ডেস্ক রির্পোট:- সারা দেশে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯৬ হাজার ৭৩৬টি পদ শূন্য। পদ ফাঁকা থাকার পরও যোগ দিতে পারছেন না বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রত্যাশী। নিবন্ধন সনদ থাকলেও তারা পাননি আবেদনের সুযোগ। এই শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ২৪ হাজারেরও কম। আবার এই আবেদন থেকেও বাদ পড়বেন অনেকেই। ফলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নানা জটিলতায় ৭৫ শতাংশের বেশি শিক্ষকের পদই ফাঁকা থাকছে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা সম্পন্ন হতে ৪ বছরের অধিক সময় লেগেছে। সনদ দিয়ে জটিলতা তৈরি করে বিপাকে পড়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। প্রতিষ্ঠানটি পূরণ করতে পারছে না শিক্ষক ঘাটতি। প্রায় ১ হাজার নিবন্ধনধারী নিয়োগের অপেক্ষায় থেকে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর পার করেছেন।
তারপরও সঠিক কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। আবার আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও উপেক্ষা করেছে। গত ৩১শে মার্চ প্রকাশিত ৫ম গণবিজ্ঞপ্তির আবেদন ১৭ই এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে চলতি মাসের ৯ই মে শেষ হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসেই প্রাথমিক সুপারিশ করা হতে পারে সূত্রে জানা যায়। অথচ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯৬ হাজার ৭৩৬ শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে ২৪ হাজারেরও কম প্রার্থী আবেদন করেছেন।
এতে শুধুমাত্র ১৬ ও ১৭তম নিবন্ধনধারীরা আবেদন করেছেন। এনটিআরসিএ’র বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন কারণে প্রথম নিবন্ধন পরীক্ষা থেকে ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষায় চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরা প্রায় ৩০০টি মামলা করেন প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে এখন বেকয়দায় পড়েছে এনটিআরসিএ। মন্ত্রণালয়ও রয়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ কিন্তু বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম হওয়া প্রার্থীদের নিয়ে। ২০২০ সালের ২৩শে জানুয়ারি ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে ৪ বছরের অধিক সময় অতিবাহিত করেছে এনটিআরসিএ। সর্বশেষ গত বছর ২৮শে ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফলাফল হয়। এইসময়ে করোনা মহামারির ভয়ানক রূপধারণ করে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এনটিআরসিএ’র ‘খামখেয়ালির’ কারণে পরীক্ষার আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়। যদিও ওই সময় সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এর আগে এনটিআরসিএ’র নিবন্ধনে পাস করা ১৭তমরা ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে বয়সের ব্যাকডেট চেয়ে এনটিআরসিএসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছে ও মানববন্ধন করে। একপর্যায়ে বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে ১৭তম ৩৫ উর্ধ্বদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হয় এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যানসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের। এ সময় তারা দায় স্বীকার করেন। তাই বিষয়টি মানবিক বিবেচনা করে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিল। তবে এ সংক্রান্ত ফাইল কোন অদৃশ্য শক্তির বলে খামখেয়ালি হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
এসব কারণেই পুরণ হচ্ছে না শিক্ষকের সংখ্যা। তারা প্রশ্ন তুলে বলেন, আমরা কেন ভুক্তভোগী হবো? করোনার কারণে আমাদের বয়স পার হয়েছে। এতে তো আমাদের দোষ নেই। সেইসঙ্গে আদালত আমাদের পক্ষে রায় দেয়ার পরও কেন আমরা সুযোগ পাবো না? ২০২২ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৩৯ মাসের বয়সের ছাড় দেয়া হয়েছে। সেই ছাড়ের প্রকৃত দাবিদার বলেও জানান তারা। শিক্ষকদের বিপুলসংখ্যক এই শূন্যপদ পূরণের জন্য পন্থা খুঁজছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়ে এনটিআরসিএ শূন্যপদ পূরণের জন্য আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহিল আজম বলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সামনে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আবার সামনে আরেকটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখা যেতে পারে। ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ১৮টি নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন করেছে সংস্থাটি। এতে দুই কোটির বেশি প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। তবে চাকরি পেয়েছেন মাত্র সোয়া এক লাখের মতো। এদিকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাদ্রাসায় শিক্ষক হতে হলে এনটিআরসিএ নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ অর্জন করতে হয়। তবে স্কুল-কলেজের প্রার্থীদের সঙ্গে একই প্রশ্নে পরীক্ষা হওয়ায় মাদ্রাসার প্রার্থীরা নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন না। বিষয়টি অনুধাবন করে মাদ্রাসার নিবন্ধন পরীক্ষা আলাদা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।
শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে। মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় সর্বনিম্ন ৪০ পেলে একজন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অধিকাংশই জেনারেল শিক্ষায় পড়ালেখা করেছেন। মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা করা প্রার্থীরা ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ায় তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এই জটিলতা দূর করতে আগামীতে ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হলে ওই পরীক্ষায় স্কুল, স্কুল-পর্যায়-২ এবং কলেজ পর্যায়ের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষকদের আলাদা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি আরবি বিষয়েও প্রশ্ন থাকবে। তবে এটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা। এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তারা জানান, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও অনেক প্রার্থী ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এজন্য দ্রুত নতুন আইন কার্যকরের চেষ্টা করা হচ্ছে।
আবার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) আদলে নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য নতুন একটি আইন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ আইন বাস্তবায়ন হলে আর নিবন্ধন পরীক্ষা থাকবে না। সরাসরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি’র আদলে নিয়োগ কার্যক্রম চালাবে এনটিআরসিএ। এই আইনের মতামতের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এটি যাচাই-বাছাই করছে। আইন হলে তখন আর আলাদা করে শিক্ষক নিবন্ধনের পর পরীক্ষার আয়োজন করবে না এনটিআরসিএ। নতুন আইনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে ৩৪ বছর ১১ মাস হলেও তিনি আবেদন করতে পারবেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে যত সময়ই লাগুক না কেন প্রার্থী চাকরির সুপারিশ পাবেন। এ বিষয়ে এনটিআরসিএ’র সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে আলাদা করে নিবন্ধন পরীক্ষা নেয়া হবে না। তখন সরাসরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এটি করতে পারলে সনদের মেয়াদ কিংবা বয়স নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com