ডেস্ক রির্পোট:- নতুন কারিকুলামে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের পর এবার নবম শ্রেণির ‘জীবন ও জীবিকা’ বইয়ের একটি বিতর্কিত কিউআর কোড নিয়ে। এ নিয়ে ফের শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা ঝড়।
এ বইয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা শুরু করা নিয়ে থাকা একটি অধ্যায়ে এই কোড ব্যবহার করা হয়েছে। যেটি স্ক্যান করলেই চলে আসছে অন্তর্বাস বিক্রির একটি ওয়েবসাইট। শিক্ষক ও অভিভাবকরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাঠ্যবইয়ে এমন কিউআর কোড ব্যবহারে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রকাশিত ২০২৪ সালের নতুন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে আরও এক অসঙ্গতি সামনে এলো।
এতে মাধ্যমিকের নবম শ্রেণির ‘জীবন ও জীবিকা’ বইয়ে বিদেশি অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইটের ঠিকানাযুক্ত কিউআর কোড সংযুক্ত করা হয়েছে। ৯০ পৃষ্ঠার এই বইটিতে মোট ৩টি অধ্যায় রয়েছে। বইটির ‘উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা’ নামের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৩৮ নম্বর পৃষ্ঠার ‘ধাপ-৬: ব্যবসার ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং বা বিপণন পরিকল্পনা’ নামক অধ্যায়ে উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রার জন্য কীভাবে ব্যবসায় শুরু করতে সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই পৃষ্ঠার ‘চিত্র ২.১: বিভিন্ন মাধ্যমে পণ্যের বিজ্ঞাপনের নমুনা’র চিত্র তুলে ধরে সেখানে নিত্যদিন স্টোরের একটি ছবি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল প্লাস, ভাইবার, লিংকডইন এবং পিনটারেস্টের লোগো দেওয়া হয়েছে।
এই লোগো এবং নিত্যদিন স্টোরের মাঝখানে একটি বারকোড ও কিউআর কোড সংযুক্ত করা হয়েছে। সেখানকার কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে ট্যাক্স (trucss.com.br) নামক পর্তুগিজ একটি নারীদের অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইটে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে অ্যাডাল্ট নারী মডেলরা অন্তর্বাস পরে সেটা বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে।
নবম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা এই বইটির রচনা ও সম্পাদনা করেছেন মো. মুরশীদ আকতার, মোসাম্মৎ খাদিজা ইয়াসমিন, হাসান তারেক খাঁন, মোহাম্মদ কবীর হোসেন, মো. সিফাতুল ইসলাম, মো. রুহুল আমিন, মো. তৌহিদুর রহমান, মো. মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ আবুল খায়ের ভূঁঞা।
বইটির শিল্পনির্দেশনায় ছিলেন মঞ্জুর আহমদ, চিত্রণ সুবীর মণ্ডল, প্রচ্ছদ পরিকল্পনা মঞ্জুর আহমদ, প্রচ্ছদ প্রথমেশ দাশ পুলক, গ্রাফিক্স নূর-ই-ইলাহী ও কে. এম. ইউসুফ আলী।
অভিভাবকদের অভিযোগ, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বইয়ে এ ধরনের অ্যাডাল্ট ছবিসহ বিদেশি অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইট কেন দেওয়া হয়েছে? এই অন্তর্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে?
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক অভিভাবক জানান, কোমলমতি বাচ্চাদের সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন রয়েছে। তারা যাতে বিপথে না যায় সেজন্য সব সময় তাদের উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। এখন পাঠ্যপুস্তকে অ্যাডাল্ট ছবিসহ বিদেশি অন্তর্বাস বিক্রির এমন ওয়েবসাইটের লিংক দেয়া হয় তাহলে বাচ্চারা কী শিখবে? এটা কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল নাকি অন্যকিছু তা খতিয়ে দেখা দরকার।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, যখন কিউআর কোডটি বসানো হয়েছিল, তখন ওই ওয়েবসাইটে খেলাধুলার বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যেত। তবে বর্তমানে সেটি অন্য আরেকটি ওয়েবসাইটের ঠিকানায় পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে পাঠ্যপুস্তকে কিউআর কোডটি সংযুক্ত করা হয়েছে স্ক্যান করার জন্য নয়, এটা উদাহরণ হিসেবে সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে। যেহেতু এখন বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে তাই শিক্ষার্থীরাও এটি স্ক্যান করে দেখবে, যা বিব্রতকর। বিষয়টি নিয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কিউআর কোডে বিদেশি ওয়েবসাইটের ঠিকানা সংযুক্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশীয় কোনো ওয়েবসাইটের ঠিকানা সংযুক্ত করা হলে অনেকে মনে করেন তাদের প্রমোশন করা হচ্ছে। তাই এই ধারণা থেকে বিদেশি ওই ওয়েবসাইটের কিউআর কোড সংযুক্ত করা হয়েছিল।
উল্লেখ, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের আলোচিত ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্প নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর পাঠ্য বই থেকে বিষয়টি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমন সিদ্ধান্তের মধ্যেই সামনে এলো আরও এক বড় ধরনের অসঙ্গতি।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com