বন্ধ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪
  • ৭৯ দেখা হয়েছে

অফিস-আদালতসহ সবকিছুই সচল প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ও এইচএসসি-আলিম পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী সভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ :: নিশ্চিত সেশন জটে শিক্ষার্থীরা :: সিলেবাস শেষ না হওয়ার আশঙ্কা মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে

ডেস্ক রির্পোট:- কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শিক্ষকদের কর্মবিরোতীর কারণে চলতি মাসের শুরু থেকেই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে কোটা সংস্কার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলোতেও। গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ হামলা করলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৬ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও খালি করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন ও সহিংসতায় অসংখ্য শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হয়েছেন। এর প্রতিবাদে এখনো আন্দোলন থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়নি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে গত সপ্তাহ থেকেই শিল্প-কারখানা ও সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত সচল হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার বিষয়ে এখনো কোন সুস্পষ্ট তথ্য জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আবার কোনো সমস্যা হয় কি না, সেটিই তাদের ভাবনার বিষয়।

এর ফলে বন্ধ হয়ে গেছে চলমান এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা, মাধ্যমিক পর্যায়ের ষান্মাসিক পরীক্ষাও। এইচএসসি-আলিম পরীক্ষা শেষ হয়ে ফলাফল হওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা শেষে ক্লাস শুরুর আগেই তাই সেশনজটে পড়বেন পরীক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হবে না মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে। আর উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের টানতে হবে অচেনা সেশনজট। শিক্ষার্থী অভিভাবকরা বলছেন, সবকিছু সচল হচ্ছে এখন কেবল বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তারা বলছেন, দিনের পর দিন এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে একদিকে যেন উচ্চশিক্ষায় তৈরি হবে সেশনজট, অন্যদিকে লম্বা ছুটিতে হাপিয়ে উঠবে ঘরবন্দি শিশু শিক্ষার্থীরা। তাই অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আজ মন্ত্রী পরিষদের সভায় আলোচনা হতে পারে। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্টরা সার্বিক বিষয় তুলে ধরতে পারেন। সেখান থেকেই পরবর্তী নির্দেশনা আসতে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ এই ৪ জেলা ব্যতীত বাকী ৬০ জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব করা হবে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা পুনরায় চালুর বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের শুরুতে তীব্র শীতের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুদিন বন্ধ রাখা হয়, পরবর্তীতে রমজান ও ঈদুল ফিতর, তাপপ্রবাহ, ঈদুল আযহা এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেয়া হয়। যদিও রমজানের ছুটির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যাপক নাখোশ ছিলেন। পরবর্তীতে সেই ছুটির বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সে সময় রমজান মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না রাখার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ক্ষতির বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি সেই সময়ের ক্ষতি পূষিয়ে নেয়ার জন্য শনিবারের ছুটিও বাতিল করেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সেই সময়ে মন্ত্রীর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সে সময় রমজান মাসে সকলেই চাইছিল রোযার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হোক। কিন্তু মন্ত্রী তাতে রাজী হননি। আর এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে তাদের কোন তাড়া নেই।

তরিকুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, রমজানে বন্ধের সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সিলেবাস শেষ করা যাবে না, শিক্ষাসূচি প্রতিপালন সম্ভব হবে না। তাহলে এখন যে দিনের পর দিন বন্ধ রাখা হচ্ছে তাতে কি শিক্ষার্থীদের লাভ হচ্ছে? নাকি তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, সবকিছুই সচল করা হচ্ছে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ!

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এখন যে ছুটি যাচ্ছে, শিক্ষাবর্ষের এই সময়টা লেখাপড়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এখনো অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শেষ করা যায়নি। বিভিন্ন শ্রেণির পরীক্ষা স্কুলগুলো নিচ্ছে। এই বন্ধের জন্য বিলম্বিত হচ্ছে। যত বেশি ছুটি থাকবে, পরীক্ষা সম্পন্ন করে আবার ক্লাস নিতে হবে। নতুন কারিকুলাম, ক্লাসগুলোয় শেষ করতে হবে। সামনে ডিসেম্বরে আবার বার্ষিক পরীক্ষা। এখন ক্লাসগুলো বন্ধ। এগুলো পুষিয়ে নিতে একটা কৌশল তো সরকারকে নিতে হবে। সে জন্য বাড়তি ক্লাস নিতে হবে।

সরকার সিদ্ধান্ত নিলে ক্লাসের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, সরকার হয়তো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিচ্ছে না। যখনই ঘোষণা দেবে, আমরা নতুন করে ক্লাসরুটিন করে বাচ্চাদের বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।

ভর্তির আগেই সেশনজটে থাকবে এইচএসসি-আলিম শিক্ষার্থীরা: গত ৩০ জুন থেকে শুরু হয়েছে চলতি বছরের এইচএসসি-আলিম ও সমমানের পরীক্ষা। পরীক্ষার শুরুতে বন্যার কারণে কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। কিন্তু ছাত্র আন্দোলন ঘিরে অচলাবস্থায় পরবর্তীতে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু করতে না পারা, স্থগিত পরীক্ষা শেষ হতে দেরি হওয়া, ফলাফল বের হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর প্রতিটি প্রক্রিয়ায় এর প্রভাব পড়বে। এতে ভর্তির আগেই সেশনজটে পড়ছে এই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এইচএসসির পাশাপাশি বন্ধ আছে মাধ্যমিকের ষান্মাসিক পরীক্ষা, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা। একই অবস্থা পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০ কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলসমূহের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছ থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে বিভিন্ন হলের কক্ষগুলো সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো: নূরুল আলম জানান, গত কয়েক দিনের অরাজক পরিস্থিতিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে আবাসিক হলগুলো শিক্ষার্থীদের বসবাসের উপযুক্ত করে ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হবে। সরকারও চায় শিক্ষার্থীরা দ্রুত পড়ার টেবিলে ফিরে যাক। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম চালু করব।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কবে খুলবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। তবে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি।

ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, সরকার এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়নি। তাই আমাদেরও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আগেই অনলাইনে ক্লাস চালুর বিষয়টি প্রস্তাব করেছিল। পরবর্তীতে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেটি নিয়ে আর কেউ কথা বলেনি।

শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা এই মুহূর্তে বিবেচনা করতে পারছি না।

মন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি এখন কেবল তাঁদের ওপর নির্ভর করছে না। এখন সবার আগে জননিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পরিস্থিতির প্রতিবেদন আনা হচ্ছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions