ডেস্ক রির্পোট:- চলমান কোটা আন্দোলনে চট্টগ্রামে দুজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জনের মতো শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকালে দুপক্ষের সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ওয়াসিম আকরাম ও মোহাম্মদ ফারুক। এরমধ্যে ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন। ওয়াসিম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স থার্ড ইয়ারের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়ায়। ওয়াসিম শহরের বহদ্দারহাটে থাকতেন।
অন্যদিকে, গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপের মিস্ত্রি মোহাম্মদ ফারুক (৩২)। নিহত মোহাম্মদ ফারুকের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী।
মোহাম্মদ ফারুকের বাবা মোহাম্মদ দুলাল চট্টগ্রাম মেডিকেলে কান্নারত অবস্থায় বলেন, সে নগরের ষোলশহর এলাকার একটি ওয়ার্কশপের মিস্ত্রি। দুপুরে ভাত খেতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে দোকান খুলতে যাওয়ার সময়ই তার উপর গুলি চালানো হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (এসআই) নুরুল আলম দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মৃত দুজনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে।
দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন মারা গেছেন। এছাড়া ১৫ জনের মতো আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৭ থেকে ৮ জন গুলিবিদ্ধ।
এদিকে, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও (বেরোবি) কোটা আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম আবু সাঈদ। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। নিহত আবু সাইদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টার দিকে রংপুর খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং ফটকের সামনে যায় এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়ে। এরই একপর্যায়ে টিয়ারশেলের সময় আবু সাইদ নিহত হন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করতে থাকে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশ ও ছাত্রলীগকে পাল্টা ধাওয়া করে। এতে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
উল্লেখ্য, দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওইসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।
এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এরপর থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভ করেন কোটাবিরোধীরা। ঢাবি ছাড়াও বিক্ষোভ হয় জাবি, জবি, রাবি, সাত কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কলেজে।
আন্দোলন যখন তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হচ্ছিল ঠিক তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সোমবার (১৫ জুলাই) কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্রলীগের। দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে ঢাবি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় অন্তত ২২০ জন আহত হয় বলে খবর পাওয়া যায়। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ আশপাশের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে চিকিৎসা নেয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের নেতৃত্বে হামলা হয়। একইদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় এ হামলা করা হয়। এরপর ভোর পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। গভীর রাতে ছাত্রলীগের সঙ্গে বহিরাগতরা যোগ দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাধে। হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও সাংবাদিককে মারধর করা হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দুই দফায় হামলা চালায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় মাহবুবুর রহমান নামে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং চার শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া আন্দোলনে চবির সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ছাত্রলীগের মিছিলে যুক্ত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের ৪ নেতাকর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়াও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজসহ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধীদের ওপর ব্যাপক হামলা হয়।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com