ডেস্ক রির্পোট:- খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া এলাকার বাবু ছ বাপের মেয়ে সুমি চাকমা প্রকাশ হেলি (৩৬)। চাইনাতে নারী পাচার চক্রের অন্যতম হোতা এই সুমি চাকমার স্বামী চীনা নাগরিক সিয়াও সুসুই-কে পুলিশ প্রথমে ঢাকা উত্তরায় অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্য মতে, বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বসুন্ধরা এলাকা থেকে নারী পাচার চক্রের মূলহোতা সুমি চাকমা ওরফে হেলি/বিনি/সুমি ধনবীকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এসময় তাদের কাছে পাচারের জন্য অপেক্ষায় রাখা ৫টি উপজাতি মেয়েকে উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, সুমি চাকমা প্রথমে এক চাকমা ছেলেকে বিয়ে করেন, বিয়ের পর সে প্রথম স্বামীকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করে এক বড়ুয়া বাঙালি ছেলেকে, তাকেও ছেড়ে চলে যান। তারপর বিয়ে করেন আরেক বাঙালি ছেলেকে তাকেও তালাক দেন এবং সর্বশেষ নারী পাচারকারী দলে যুক্ত হয়ে এক চাইনা নাগরিককে বিয়ে করে চীনে চলে যান। চীনে চলে যাওয়ার পর সুমি চাকমা অনেক পাহাড়ি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে চীনে পাচার করেন।
নারী পাচার ব্যবসা লাভজনক হওয়ার কারণে অতিশয় লোভের বশবর্তী হয়ে তার চাইনিজ স্বামীসহ বাংলাদেশে চলে আসেন এবং উত্তরা অভিজাত এলাকায় ডুপ্লেক্স বাড়ি ভাড়া নেন। ঢাকায় তিনি রাজকীয়ভাবে চলাফেরা করতে থাকেন। যেহেতু তার স্বামী সিয়াও সুসুইয়েরও অনেক টাকা পয়সা আছে।
এরপর শুরু করেন খুব গোপনে পাহাড়ি নারী পাচারের কাজ। তিনি মাইক্রোবাস নিয়ে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ান, ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্য হলো অল্পবয়স্ক পাহাড়ি মেয়েদের গাড়ি, বাড়ি, টাকা-পয়সা, আইফোনের লোভ দেখিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে গরীব ও নিম্নবিত্ত মেয়েদের সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে জড় করা হয়। এ ছাড়াও অনেককে চাইনাতে উচ্চ বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। অনেক সময় চাইনিজ ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করিয়ে দেয়া হয়। পরে তাদের চাইনিজ পুরুষের সাথে বিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে চায়নার পাচার করা হয়। কেউ আপত্তি করলে চাইনিজ যুবকের সাথে সাজানো বিয়ে দিয়ে তার সাথে স্বামীর দেশ চাইনাতে পাঠানো হয়। এটাতে কেউই সন্দেহ করতে পারে না।
ঢাকায় নেওয়ার পরে যে মেয়েগুলি তার কথামত চলবে, তাদেরকে শপিং করে দেওয়া হয়। দামি দামি ড্রেস, জুতো, কসমেটিকস, মোবাইল কিনে দিয়ে নিজেদের সাথে মানিয়ে নেয়। কিছুদিন মেয়েদের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নিয়মিত রূপচর্চা করায়। যখন অল্পবয়সী মেয়েগুলো চেহারায় সৌন্দর্য ফুটে উঠে তখন চাইনার অন্য এক পাচারকারী চক্রকে খবর দেওয়া হয়। চাইনায় পাচারকারীর পছন্দ হলেই মেয়েদের বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়। নিলামে সন্তুষ্ট হলেই জালিয়াতি চক্রের মাধ্যমে জাল পাসপোর্ট ভিসা করে দেওয়া হয়। পাসপোর্ট ভিসা প্রস্তুত হলেই চাইনার পাচারকারীদের কাছ থেকে মেয়ে পাচার বাবদ ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে বিয়ে করিয়ে দেয় এই সুমি চাকমা (হেলি/বিনি/ধনবী)।
আর যে সকল মেয়েরা চাইনাতে বিয়ে করতে কিংবা খারাপ কাজে অসম্মতি জানাবে বা তার কথা শুনবে না সাথে সাথেই তাদের কাজ থেকে মোবাইল কেড়ে নেয় এই সুমি চাকমা। এরপর শুরু হয় তাদের উপর অত্যাচার, রাখা হয় ঘরবন্দি করে। পরিবারের সাথে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।
জানা যায়, ইতোমধ্যে সুমি চাকমা এবং তার চাইনিজ স্বামী সিয়াও সুসুই কক্সবাজারে ফ্ল্যাট কিনেছেন, উদ্দেশ্য তিন পার্বত্য জেলা থেকে পাহাড়ি নারী সংগ্রহ করে তাদের ফ্ল্যাটে রেখে বিভিন্ন হোটেল মোটেলে নারী যোগান দেয়া।
এ পর্যন্ত যে সমস্ত মেয়ে এই সুমি চাকমা চীনে পাচার করেছেন তাদের মাধ্যমে এবং সে নিজে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে অল্পবয়সী পাহাড়ের সহজ-সরল মেয়ে সংগ্রহ করার কাজ চালিয়ে আসছিলেন।
স্থানীয়দের মতে, সুমি চাকমার নারী পাচারের যে কার্যক্রম তাকে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের মাফিয়া ডন বললেও ভুল হবে না।
পাহাড়ের সকল মহলের দাবী সুমি চাকমা ও তার মতো নারী পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। পার্বত্যনিউজ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com