ডেস্ক রির্পোট:- ভারতের কলকাতায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মরদেহের অনুসন্ধান। তা না পাওয়া গেলে জড়িতদের শাস্তিসহ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। মরদেহের খোঁজ পেতে তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাল-বিল চষে ফেলছে কলকাতার পুলিশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কিনারা হয়নি।
অথচ ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানতে পেরেছে, এমপির খণ্ডিত মরদেহের কিছু অংশ কোথায় থাকতে পারে। ডিবির হাতে আটক এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান ঘাতক আমানউল্লাহ জানিয়েছেন এ তথ্য। রিমান্ডে তিনি স্বীকার করেছেন, নিজ হাতেই পলিথিনে ভরা মরদেহের একাংশ ফেলেছেন।
এখন ডিবি থেকে একটি দল কলকাতায় গিয়ে মরদেহের সেই অংশ উদ্ধার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও কলকাতা পুলিশকে এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। মরদেহের ওই অংশ দ্রুততম সময়ে উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে না গেলে বা যেতে দেরি করলে তা আর পাওয়া যাবে কি না, সেই সংশয় রয়েছে। কেননা, কলকাতা পুলিশ গতকাল শনিবারই বলেছে, মরদেহ ৮০ টুকরা করে বিভিন্ন স্থানে খালে-বিলে ফেলা হয়েছে এবং সেগুলো হয়তো এত দিনে জলজ প্রাণীর পেটে চলে গেছে।
চিকিৎসার জন্য কলকাতায় গিয়ে ১৩ মে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। সোনা চোরাচালানের ২০০ কোটি টাকার দ্বন্দ্বে এই খুন। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী তাঁর বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন। কলকাতায় নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার আমানউল্লাহসহ তিনজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এমপির মরদেহ গুম করার জন্য টুকরা টুকরা করা হয়েছিল। সে জন্য শরীরে চামড়া ছাড়িয়ে দা দিয়ে কেটে সেগুলো কয়েকটি ব্যাগে ভাগ করে কয়েক হাত বদলে ফেলে দেওয়া হয়। তবে মরদেহের
অংশবিশেষের একটি পলিথিন কোথায় ফেলা হয়েছে, তা জানেন আমানউল্লাহ। তিনি নিজের হাতেই সেটা ফেলেছেন। আর সেটা খুঁজে পাওয়াও সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি। তাই আমানউল্লাহর কাছ থেকে সেই স্থানের অবস্থান জেনে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন ডিবি পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট তিন সদস্যের একটি দল। কর্মকর্তারা বলছেন, মরদেহের ওই অংশ পেলে তদন্তে বড় অগ্রগতি হবে।ডিবির প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভারতীয় পুলিশও এই হত্যার তদন্ত করছে। আজ-কালের মধ্যে আমিসহ ডিবির তিনজন কর্মকর্তা তদন্তের কাজে ভারতে যাব।’
৮০ টুকরা মরদেহ, জাল ফেলেও পাচ্ছে না সিআইডি
গত তিন দিনের মতো গতকালও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জায়গায় মরদেহের খোঁজে তল্লাশি চালায় তাদের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সর্বশেষ গতকাল বিকেলে কসাই জিহাদ হাওলাদারকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটির বাগজোলাখালী এলাকায় তল্লাশি করা হয়। সেখানকার একটি খালে জাল ফেলে ও নৌকা দিয়ে চলে তল্লাশি। কিন্তু সেখানেও মরদেহের হদিস মেলেনি।
কসাই জিহাদ সে দেশের সিআইডিকে জানিয়েছেন, হত্যার পর আনোয়ারুল আজীমের মরদেহ ৮০ টুকরা করা হয়। পরে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে সেগুলো ফেলা হয় বিভিন্ন স্থানে।
ভারতের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এমপির মরদেহের খণ্ডিত অংশ এরই মধ্যে চলে গেছে বিভিন্ন জলজ প্রাণীর পেটে।
১৯ জানুয়ারি কলকাতায় ও নির্বাচনের সময় এলাকায় হত্যার চেষ্টা
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এর আগে গত জানুয়ারিতেই আনোয়ারুল আজীমকে হত্যায় দুই দফা চেষ্টা করেছিলেন বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন। তখনো সেই চেষ্টায় নেতৃত্বে ছিলেন আমানউল্লাহ। তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে আমানউল্লাহ নিজেই ব্যর্থ ওই দুই চেষ্টার কথা জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রটি বলছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জিতে শপথের পর ১৯ জানুয়ারিতে কলকাতায় ছিলেন আনোয়ারুল আজীম। সঙ্গে ছিলেন বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন ও আমানউল্লাহ। সেদিনই এমপিকে খুন করার এক দফা চেষ্টা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, একসঙ্গে এক গাড়িতে বের হয়েছিলেন এমপিসহ চারজন। চালকের আসনে ছিলেন শাহীন, পাশের আসনে এমপি। আর পেছনের আসনে ছিলেন আমানউল্লাহসহ দুজন। পথে গাড়ির মধ্যেই ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করে তাঁকে কুপিয়ে হত্যার পরিকল্পনা ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে আমানউল্লাহ জানিয়েছেন, পরিকল্পনামাফিক সবকিছু আগাচ্ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই এমপির ফোনে দুটি কল আসে। তিনি পরিচিত দুজনের সঙ্গে কথা বলেন। এমপি তাঁদের জানান, তাঁর সঙ্গে অন্য কারা আছেন। এমপি ফোনে কথা বলায় এবং অবস্থান ও সঙ্গীদের বিষয়ে জানানোর পর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাঁরা হত্যার পরিকল্পনা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সরে আসেন।
এর আগে ওই জানুয়ারি মাসেই এমপিকে আরেক দফা হত্যার চেষ্টা করেন এই খুনিরাই। জিজ্ঞাসাবাদে আমানউল্লাহ জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় এমপি আজীমকে তাঁর এলাকাতেই খুন করার পরিকল্পনা ছিল। অনেক সময় মোটরসাইকেল নিয়ে একা ঘোরাফেরা করতেন এমপি। এমনই কোনো সুযোগে চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করে বিরোধীদের ওপর দায় চাপানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে এমন ঘটনা সামাল দিতে পারা যাবে কি না, সেই আশঙ্কায় পিছু হটেন এই খুনিরা।
শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায় টাকা আদায়ের চেষ্টা
গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আমানউল্লাহ জানিয়েছেন, এবারও আনোয়ারুল আজীমকে খুনের পরিকল্পনা নিয়েই তাঁরা কলকাতায় গিয়েছিলেন। তবে খুনের আগে তাঁর কাছ থেকে পাওনা মোটা অঙ্কের টাকা কীভাবে আদায় করা যায়, সেই চিন্তাও তাঁদের মাথায় ছিল। এ জন্য গ্রেপ্তার হওয়া তরুণী সিলিস্তা রহমানকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। পরিকল্পনামতো এমপিকে সঞ্জীভা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটে নেওয়ার পর ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করা হয়। এরপর সিলিস্তার সঙ্গে এমপির নগ্ন ছবি তোলার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু অধিক মাত্রায় ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করায় গভীর অচেতন হয়ে পড়েন এমপি আজীম। পরে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
গতকাল ঢাকায় মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশীদ বলেন, খুন করার আগে এমপি আজীমকে ব্ল্যাকমেল করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব না হওয়ায় হত্যা করা হয়।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com