ডেস্ক রির্পোট:- দুর্নীতির সঙ্গে ব্যাপক সম্পৃক্ততার অভিযোগে ও নানা কারণে ব্যাপক সমালোচিত সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৮ সালের ২৫শে জুন থেকে ২০২১ সালের ২৪শে জুন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। আজিজ আহমেদের পরিবারের সদস্যদের অতীত ও বর্তমান বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এবং তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে ২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি কাতারভিত্তিক চ্যানেল আল-জাজিরা ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান’ নামে একটি ইনভেস্টিগেটিভ ডকুমেন্টারি (অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র) প্রচার করে। বলাবাহুল্য তখন আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। প্রামাণ্যচিত্রটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য ২০২২ সালে ‘বেস্ট হিউম্যান রাইটস জার্নালিজম’ বিভাগে অ্যামনেস্টি মিডিয়া পুরস্কার অর্জন করে।
এক ঘণ্টার কিছু বেশি দীর্ঘ এই প্রামাণ্যচিত্রে মূলত আজিজ এবং তার তিন ভাইয়ের কার্যক্রম দেখানো হয় যেটি ‘আল জাজিরা ইংলিশ’ ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় ৯০ লাখ বার দেখা হয়েছে। ‘এজে ইনভেস্টিগেশনস’ ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাটি (ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক) দেখা হয়েছে ১ কোটিরও বেশি বার। আল জাজিরার ওয়েবসাইটে অনলাইন ভার্সনেও ক্লিক করেছেন কয়েক মিলিয়ন পাঠক।
প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো হয়: আজিজের দুই ভাই আনিস আহমেদ এবং হারিস আহমেদ খুনের দায়ে আদালতে দণ্ডিত হলেও কীভাবে সরকারের অতি উচ্চমহলের ঘনিষ্ঠ সেনাপ্রধান ভাইয়ের প্রভাবে নিরাপদে ধরাছোঁয়ার বাইরে তথা দেশের বাইরে ‘পলাতক’ থাকেন।
প্রামাণ্যচিত্রটি বানাতে দুই বছর ধরে তদন্ত করতে হয়েছে বলে জানানো হয়। এই সময়ে আল-জাজিরার অনুসন্ধানী দল হারিস এবং আনিসকে ট্র্যাক ডাউন করতে সক্ষম হয় যারা ১৯৯৬ সালে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে হত্যায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। হত্যার পর দুই ভাই বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
প্রামাণ্যচিত্রটি বানানোর সময় হারিস আহমেদ মোহাম্মদ হাসান নাম ধারণ করে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে ছিলেন এবং তখনো তার নাম বাংলাদেশের ‘মোস্ট ওয়ানটেড ক্রিমিনাল’ তালিকায় ছিল।
আর আনিস আহমেদ থাকছিলেন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। তৃতীয় ভাই- বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ যিনি ১৯৯৬ সালের খুনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন- প্রেসিডেন্টের ক্ষমা পেয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে কারাগার থেকে মুক্ত হন। এর পরের মাসেই আজিজ সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। আরেক ভাই- টিপু ১৯৯৯ সালে গোলাগুলিতে মারা যান।
আল-জাজিরার ফাঁস হওয়া নথিগুলো প্রকাশ করে: কীভাবে জেনারেল আজিজ হারিসকে মিথ্যা পরিচয় বানাতে সাহায্য করতে মিলিটারি অফিসারদের ব্যবহার করেছিলেন, যে পরিচয় তখন ইউরোপে ব্যবসা করা এবং বিশ্ব জুড়ে সম্পত্তি কেনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
‘পলাতক’ ভাইয়েরা বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে ‘ওয়ানটেড’ হলেও জেনারেল আজিজ তার দুই ভাইয়ের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছিলেন। দুই ভাই পলাতক হলেও প্রামাণ্যচিত্রে তাদের ভাতিজার তথা আজিজের ছেলের বিয়েতে (২০১৯ সালের মার্চ মাসে) বাংলাদেশে দেখা যায়। তাদেরকে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের পাশে দাঁড়িয়ে পার্টি করতে দেখা যায়।
গোপন রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে বুদাপেস্টে হারিস আহমেদের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। এতে দেখানো হয়, হারিস আহমেদ নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন দেশে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। সরকারের শীর্ষস্থানীয় লোকজনের যোগসাজশে পুলিশের চাকরি, যেমন: বিমানবন্দরে ওসি’র পদ পেতে বহু কোটি টাকা পর্যন্ত নেয়া হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এসব কাজে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকেরা জড়িত থাকেন বলে হারিস উল্লেখ করেন।
সরকারের অন্তত একজন সিনিয়র মন্ত্রীর কথাও সেখানে উঠে আসে। সরকারের প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে ভাগবাটোয়ারায় জড়িত থাকার কথাও বলতে শোনা যায়। অন্যান্য রেকর্ডিংয়ে, ঘুষ নেয়ার জন্য তার সেনাপ্রধান ভাইয়ের ক্ষমতা ব্যবহার করে সামরিক চুক্তি থেকে লাভ করতে পেরে গর্ববোধ করেন হারিস।
আল-জাজিরা দ্বিতীয় পলাতক ভাই আনিসকেও খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়। একটি নজরদারি দল জেনারেল আজিজকে অনুসরণ করে কুয়ালালামপুর পর্যন্ত যায়, যেখানে তাকে এবং আনিসকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কূটনৈতিক এসকর্ট দেয়া হয়। আনিস যে বাড়িতে থাকতেন তার সম্পত্তির রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায় সেখানে আনিস আহমেদ এবং হারিস আহমেদের ভুয়া পরিচয় মোহাম্মদ হাসান নামে দুই মালিককে দেখানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, আল-জাজিরার এই প্রামাণ্যচিত্রকে মিথ্যা, মানহানিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে এর তীব্র সমালোচনায় বিবৃতি দিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনা সদর দপ্তর।মানবজমিন
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com