ডেস্ক রির্পোট:- শ্রমিক অসন্তোষ, আন্দোলনে ওষুধ শিল্প কারখানাগুলো উত্তাল। গত রবিবারও ২০টি কারখানায় বন্ধ ছিল ওষুধ উৎপাদন। শ্রমিকদের নানা দাবির মুখে কারখানাগুলোয় জিম্মি হয়ে পড়েছেন মালিক ও কর্মকর্তারা। আন্দোলন, ভাঙচুরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে দেখা দিচ্ছে ওষুধ সংকটের শঙ্কা। ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি এস এম শফিউজ্জামান বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে ওষুধ কারখানাগুলোয় লাগাতার শ্রমিক আন্দোলন হচ্ছে। কর্মকর্তাদের জিম্মি করে অযৌক্তিক দাবি করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ওষুধ শিল্প ধ্বংসে সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়ছে। বিদ্যুৎ, জ্বলানির দাম বেড়েছে। এমন অবস্থায় শ্রমিকদের দাবি মেনে নিলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। সংকট উত্তরণে আমরা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনে ওষুধ তৈরি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দেশের বাজারে জরুরি ওষুধের সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার পর দু-এক দিন কাজ করেছেন। আবার অন্য গ্রুপ নতুন দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছে। এ রকম অস্থিরতার কারণে গত রবিবারও হেলথকেয়ার, রেনেটাসহ ২০টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল।’
ওষুধ শিল্পের এ অস্থিরতা ও কারখানার নিরাপত্তা চেয়ে ৩ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি। সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকরা নানা অযৌক্তিক দাবিতে আইনবহির্ভূতভাবে আন্দোলন ও ভাঙচুর করছেন। অনেক কারখানায় কর্মকর্তাদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন এবং জিম্মি করে রেখেছেন। এতে কারখানায় উৎপাদনকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। তাতে একসময় দেশে ওষুধের সংকট দেখা দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রধানত তিনটি বিষয় নজরে আনতে চাই। এক. দেশের ওষুধ শিল্প খাতে গত ৫০ বছরে এ ধরনের কোনো শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়নি। তাহলে এখন হঠাৎ করে কেন অসন্তোষ হচ্ছে। দুই. কয়েক দফায় শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি মেনে নেওয়া হলেও আন্দোলন কেন থামছে না। তিন. দাবি আদায়ের নামে বিভিন্ন কারখানায় দীর্ঘ সময় ধরে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখা হচ্ছে।’ এ বিষয়গুলো বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি। হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ‘২৭ আগস্ট আমার কারখানায় প্রথমে শ্রমিকরা যেসব দাবি তোলেন, তা সব মেনে নিয়েছি। তারপর আবার নতুন দাবি নিয়ে আরেক দল এসেছে। এখন আগের চেয়েও বেশি বেতন চাচ্ছে। এভাবে হলে আমাদের প্রতিষ্ঠান চলবে কীভাবে?’ ওষুধ শিল্প মালিকরা বলছেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে তারা বাধ্য। কিন্তু কর্মকর্তা ও উৎপাদনকারীদের জিম্মি করে তাৎক্ষণিক দাবি আদায় কখনো সম্ভব হয় না। শ্রমিকরা বলছেন, এখনই তাদের দাবি মেনে লিখিত দিতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান দাবি মেনে নেওয়ার পর আবার অন্য দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছেন তারা। এ শিল্প ধ্বংস করতে এ ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। এ শিল্পে কর্মরতদের কারখানাভেদে বেতনকাঠামো ভিন্ন রয়েছে। তবে দীর্ঘদিনে এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা পড়েননি।
ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ দেশেই তৈরি হচ্ছে। দেশি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা এবং ওষুধ শিল্পের প্রবৃদ্ধি স্থানীয় ওষুধের বাজার করেছে সমৃদ্ধ। বৈশ্বিক বাজারেও অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় এখন ওষুধের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের যাত্রা পঞ্চাশের দশকে। বর্তমানে সারা দেশে ২৯৫টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে প্রায় ৪৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল। এ ছাড়া দেশে ২৮৪টি ইউনানি, ২০৫টি আয়ুর্বেদিক, ৭১টি হোমিওপ্যাথিক ও ৩১টি হারবাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন করছে। অধিদপ্তরের গত ১০ বছরের রপ্তানির হিসাব বলছে, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩২ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। ২০২২ সালে ৬ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকার ওষুধপণ্য রপ্তানি করেছে দেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু লাগাতার আন্দোলন, ভাঙচুরে হুমকির মুখে পড়েছে এ খাত।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com