে বলছেন। তবে জামায়াত এখন নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তা তাদের জন্য এবং জাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতের আলাদা তৎপরতার পর দু’দলের মধ্যে যে দুই যুগের নির্বাচনী জোট, যুগপৎ আন্দোলন বা আন্দোলনে সহঅবস্থানের বিষয়টিতে ঐক্য রয়েছে কি না তা নিয়ে সর্বমহলে এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে। তবে সে বিষয়টিও বিএনপি মহাসচিব একেবারে স্পষ্ট করেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সক্ষাৎকারে বলেছেন, এখন বিএনপি-জামায়াত জোট নেই। নির্বাচনের আগে জনমত দেখে একসঙ্গে না ভিন্নভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্যের আগে জামায়াতে ইসলামীর নায়বে আমীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান এক জনসভায় ঘোষণা দেন জামায়াত আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। এর আগে জামায়াতের আমীরও তার এক বক্তব্যে এ ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা জামায়াতের অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও বলছেন। তবে বিএনপির মহাসচিব যৌক্তিক সময়ে সংস্কারের পর দ্রæত নির্বাচনের দাবি জানানোর পর জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান জামায়াত চায় যতদিন প্রয়োজন সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। একটি দল কেন দ্রæত নির্র্বাচন চায় বুঝে আসছে না। দু’দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এ ধরনের বক্তব্যে তাদের বিভাজনের বিষয়টি এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর গত ৮ আগস্ট রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্র্তীকালীন সরকার। এ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি উঠেছে সর্বস্তরে। শুরুতে সরকারকে তিন মাসের সময় দেওয়ার কথা বললেও পরে বিএনপির নেতারা জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা জানান। তবে বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী তাড়াহুড়ো না করে টেকসই সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে চায়। এসব ছাড়াও এখন আরো কিছু ভিন্ন ইস্যু এতে যোগ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের বিষয়, বিভিন্ন সেক্টরে নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শের লোককে বসানো। এসব নিয়েও জামায়াত এবং বিএনপির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রশাসন, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা সরে যাচ্ছেন। সেসব জায়গায় নিজস্ব লোকের পদায়ন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেও এক ধরনের নীরব মনোমালিন্য চলছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ নিয়ে এই জটিলতা দেখা দেয় গত মাসে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনা অনুগত ব্যক্তিদের ভিসি-প্রোভিসিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনে বেশির ভাগই জামায়াত অনুসারীদের বসানো হচ্ছে। এমনকি প্রশাসনে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবসহ বিভিন্ন কর্পোরেশন, সেক্টরে জামায়াত অনুসারীদের সুকৌশলে বসানো হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর বিএনপির বিরুদ্ধে নানা মহলে দখলবাজি ও চাঁদবাজির অভিযোগ উঠলেও জামায়াতে ইসলামী এসব বিষয় অত্যন্ত সুকৌশলে মোকাবিলা করছে। অথচ জামায়াত অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিএনপির সাধারণ কর্মীরা হয়তো কোনো কোনো এলাকায় বাসস্ট্যান্ড, বাজার বা ফুটপাথ দখল করার চেষ্টা করেছে। এসব বিষয় মিডিয়াতে ফলাও করে এসেছে। অথচ জামায়াত ব্যাংক, হাসপাতাল এসব দখল করছে সেসব বিষয় কেউ জানতেও পারছে না। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, এস আলমের দখলে থাকা ৯টি ব্যাংকের মধ্যে ইতোমধ্যে ৬টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এখন জামায়াতের হাতে। এ ছাড়া কয়েকটি হাসপাতালও এখন জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। অন্যদিকে প্রশাসনেও জামায়াতে ইসলামী তাদের মতাদর্শের লোকদের চুপিসারে পুনর্বাসন করছে। ইসলামী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন মাদরাসার কমিটিগুলোতেও জামায়াত প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে, যা কেউ টেরই পাচ্ছে না। এসব বিষয় নিয়ে জামায়াতের সাথে বিএনপির দূরত্ব দিন দিন বাড়ছে।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে দূরত্বের বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে বিএনপির জনসমর্থন ৭০ শতাংশ হলে জামায়াতের সেটা ১০ শতাংশ হবে। কিন্তু হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট সেনাপ্রধান ক্যান্টনমেন্টে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ এবং বৈঠকের পর গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে প্রথমে জামায়াতের নেতাদের নাম উল্লেখ করেছেন। বিএনপির মতো জনসমর্থিত দলের নেতার নাম পরে উচ্চারণ করেছেন। এটা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করছেন। এ ছাড়া হঠাৎ করে কিছু সংগঠন জনমত জরিপের নামে এক-দেড় হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলে যে তথ্য তুলে ধরছেন তাতেও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ওই সব জরিপে এমন তথ্য দেয়া হয় যেন বিএনপি ও জামায়াতের জনসমর্থন কাছাকাছি। অথচ মাঠের চিত্র একেবারে ভিন্ন। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেছেন, মূলত বিএনপিকে ঠেকানোর জন্য ভারত মাঠে নেমেছে। সে কারণে বিএনপিকে যাতে আগামী নির্বাচনে ঠেকানো যায় সে লক্ষ্যে জামায়াতকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে নেপথ্যে থেকে।
জানা গেছে, গত বছর ১৪ আগস্ট মাওলানা দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে বিএনপির শোক এবং তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের সাজার প্রতিবাদে জামায়াতের বিবৃতির পর দুই দল পরস্পরের কাছাকাছি আসতে শুরু করে। সর্বশেষ জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের সময় তারেক রহমানের জাতীয় ঐক্যের আহŸানে সাড়া দিলে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় হয় বিএনপির। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে উভয় দলের মাঝে মতপার্থক্য তৈরি হয়। বিএনপি নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ জানতে অতিদ্রæত সংলাপের দাবি জানালেও ভিন্ন অবস্থান নেয় জামায়াত। গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত ১৫ বছরে জামায়াতে ইসলামীর ওপর আওয়ামী লীগ সরকার ‘নির্যাতন’ করেছে। তার জন্য প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তার ওই বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় রাজনীতির মাঠে। যদিও একদিন পর পৃথক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান স্পষ্ট করে বলেন, প্রতিশোধ না নেওয়ার মানে হচ্ছে আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অপরাধ যিনি করেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। শাস্তিও হতে হবে।
জামায়াত আমিরের এসব বক্তব্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় বিএনপিতে। গত ২৮ আগস্ট গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি আগেই বলেছি, এটা সুপরিকল্পিত একটা চক্রান্ত। কারণ, আমরা তো এক-এগারোর কথা ভুলে যাইনি। এক-এগারোতে যেটা হয়েছিল, বিরাজনীতিকীকরণের প্রচেষ্টা। যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে, এরা সরকার চালাতে পারবে। তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তাভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আমাদের লড়াইটা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সেটার জন্যই তো নির্বাচন। আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এতদিন লড়াই করেছি। জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার যে বাতিল করা হলো, এর জন্য ওই দলগুলো মিলেই তো আমরা আন্দোলন করেছি। অনেককে নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। এমনকি তাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ওই বিষয়কে বাদ দিয়ে আমি তো অন্য রাজনৈতিক চিন্তা এ মুহূর্তে করব না।
গত ৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায় বিএনপির এক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি জামায়াতে ইসলামীর নাম উল্লেখ না করলেও দলটির আমিরের বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে দেখেছি কিছু রাজনৈতিক দল একটি প্রতিবেশী দেশের ফাঁদে পা দিয়েছে। সে কারণে তারা বিভ্রান্তি ছড়ায়, এ রকম কিছু কথাবার্তা বলছে। এমন অবস্থায় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকারও আহŸান জানান তিনি। এ ছাড়া জামায়াতের আমিরের এসব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জামায়াতের বর্তমান যে রাজনৈতিক কর্মকৌশল তা পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসনের নতুন পথ তৈরি করতে পারে। তাদের মতে, জামায়াত অতীতেও ভুল রাজনৈতিক কৌশলের কারণে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৮৬ সালে এরশাদের সরকারকে বৈধতা দিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কেয়াটেকার সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সাথে আন্দোলন করে জামায়াত ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এনেছে। জামায়াত এককভাবে ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র তিনটি আসনে জয়লাভ করেছে। অথচ জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে জামায়াত ১৭টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। সংস্কারের পর এবারও নির্বাচন এক বছর বা দুই বছর যত সময় পরেই হোক না কেন বিএনপির বিকল্প জনগণের সামনে আর কেউ নেই। রাজনীতির মাঠে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। ফাঁকা জায়গায় একটি বড় শক্তি হিসেবে রাজনীতিতে সামনে আসার লক্ষ্যে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াত। এককভাবেই নির্বাচন করে তাদের শক্তি জাহির করতে চাচ্ছে। যদি এমনটা হয় তাহলে সেটা হবে অবারও ভুল। অনেকে মনে করছেন জামায়াত এ ব্যাপারে ভারতের ফাঁদে হয়তো পা দিতে চলেছে। ভারত বাংলাদেশের বন্ধু নয়, এটা বারবার প্রমাণ হয়েছে। অতীতের মতো এবারও ভারত তাদের মিত্র এদেশে গণহত্যাকারী গণধিকৃত শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সব খুনিকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। সেখানে বসে তারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত তাদের পুনর্বাসনের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। এ বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট। ভারতের এই ষড়যন্ত্রে জামায়াত শরিক হচ্ছে এমনটি অনেক ধারণা করছেন। কারণ জামায়াত এতদিন ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও এখন হঠাৎ করে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক গড়ার কথা বলছে। এতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে এক ধরনের সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রাহমান মনে করেন, রাজনৈতিক দলের ভিন্নতা থাকতেই হবে। তবে যে উদ্দেশ্যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, সেই বৃহত্তর লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আওয়ামী লীগ যখন প্রতিপক্ষ ছিল, তখন বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে একটা জোট ছিল। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ না থাকায় এখন ভিন্ন সমীকরণে এই মতপার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে সেটা যেন আবার শত্রæতার পর্যায়ে না যায়। তাহলে এই বিভাজন অন্য কাউকে সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াত ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দল। তাদের মতাদর্শ আলাদা। তাই তাদের রাজনীতিও আলাদা। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য তাদের সঙ্গে আমাদের জোট হয়েছিল। এখন আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। তাই এ জোটের প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়েছে। আমাদের মহাসচিবও বলেছেন যে, তাদের সাথে এখন আর আমাদের জোট নেই।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল বলেন, বিএনপি মহাসচিব জোট নিয়ে যে কথা বলেছেন সেটার ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারবেন। তবে বিএনপি জামায়াতের জোট সেই ২০২২ সাল থেকেই নেই। এরপর যুগপৎ আন্দোলন হয়েছে। আমরা মনে করি, বিএনপির সঙ্গে আমাদের কোনো দূরত্ব নেই। আমাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন একসঙ্গে করেছি। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আমাদের এই ঐক্য বজায় রাখতে হবে। তা না হলে ফ্যাসিবাদীরা সুযোগ নিতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের সবারই সজাগ থাকতে হবে।ইনকিলাব
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com