ডেস্ক রিপোট:- পুলিশের এএসআই মোহাম্মদ মোক্তাদির (৪৮) গত ২০ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর মাতুয়াইলের বাসা থেকে পল্টন ট্যুরিস্ট পুলিশ সদরদপ্তরের উদ্দেশে বের হন। পথিমধ্যে যাত্রাবাড়ী রায়েরবাগ এলাকায় পৌঁছলে বিক্ষোভকারীরা তাঁকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এর পর তাঁর মরদেহ রায়েরবাগ ফুট ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে হামলাকারীরা। মোক্তাদিরের মেডিকেল কলেজপড়ুয়া ছেলে মাহফুজ রহমান তনয় বাবার মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলছিলেন, ‘তোরা আমার বাবাকে মেরেই যখন ফেললি, তখন মরদেহ ব্রিজে ঝুলিয়ে কেন কষ্ট দিলি?’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে ফুট ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর দুই পায়ে রশি বেঁধে মাথা নিচের দিকে রাখা হয়েছে। আর ব্রিজের নিচে বহু মানুষ বিক্ষোভ করছে। পরে জানা যায়, সেই হতভাগ্য ব্যক্তিই মোক্তাদির।
মাহফুজ গতকাল বলেন, ‘বাসা থেকে বের হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ডিএমপির কদমতলী থানা থেকে এসআই আলামিন ফোন করে বাবার মৃত্যুর খবর জানান। একটা সুস্থ মানুষ বাসা থেকে বের হলো। কিছুক্ষণ পরেই এলো তার মৃত্যুর খবর! ওই পুলিশ অফিসার জানান, বিক্ষোভকারীরা বাবাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। বাবার এমন আকস্মিক মৃত্যুর খবরে আমার মা নিরা আক্তার অজ্ঞান হয়ে পড়েন।’ পরে মা ও বোনকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে যাই কদমতলী থানায়। তার আগেই পুলিশ তাঁর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে নিয়ে যায়।
মাহফুজ বলেন, ‘থানার একজন অফিসারের ফোনে ছবি দেখে বোঝার উপায় ছিল না– এটা আমার বাবা। একাধিক আঘাতের চিহ্ন এবং মাথার খুলি তিন টুকরো। এটা মেনে নেওয়ার মতো না। মানুষ হয়ে মানুষকে এভাবে মারতে পারে? সারাজীবন বাবা মানুষের জন্য কাজ করলো। আজ সেই মানুষের হাতেই নৃশংসভাবে খুন হলো!’
চলতি মাসের শুরু থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। ১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে পুলিশ, বিজিবি ও ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এর পর আন্দোলন সহিংসতায় মোড় নিতে থাকে।
স্মৃতিচারণ করে মাহফুজ বলেন, ১৯ জুলাই অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। কিন্তু আন্দোলনের কারণে রাস্তায় কোনো গাড়ি ছিল না। সেদিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বাসায় চলে আসেন বাবা। ওই দিন শুক্রবার থাকায় পরিবারের সবাই মিলে অনেক আড্ডা দেন। কে জানত, এটাই হবে শেষ পারিবারিক আড্ডা! ঘটনার আগের রাতে বাবাকে বলি, ‘এত ঝামেলার মধ্যে কী করে অফিসে যাবেন? বাবা হাসতে হাসতে বলেন, তোমরা পড়ালেখা করো। আমার অসুবিধা হবে না।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাহফুজ বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার কাছে শুনছি, আমার বাবাকে নাকি সাপের মতো পিটিয়ে মেরেছে। তার পর যাত্রাবাড়ী রায়েরবাগ এলাকায় ফুট ওভারব্রিজে তাঁর মরদেহ ঝুলিয়ে রাখে বিক্ষোভকারীরা। হামলার ভয়ে আমার বাবা বাসা থেকে পুলিশের পোশাক পরেননি। শপিং ব্যাগে পুলিশের পোশাক নিয়ে বের হন। তার পরও ঘাতকদের হাত থেকে বাঁচতে পারলেন না!
মোক্তাদির পরিবার নিয়ে ঢাকায় মাতুয়াইল এলাকায় থাকতেন। তাঁর দুই সন্তানের মধ্যে মাহফুজ বড়। তিনি উত্তরার একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তাঁর বোন নালিহা তাবাসুম স্থানীয় স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। মোক্তাদিরকে ২১ জুলাই ভালুকার আঙ্গারগাড়া গ্রামে দাফন করা হয়েছে।সমকাল
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com