ডেস্ক রির্পোট:- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে গতকাল সোমবার কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্রলীগের। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকেই প্রথমে ছাত্রলীগের ওপর হামলা হয়। এতে ছাত্রলীগের অন্তত ২৫ জন আহত হন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ঢাবির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল দখলে নিয়ে হামলা চালান। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হলে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে ঢাবি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় অন্তত ২২০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ আশপাশের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ঢাবি ছাড়াও বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হামলা-সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। সবমিলিয়ে এ ঘটনায় প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ঢামেকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আহত আন্দোলনকারীদের ওপরও ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। উল্টো ছাত্রলীগ দাবি করেছে, তাদেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। আন্দলনকারীদের হামলায় নিউমার্কেট থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হাসান ফাহাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর অবস্থায় ঢামেকে ভর্তি আছেন বলে জানা গেছে। এদিকে কোটা সংস্কারসহ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গত রোববার মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধীদের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যকে ‘অপমানজনক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহার এবং জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে আইন প্রণয়নের একদফা দাবিতে গতকাল দুপুরে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের সূত্রপাত মূলত ঢাবির বিজয় একাত্তর হল থেকে। দুপুর সাড়ে ১২টায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু করেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের অধীনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
এ সময় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল ও সমাবেশে আনতে যায়। জিয়া, বঙ্গবন্ধু হল ঘুরে বেলা আড়াইটার দিকে তারা বিজয় একাত্তর হল এলাকায় আসেন এবং হলের ভেতরে ঢুকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেন। এ সময় হলটির ভেতরে অবস্থান করা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও তাদের দিকে জুতা, বোতল এবং ইটের টুকরা নিক্ষেপ করতে থাকেন। তখন কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীও পাল্টা ছাত্রলীগ নেতাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে এমন খবর শুনে টিএসসির সমাবেশস্থল থেকে আন্দোলনকারীদের বাকি অংশ মিছিল নিয়ে বিজয় একাত্তর হলের দিকে আসে। এ সময় অনেকের হাতেই লাঠিসোটা দেখা গেছে। তারা একাত্তর হলের সামনে আসতেই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী দুজন তখন মারধরের শিকার হন। হলের ভেতরে থাকা একাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু হল, জিয়াউর রহমান হল, জসীমউদদীন হল, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রড, লাঠি, লোহার পাইপ, বাঁশ, হকিস্টিক, স্টাম্প নিয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। অনেক নেতাকর্মী তখন হেলমেট পরিহিত ছিলেন। আন্দোলনকারীরাও সংগঠিত হয়ে ছাত্রলীগকে ফের ধাওয়া করেন। এভাবে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।
একপর্যায়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মল চত্বর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে ভিসি চত্বর ও আশপাশে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। তখন তারা সামনে যাকে পেয়েছেন তাকেই মেরেছেন। ছাত্রলীগের ধাওয়ায় অনেকে আটকা পড়ে বেশি মারধরের শিকার হয়েছেন। এ সময় ফুটপাতে অনেকের ছেঁড়া স্যান্ডেল ও রক্ত পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ছাত্রলীগের ধাওয়ায় আন্দোলনকারীরা পলাশী ও নীলক্ষেতের দিকে চলে গেলে ভিসি চত্বরে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এবং ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণসহ আশপাশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা। কয়েক হাজার ছাত্রলীগ নেতাকর্মী পুরো ক্যাম্পাসে শোডাউন দেন। বিকেল ৫টার পরে ঢাবির শেখ রাসেল টাওয়ার এলাকায় কিছু আন্দোলনকারীকে ধরে ফের মারধর করে ছাত্রলীগ।
সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, বিজয় একাত্তর হলে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এসে হামলা করেছে। একপর্যায়ে বিভিন্ন হল থেকে নেতাকর্মী, ছাত্রীরা বের হয়ে আসেন এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।
এদিকে ছাত্রলীগের হামলায় আহত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ঢামেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে আহত শিক্ষার্থীদের যারা ঢামেকে নিয়ে গেছেন, তাদের অনেককেই ধাওয়া দিয়ে বের করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দ্বিতীয় দফায় ঢামেকের জরুরি বিভাগে অতর্কিত লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান ছাত্রলীগের ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মী। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অন্য রোগীদের মধ্যে।
ছত্রভঙ্গ হওয়া আন্দোলনকারীরা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, অমর একুশে হল ও এফএইচ হলে অবস্থান নেন। সেসময় শহীদুল্লাহ হলের বাইরে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দুই পক্ষ নিজেদের অবস্থান থেকে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় অন্তত ১৫টি ককটেল এবং গুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে। তবে কারা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বা গুলি ছুড়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সময় যত গড়িয়েছে, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা থেকে দোয়েল চত্বরে আসা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভিড় তত বেড়েছে। সেখানে হেলমেট পরিহিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইনের সঙ্গে যোগ দেন মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একটু পরে সেখানে আসেন মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকশ সদস্য দোয়েল চত্বরে আসেন। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে তারা শহীদুল্লাহ হল এলাকায় যান। তবে তারা বাইরে অবস্থান নেন। তাদের পেছনে পেছনে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কেউ হলের বাইরে বের হলেই তার ওপর হামলা চালিয়েছেন। রাত ৯টার দিকে সাঁজোয়া গাড়িসহ (এপিসি) দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য শহীদুল্লাহ হলের সামনে থেকে সরে দোয়েল চত্বরের সামনে অবস্থান নেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় এ হামলা করা হয়। রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম (মেঘ), বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ (জিতু), সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আয়শা সিদ্দিকা বৃষ্টি, যুগান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোসাদ্দেকুর রহমান, শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার। এ ছাড়া একটি স্লোগান কেন্দ্র করে জাবির ৪ শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে হেনস্তা ও ফোন তল্লাশি করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ইউনিট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দুই দফায় হামলা চালিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় মাহবুবুর রহমান নামে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং চারজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া আন্দোলনে চবির সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ছাত্রলীগের মিছিলে যুক্ত করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের ৪ নেতাকর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। আহত চার নেতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ, ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার, ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব হাসান ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মনু মোহন বাপ্পা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স হোসেন রাঈল। এর আগে বিকেলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শাখা ছাত্রলীগ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ উল হককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান হাফিজের বিরুদ্ধে। এ সময় তাকে হল বের করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
এ ছাড়া কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের জিরো পয়েন্ট এলাকা অবরোধ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তবে লালমনিরহাটে আয়োজিত মানববন্ধন স্থানীয় ছাত্রলীগের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে।
হামলায় আহত ইডেন ছাত্রী আইসিইউতে: গতকাল সকালে ইডেন মহিলা কলেজের মূল ফটক আটকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে গুরুতর আহত হয়ে শাহিনুর সুমি নামে এক শিক্ষার্থী ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বর্তমানে আইসিইউতে রয়েছেন। ছাত্রলীগের হামলায় সায়মা আফরোজ, সুমাইয়া সাইনা, সানজিদা হক, স্কাইয়াসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রী আহত হয়েছেন।
রোকেয়া হলের ছাত্রীদের ওপর মরিচের গুঁড়া নিক্ষেপ: আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পর আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে গতকাল বিকেলে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীদের ওপর মরিচের গুঁড়া নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। হলের ভেতর থেকে মরিচের গুঁড়া ও পানি নিক্ষেপ করা হলে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই এ কাজ করেছেন।
নাশকতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান ঢাবি প্রভোস্ট কমিটির: কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেলে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি। বৈঠক থেকে সবাইকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে। সভায় কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেগুলো হলো শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে অবস্থান করবেন; প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকরা সার্বক্ষণিকভাবে হলে অবস্থান করবেন; হলগুলোতে কোনো বহিরাগত অবস্থান করতে পারবেন না; যে কোনো ধরনের গুজব ও অপপ্রচার এবং নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছে; কেউ নাশকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ছাত্রলীগের হামলায় সাদা দলের প্রতিবাদ: আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাবি সাদা দল। দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফুর রহমান এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও অধ্যাপক আব্দুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্রলীগের এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় এনে আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আজ বিক্ষোভ-সমাবেশ: ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার পর দোয়েল চত্বরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর পরও কোটা বাতিল না হলে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। নাহিদ বলেন, পরিকল্পিতভাবে বহিরাগতদের এনে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর থাকার পরও বহিরাগতরা কীভাবে হামলা করে? কালবেলা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com