ডেস্ক রির্পোট:- গত ২৯ জুন নিখোঁজ হয় বরিশালের বাকেরগঞ্জের একটি মাদ্রাসার ছাত্র ইউসুফ হাওলাদার। এক সপ্তাহ পর অভিভাবকেরা তার সন্ধান পান। ১৩ বছরের এই শিশুটির বাবা আবু জাফর হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লেখাপড়ার চাপে ও বন্ধুর বাসায় গিয়া পলাইছিল।’
ইউসুফ ঘরে ফিরলেও তার নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিটা এখনো ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে ঘুরছে। সেই সঙ্গে আরও অনেক শিশু–কিশোর নিখোঁজের বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ঢুকলেই ফিডে আসছে। বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে এমনটাও বলা হচ্ছে, ‘৪৮ ঘণ্টায় নিখোঁজ ৩৫ শিশু’।
এসব পোস্ট দেখে অনেক অভিভাবকই তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকের মধ্যে ভর করেছে ‘ছেলে ধরা’ আতঙ্ক। তবে ফেসবুকে গতকাল শনিবার ও আজ রোববার নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে আসা ২৫ জনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিখোঁজদের ১৯ জনই ঘরে ফিরেছেন।
পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিখোঁজ হওয়া ২৫ জনের মধ্যে ২১ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। নিখোঁজ হওয়ার পর যারা ঘরে ফিরে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত ১২ জনের পরিবার জানিয়েছে, মূলত মাদ্রাসায় থাকতে অনীহা ও লেখাপড়ার প্রতি ভীতি থেকে তারা নিরুদ্দেশ হয়েছিল।
‘শিশু নিখোঁজ’ গুজব
৪৮ ঘণ্টায় ৩৫ শিশু নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিও গুজব বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। রোববার পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শিশু নিখোঁজ’ গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ তৎপর রয়েছে। কেউ এ ধরনের গুজব ছড়ালে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে শুধু শিশু নিখোঁজ সংক্রান্ত কোনো হালনাগাদ পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য বলছে, চলতি মাসে প্রথম ৭ দিনে ৭৬ জনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জুনে এই সংখ্যা ছিল ২৬০, মে মাসে ১৯৯, এপ্রিলে ২২১, মার্চে ২১৩, ফেব্রুয়ারিতে ২১৭ এবং জানুয়ারিতে ২১০।
কীভাবে ছড়াচ্ছে এত নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি
নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা একাধিক ফোন নম্বরে কথা বলে জানা যায়, কিছু বিজ্ঞপ্তি এক মাস বা তারও আগে পোস্ট করা হয়েছে। নিখোঁজ শিশুটি বাসায় ফিরে এলে পোস্টের মাধ্যমে তা জানানোও হয়েছে। সেগুলোই নতুন করে আবার ছড়ানো হচ্ছে। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বড় ভাই ফায়জুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমার ভাই নিখোঁজ হয়েছিল মে মাসে। ছয় দিন পর সে ঘরে ফেরে। আমরা সেটা পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছি। নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিটা ডিলিটও করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কীভাবে যেন সেটা ছড়াচ্ছে!
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেক বিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দীন শিশির বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের কনটেন্টে মানুষ যখন ইন্টার্যাক্ট করে, তখন ওই টাইপের কন্টেন্টকে ফেসবুক বারবার দেখায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে যখন কোনো বিষয়ে আতঙ্ক ছড়ায়, তখন তারা নিজেরা ওই ধরনের কনটেন্ট বেশি খোঁজে বা ইন্টারেক্ট করে। অর্থাৎ সে নিজে আতঙ্ক থেকে ইন্টার্যাক্ট করছে, আর ফেসবুকের অ্যালগরিদম সেটিকেই কনফার্ম করছে। সে কারণে সেটিকে আরও দেখাচ্ছে। এ কারণেও অনেকের ফিডে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিগুলো বেশি আসছে।’আজকের পত্রিকা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com