ডেস্ক রির্পোট:- চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকলেও নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণকারী সন্ত্রাসীদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। আন্দোলনে নিষ্ঠুরতম হামলায় যারা আহত হয়েছেন তারা বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছেন না। মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। পক্ষান্তরে যারা প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিঁয়ে গুলি ছুঁড়েছে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে কোটা সংস্কারবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ-শঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন। তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, নাশকতাকারী ও গুলি বর্ষণকারী কাউকেই ছাড় দেওয়াহ হবে না।
ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নগরীর মুরাদপুর ও ষোলশহরে ১৬ জুলাই এবং বহদ্দারহাট এলাকায় ১৮ জুলাই পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও শিক্ষার্থীদের সাথে ত্রিমুখি সংর্ঘষ হয়। এসব সংর্ঘষে ঘটনাস্থলে পাঁচ জনসহ মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো কয়েকশ। সংঘর্ষ চলাকালে ওই দুটি এলাকাতেই কয়েকজন যুবককে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি বর্ষণ করতে দেখা যায়। তাদের বেশির ভাগেরই মাথায় ছিল হেলমেট। কারো হাতে ছিল ভারী অস্ত্র। সংঘর্ষ চলাকালেই ওইসব অস্ত্রধারীদের গুলি বর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরদিন দেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে ওই অস্ত্রধারীদের ছবি প্রকাশিত হয়। কোন কোন মিডিয়া তাদের নাম ও দলীয় পরিচয়ও প্রকাশ করে। তারা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
তবে ঘটনার এক সপ্তাহের বেশি সময় পরও তাদের কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে অস্ত্রধারীরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে সিএমপির কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম গতকাল বলেন, শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই পুলিশ বেশি মনোযোগী হয়েছে। আর এই কারণে চট্টগ্রামে নাশকতাকারীরা কোণঠাসা ছিল। সংর্ঘষ চলকালে কারা কিভাবে হামলা ও নাশকতা করেছে তার সব ফুটেজ ও তথ্য পুলিশের হাতে রয়েছে। এসব ধরে ধরে সবাইকে চিহ্নিত করা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ থাকায় সন্ত্রাসী অপরাধীদের ধরার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, জনজীবন এবং সেইসাথে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ আন্তরিকতা, দক্ষতা ও পেশাদারীত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও থানায় আরো একটি মামলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা ৫শ’ থেকে ৭শ’ জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বহদ্দারহাটে সংঘর্ষ চলাকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে হামলা, ভাঙচুর, হত্যাচেষ্টা, মোটর সাইকেল ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ব্যবহারের অভিযোগও আনা হয়েছে। এনিয়ে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মোট ১৬টি মামলা হলো। এসব মামলায় আসামি প্রায় ৩১ হাজার। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নগরীর ১৬টি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো ৪৬ জনকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছেন সিএমপির এডিসি (পি আর) কাজী মো. তারেক আজিজ।
তিনি জানান, এ নিয়ে গত কয়েকদিনে নগরীতে গ্রেফতারের সংখ্যা ৩৭৩ জন। জেলায় ১১টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে তিন শতাধিক আন্দোলনকারীদের।
জানা গেছে, আসামিদের ধরতে পুলিশ রাতে দিনে সমানে শিক্ষার্থীদের বাসা-বাড়িতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাসা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেও পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের দায়ের করা এসব মামলায় আসামিদের প্রায় সবাই অজ্ঞাতনামা। আর এই সুযোগে পুলিশ যাকে পাচ্ছে তাকে ধরে এসব মামলায় চালান দিয়ে দিচ্ছে। পুলিশের ভয়ে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে গত কয়েক দিনে নগরীতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের সাড়ে তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশী অভিযানের মুখে নেতাকর্মীরা এখন বাড়িঘর ছাড়া। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ পুলিশ নেতাকর্মীদের ধরতে ঘরে ঘরে হানা দিচ্ছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি তারা অভিযুক্তদের ধরছে। দলীয় পরিচয়ে কাউকে হয়রানি করছে না।ইনকিলাব