বান্দরবান:- বান্দরবানের থানচি উপজেলার ৩টি স্থান থেকে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের মাটি ভরাট করা হচ্ছে। এই অভিযোগ থানচি উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও মাটি সরবরাহকারী উপঠিকাদার শৈক্যচিং মারমার বিরুদ্ধে।
উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি শৈক্যচিং মারমা বলেন, ‘আমি পাহাড় কাটার জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু অনুমোদন পাইনি।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মে গভীর রাত থেকে মাটি কেটে স্টেডিয়ামে ভরাটের কাজ চলছে। প্রতিদিন রাতের বেলা মাটি কাটলেও আজ বুধবার সকাল থেকে উপজেলা সদরের তিনটি স্থান থেকে পাহাড় কেটে ট্রাকে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে। এই বিষয়ে প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
থানচি সদরের বাসিন্দা মং প্রু মার্মা বলেন, ‘থানচিতে যেভাবে একের পর এক পাহাড় কাটা হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে পাহাড়ের সৌন্দর্য থাকবেনা, পর্যটকও আর আসবে না।’
জানা গেছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ক্রীড়া পরিষদের বাস্তবায়নে থানচি সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজটি রাঙামাটির বাসিন্দা লুম্বিনী এন্টারপ্রাইজ এর চিরজিদ চাকমাকে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেয়। আগামী ৩০ জুনের আগে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার চিরজিদ চাকমা গত ফেব্রুয়ারিতে মারা গেলে তার সহধর্মিণী পলি চাকমা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন।
আরও জানা গেছে, গত ৩০ মে হতে ৪ জুন পর্যন্ত গভীর রাতে থানচি সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে মরিয়ম পাড়া, সাধু যোসেফ পাড়া দুই স্থানে ভারী স্কেভেটর ২টি ও চারটি ট্রাক এবং থানচির নতুন বাস স্টেশনের পেছনের স্থান থেকে ভারী স্কেভেটর ২টি ও চারটি ট্রাকের করে পাহাড় কেটে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে।
নতুন বাস স্টেশনের পাহাড় কাটার স্থানের ভূমির মালিক হিউম্যানেটারিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মংমংসিং মারমা বলেন, ‘আমি কাউকে মাটি কাটতে অনুমতি দেইনি, আর বিষয়টি আমি জানিও না।’
মাটি টানার কাজে নিয়োজিত ট্রাক চালক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যুবলীগ নেতা শৈক্যচিং মারমা আমাদের বলছেন সবাইকে ম্যানেজ করেছি, তোমাদের কোনো ভয় নাই, তাই পাহাড় কেটে মাটি নিচ্ছি।’
অন্যদিকে মরিয়ম পাড়া ও সাধু যোসেফ পাড়া পাহাড় কাটার দায়িত্বে নিয়োজিত যুবলীগের সাবেক সভাপতি সচীন ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা শ্রমিক হিসাবে দায়িত্বে আছি, পাহাড় কাটার বিষয়ে যুবলীগের সহসভাপতি, ঠিকাদার শৈক্যচিং মারমা বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি ঠিকাদার শৈক্যচিং মারমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি পাহাড় কাটার জন্য আবেদন করেছি, অনুমোদন পাইনি, সমানে বর্ষা আসবে এই মাসে কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে, তাই পাহাড় থেকে মাটি সংগ্রহ করে ভরাট করছি।’
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী, পাহাড় কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তি পাহাড় কাটতে বা নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। যদি কেউ এটি অমান্য করে, তবে তাকে অথবা ওই প্রতিষ্ঠানকে দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ফের একই অপরাধ করলে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ জরিমানা গুনতে হবে।
লুম্বিনী এন্টারপ্রাইজের নিয়োগকৃত ম্যানেজার মো. ইসহাক বলেন, ‘স্টেডিয়ামের প্রায় ৮০-৯০ লাখ ঘনফুট মাটি ভরাট করতে হবে, গত ৭ দিনে ১৫ লক্ষাধিক ঘনফুট মাটি ভরাট করেছি আমরা।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা সদর হতে এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে থানচি সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে মরিয়ম পাড়া ও সাধু যোসেফ পাড়ার অবস্থান। এই এলাকা থেকেও পাহাড় থেকে কাটা হচ্ছে মাটি।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক মো. ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু অনুমোদনের আগেই পাহাড় কেটেছে তা অবৈধ। এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।আজকের পত্রিকা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com