খাগড়াছড়ি:- দেশীয় গরুর পাশাপাশি অবৈধভাবে সীমান্ত পথে নিয়ে আসা হচ্ছে ভারতীয় গরু। সীমান্তপথে বখরা দিয়ে এসব গরু দেশে ঢুকাতে তেমন বেগ পেতে হচ্ছেনা না চোরাকারবারীদের। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব এবং দেশীয় গরুর গৃহস্থসহ খামারিরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। আর মাত্র তিনদিন পরেই পবিত্র ঈদ-উল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে বড় পশুরহাট বাগান বাজার পশুর সমাগমে অতিতের সব রেকড হার মানিয়েছে। পাশ্ববর্তী চিকনছড়া ও রামগড়ের সোনাইপুল পশুর হাটেও আশাপাশের উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসে পশুর হাট। হাটগুলো ক্রেতাদের পদ চারণায় সরগরম দাম বেশি থাকায় অনেক ক্রেতাই দাম কমার অপেক্ষা করছেন শেষ সময়ের জন্য। তবে আজ ও কালকের মধ্যে ক্রেতারা কোরবানির পশু কিনতে শুরু করবেন বলে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে গিয়ে, বৃহত্তম চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পশুর হাট ফটিকছড়ির বাগান বাজার হাটে ঘুরে কথা হয় ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে। অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি মনে করছেন এ হাটে আসা ক্রেতারা। শেষ মহুর্তে বেচা বিক্রি জমে উঠেছে বলে জানান একাধিক বিক্রেতা। ঈদ যত কাছে আসছে পশুর হাটের ভিড়ও বেড়ে চলছে। শেষ মুহুর্তে আরো বেশি ভিড় বাড়বে এবং রাতব্যাপী পর্যন্ত বেচা-কেনা চলবে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা ও বাজার কর্তৃপক্ষ। তবে দাম নিয়ে বিক্রেতাদের দাবী পশুর খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। তাই বেশি দামের আশায় ধরে রেখেছেন। শেষ মহুর্তে দাম কমবে এ আশায় অনেক ক্রেতা অপেক্ষা করছেন।
এদিকে, সীমান্তবর্তী পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, মিরশরাই জোরালগঞ্জ, ফেনী জেলার পশুরামের বিলোনীয়া ও ছাগলনাইয়া উপজেলার একাধিক স্পটে ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় গরুতে এসব বাজার সয়লাব হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষক ও খামার মালিকরা।
খামার মালিকরা জানান, খাদ্য, চিকিৎসা ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে পশুপালনের ব্যয়ভার এবার দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে গত বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম চড়া না হলে বিপাকে পড়বেন কৃষকসহ খামারিরা। এছাড়া সম্প্রতি সীমান্তের বিভিন্ন স্পটে অবৈধ পন্থায় দেশে ঢুকছে ভারতীয় গরু-মহিষ। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামার মালিকরা। তারা বলছেন, এবার স্থানীয় হাটগুলোতে গতবারের তুলনায় পছন্দসই ভালো গরু উঠলেও গরুর তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। এতে আশানুরূপ মুনাফার চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি বলে ধারণা করছেন তারা।
রামগড়ের ফেনীরকুল এলাহী বক্স চৌধুরী ডেইরী ফার্মের স্বত্বাধিকারী মাসুদ আলম চৌধুরী জানান, ২৫ কেজি ওজনের ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার গো-খাদ্য এবার কিনতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। শ্রমিকের মজুরি ও ওষুধের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় এবার লাভক্ষতির হিসাব কষতে গিয়ে ক্ষতির অংশই বেশি দেখছেন তিনি। তাছাড়া বহিরাগত গরুতে বাজার সয়লাভ এতে আমাদের মত ছোট খামারীরা নিরুৎসাহী হচ্ছেন বলে তিনি জানান।
ডা: কামরুল ইসলাম জাবেদ নামে এক ক্রেতা জানান, তারা পারিবারিক ভাবে প্রতি বছর কোরবানির গরু ক্রয় করতে আসেন। বাজারে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও তুলনামুল ছোট গরুর দাম বেশি। তিনি আশা করছেন বাজারের শেষ সময়ে দাম আরো কমবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল মোমিন বলেন, বর্তমান বাজারে পশু খাদ্যের বেশ দাম। তারপরও বেশি দামে খাদ্য কিনে গবাদি পশু লালন-পালন করছি। কিন্তু সীমান্তের চোরাইপথে গবাদি পশু আসার কারণে বাজারে কাংখিত দাম পাচ্ছি না। লোকসান গুনতে হচ্ছে। এরমধ্যে গতবাজারের তুলনায় আজ দামে আরো দরপতন হয়েছে। তাছাড়া ভারত থেকে যেসব গবাদি পশু দেশে আসছে, সেগুলো খুবই রোগাক্রান্ত।
রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী জানান, ঈদকে টার্গেট করে খামারী ও কৃষকরা লাভের আশায় গরু পালন করেন। কিন্ত ভারতীয় গরুর প্রভাবে নতুন উদ্যেক্তা খামারী ও গৃহস্থরা আশানরুপ মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় ফলে নতুন উদ্যেক্তারা আশাহত হবেন। এক্ষেত্রে সীমান্ত পথে ভারতীয় গরুর অনুপেবেশ বন্ধ করা গেলে ও গো-খাদ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা গেলে স্থানীয় খামারী ও গৃহস্তরা লাববান হবেন।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com