খাগড়াছড়ি:- ভয়াবহ বন্যার কবলে পুরো খাগড়াছড়ি। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দীঘিনালায় অপরিবর্তিত রয়েছে। সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির সাথে রাঙামাটির সাজেক ও লংগদু সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে অধিকাংশ খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়ক। ফলে সাজেকে আটকা পড়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক পর্যটক। দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালি ইউনিয়নের এখনো পায় ৩০ পানি নিচে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকাল থেকে কবাখালি, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ সাজেক সড়কের একাধিক অংশ পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে পর্যটকবাহী যানবাহনসহ সব ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিরিন আক্তার জানান, “সাজেক সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। এতে সাজেকে আটকা পড়েছেন অন্তত ২৫০ জন পর্যটক।
এদিকে দীঘিনালার কবাখালিতে আটকা পড়া পর্যটক আমিনুল ইসলাম ও ওয়াহিদ কবির বলেন, আমরা ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছি। বন্যার খবর জানতাম না। এখন আটকা পড়েছি। সড়কের দুই তিন জায়গায় পানি উঠেছে। এতো দূর বাইক জার্নি করে আসার পর সাজেক যেতে পারছি না। আজ (বুধবার) দীঘিনালায় অবস্থান করব। পানি কমলে সাজেক যাব।”
অপর দিকে খাগড়াছড়ির বুক দিয়ে প্রবাহিত চেঙ্গী নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। শহর তলীর এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও কয়েক দফা বন্যায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ এখনো কমেনি।
মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে টানা বর্ষণে ৪ দফা বন্যা দেখা দেওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মুসলিম পাড়া, আরামবাগ, শান্তিনগর, বাস টার্মিনাল, মেহেদী বাগ, বটতলী, টিটিসি এলাকা,উত্তর ও স্বনির্ভর, কলেজ পাড়া, দক্ষিণ গঞ্জপাড়া, মাটিরাঙার তবলছড়ি,তাইন্দং, তবলছড়ি, পানছড়ির লোগাং নিম্নাঞ্চল, দীঘিনালার মেরং বাজার, কবাখালী ও রামগড় উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো পরিবার।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য খাগড়াছড়ি পৌরসভার জন্য ১২ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৯টি উপজেলার ৪শত মেট্রো-টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলায় ৯৮ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পানিবন্দি এলাকার মানুষদের জন্য শুকনো খাবার, মোমবাতি, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়িতে বন্যা দুর্গত এলাকায় জেলা বিএনপি’র সভাপতি ওয়াদুদ ভুঁইয়ার পক্ষে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকাল থেকে রান্না করা ও শুকনো খাবারসহ বিতরণ করছে দলীয় নেতাকর্মীরা।
খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার জানান, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর স্থানীয় বিনা ভোটের জনপ্রতিনিধিরাও পালিয়ে গেছে। ওয়াদুদ ভুঁইয়ার নির্দেশে জেলা বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রত্যেক দুর্গত মানুষে হাতে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে।
মাত্র তিন মাসের পর পর চার দফা বন্যায় দিশেহারা মানুষ। বন্যায় ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। নষ্ট হয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। বন্যা দুর্গতরা জানান, বিগত ৪০ বছরেরও তারা এমন পানি দেখেননি।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com