ডেস্ক রির্পোট:- ভারত গত নয় মাসে গাজায় ইসরাইলি অপরাধের বিষয়ে অবস্থান না নেওয়ার পাশাপাশি ইহুদিবাদী ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং এখনও অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। ভারতের এই অমানবিক অবস্থানকে সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
পার্সটুডে'র এক রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় ইসরাইলের সঙ্গে ভারতও জড়িত বলে তথ্য ফাঁস হয়েছে যা গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই তথ্যটি প্রথমে ফাঁস করেছে ইসরাইলি পত্রিকা ইয়াদিউত আহারোনোত। গাজা যুদ্ধে প্রয়োজনীয় গোলাবারুদের একটা বড় অংশই ভারত সরবরাহ করছে।
কেন ও কীভাবে ইসরাইলের মিত্র হয়ে উঠল ভারত? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পার্সটুডে লিখেছেঃ ভারত তার নীতিতে আমূল পরিবর্তন এনে নিপীড়িত ও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষ ত্যাগ করে দখলদার ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করেছে। তারা দখলদার ইসরাইলের অপকর্মকে সমর্থন দিচ্ছে। এই সমর্থন কেবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইসরাইলকে সামরিক সমর্থন ও সহযোগিতাও দিচ্ছে ভারত।
১৯৪৭ সালে ভারত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের বিভক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেয় এবং প্রথম অ-আরব দেশ হিসেবে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও-কে 'ফিলিস্তিনি জাতির একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশগুলোর একটি হলো ভারত। ভারত ১৯৫০ সালে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলেও ১৯৯২ সালের আগ পর্যন্ত এর সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি।
কিন্তু ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামীরা 'আল-আকসা তুফান' অভিযান পরিচালনা করার পর ভারত ইহুদিবাদী ইসরাইলের জন্য ব্যাপক রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে ছুটে আসে। এই অভিযানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর নিন্দা জানান।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একই কাজ করেন। এই অভিযানের নিন্দায় ভারতীয় নেতারা সরব হলেও গাজায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেননি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ পর্যন্ত বহু বার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে 'বন্ধু' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অভিজিৎ তার এক্স পেজে লিখেছেন, 'নরেন্দ্র মোদি ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। ইসরাইলের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করার অর্থ হচ্ছে ইসরাইলের যেকোনো পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন দেওয়া।
ভারতীয় উর্দু গণমাধ্যমগুলো লিখেছে, ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি মোদির সমর্থন পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। যেমন 'উর্দু টাইমস' পত্রিকা লিখেছে, মোদি ঘোষণা করেছেন তিনি ইসরাইলের পক্ষে এবং এটি ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারতের অতীতের অবস্থান থেকে সরে আসার প্রমাণ। এর আগে ভারত এ ব্যাপারে বরাবরই নিরপেক্ষ ছিল।
অবশ্য ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারতে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন রয়েছে। ভারতীয় জনতা দল এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়ে নীরব থাকলেও বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টি এখনও সব সময় ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সমর্থনের কথা বলছে।
ইহুদিবাদী ইসরাইলের দিকে ভারতের ঝুঁকে পড়ার নেপথ্যেঃ
স্নায়ুযুদ্ধের অবসান এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ভারত তার পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন আনতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পড়ে। এছাড়া ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯২ সালে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও'র আমলে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তেল আবিবে দূতাবাস খোলে। ইহুদিবাদী ইসরাইলও নয়াদিল্লিতে তাদের দূতাবাস খুলেছে।
সাম্প্রতিক কয়েক দশকে ভারত অস্ত্র চুক্তির মাধ্যমে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ভারত ইহুদিবাদী ইসরাইলের কাছ থেকে ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের অস্ত্র কিনেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় ও ইহুদিবাদী লবিস্টরা একসঙ্গে কাজ করে এবং পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষায় সদাসোচ্চার থাকে। এসব লবিস্ট ভারতের কাছে মার্কিন প্রযুক্তির অস্ত্রশস্ত্র বিক্রির জন্য ইসরাইলকে অনুমতি দিতে এখন আমেরিকাকে রাজি করানোর চেষ্টা করছে।
ইসরাইল ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বছরে প্রায় পাঁচশ' কোটি ডলার, যা একটি চুক্তির মধ্যদিয়ে চলতি বছর দ্বিগুণ হবে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা ইহুদিবাদী ইসরাইলের মতো বাণিজ্যিক বা সামরিক কোনো সুবিধা ভারতকে দিতে পারছে না। কাজেই ভারতের অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ সেদেশের নেতাদেরকে গাজা উপত্যকা তথা ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যা ও অপরাধযজ্ঞের বিষয়ে চোখ-মুখ বন্ধ রাখতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। ভারত শুধু চোখ-মুখই বন্ধ রাখেনি, ইহুদিবাদী ইসরাইলকে গণহত্যা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com