ডেস্ক রির্পোট:- ঢাকার চারটি আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যের জন্য সভা ডাকা হয়েছিল গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে। তবে সে সভায় ঐক্যের বদলে বিরোধ বেড়েছে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে। দুই পক্ষের বাগবিতণ্ডায় সভা সংক্ষিপ্ত করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা ঢাকা-১১, ১৪, ১৫ ও ১৬ সংসদীয় এলাকার থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা এবং সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি সভা ডাকেন। সভার উদ্দেশ্য ছিল, কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময়ে ঢাকায় দলের নেতাকর্মীদের ব্যর্থতার বিষয়টি মূল্যায়ন ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনা। তবে বৈঠকটি শুরুর আধঘণ্টার মধ্যেই দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের হট্টগোল শুরু হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতা জানান, সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিল। কোটাবিরোধী আন্দোলনে মিরপুরে তাণ্ডবের সময়ে কার নেতাকর্মীরা মাঠে ছিল তা নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়।
একাধিক সূত্র মতে, সভায় মিরপুরের একাধিক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা মিরপুর ১০ নম্বরে তাণ্ডবের সময়ে তাঁরা মাঠে ছিলেন বলে বক্তব্য দেন। তাঁদের বক্তব্যে মাঠে থাকা নেতাদের নামের মধ্যে মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নাম ছিল না।
এতে ক্ষুব্ধ হন নিখিলের অনুসারীরা। তারা হৈচৈ শুরু করে। এ সময়ে নিখিল তাঁর বক্তব্যে মহানগরের নেতাদের অনেকে মাঠে ছিলেন না বলে উল্লেখ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন এস এম মান্নান কচি।
নিখিলকে উদ্দেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বলেন, ‘মহানগর মাঠে ছিল না তো কি তুমি ছিলা? ১০ নম্বরে যা করেছে মহানগরই করেছে।
’ এরপর দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে হট্টগোল বেড়ে যায়।
এ সময়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নিখিলের উদ্দেশে বলেন, ‘তুমি তো মিটিং বানচাল করতে এসেছ।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আসলে হট্টগোলের কারণে মিটিং বানচাল হয়ে যায়। কয়েকজন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, যাঁদের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল তাঁদের বেশির ভাগই সুযোগ পাননি। বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। এরপর সভা শেষ হয়ে যায়।’
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সভায় ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার ও ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা তাণ্ডবের সময়ে মাঠে না থাকায় সমালোচনা করেন একাধিক নেতা। আন্দোলনের তাণ্ডবের সময়ে ইলিয়াস মোল্লার বিদেশে অবস্থান করা নিয়েও সভায় কথা ওঠে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে পারেননি। এ কারণে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নির্দেশনায় ঢাকার থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা-১৩ নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে মোহাম্মদপুরে তাণ্ডবের সময় দলের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়তে না পারার বিষয়টি আলোচনা হয়। সেখানেও একাধিক কাউন্সিলর নিজে নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিলেন বলে উল্লেখ করে অন্য নেতাদের ওপরে ব্যর্থতার দায় চাপানোর চেষ্টা করেন।
বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, যাঁরা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের নেতাদের আশপাশে সব সময় ছিলেন, সেসব নেতাদের রাজপথে দেখা যায়নি। এ সময় মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলানগর থানার ২৭টি ইউনিট আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এসব ইউনিটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা আন্দোলন মোকাবেলায় সরাসরি অংশ নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।কালের কণ্ঠ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com