ডেস্ক রির্পোট:- বছরের মাঝামাঝি এসে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ে ভুলত্রুটির সংশোধনী দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ৩১টি বইয়ে ১৪৭টি সংশোধনী এরই মধ্যে স্কুল পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এর পরও সব ভুলের সংশোধনী দিতে পারেনি এনসিটিবি। চার মাস পেরোলেও সংশোধনকারীদের চোখ এড়িয়ে গেছে অনেক দৃশ্যমান ভুল। বিষয়টিকে সংস্থাটির ‘অবহেলা’ হিসেবে দেখছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, নতুন বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয় সরকার। তবে সব শিক্ষার্থীর সব বই পেতে ফেব্রুয়ারি মাস পার হয়ে যায়। এসব বইয়ে বেশকিছু ভুল তুলে ধরে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘পাঠ্যবইয়ে এবারও ভুলের ছড়াছড়ি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে কালবেলা। এরপর ভুল ও অসংগতি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক ও সমালোচনা। একপর্যায়ে নতুন বইয়ের ভুলত্রুটি ইমেইলে জানানোর অনুরোধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনসিটিবি। এর পরই পাঠ্যবইয়ের ভুল অনুসন্ধানে নামে বিশেষজ্ঞ কমিটি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো সংশোধনী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নবম শ্রেণির ১১ বইয়ে ভুল রয়েছে ৭৭টি; অষ্টম শ্রেণির ১০টি বইয়ে ৪৯টি; সপ্তম শ্রেণির ৫টি বইয়ে ১১টি; ষষ্ঠ শ্রেণির ৫ বইয়ে ১০টি। ভুলগুলোর মধ্যে বানান ভুলের পরিমাণই বেশি। এ ছাড়া কোনো কোনো বাক্য পুরোপুরি সংশোধন করা হয়েছে। আবার অপ্রয়োজনীয় শব্দ ও বাক্য বাদ দেওয়া হয়েছে।
যেসব ভুল এখনো সংশোধন হয়নি: নবম শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি বইয়ের ভূমিকায় সহযোগিতাকে ‘সহযোগিতা’ লেখা হয়েছে, যা সংশোধন করা হয়নি। ‘পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়’—বাক্যটি ১৫ বারের মধ্যে ভুল করে ১৩ বারই ‘পৃখিবী’ লেখা হলেও সেটি চোখে পড়েনি সংশোধনকারীদের। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিকের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানিক, পাকিস্তানকে ‘পাস্কিস্তান’ ‘ভাতখণ্ড’কে ‘ভাতখন্ড’, উদ্দেশ্যকে ‘উদ্দেশ’ লেখা হলেও সেগুলো সংশোধনী তালিকায় নেই। রয়ে গেছে বাক্য গঠনের ভুলও।
একই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ২৮ নম্বর পৃষ্ঠার প্রথম অনুচ্ছেদে লড়াইয়ের-কে ‘লড়ায়ের’, ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় লক্ষ্যকে ‘লক্ষ’, ৩৮ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’-এর গঠনকাল ১৯৬০ সাল লেখা হয়েছে; যদিও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী পরিষদের গঠন হয়েছে ১৯৬২ সালে। এই বইয়ের ৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় স্বাধীনতা লাভের পর যে সময়কালের ঘটনা বর্ণনা হয়েছে, সেখানে বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী/রাষ্ট্রপতি হিসেবে লেখা হয়েছে, তিনি কী ছিলেন তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। ১০০তম পৃষ্ঠায় সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই—এটি মধ্যযুগের কবির লেখা উল্লেখ করা হলেও সেই কবি বড়ু চণ্ডীদাসের নাম উল্লেখ নেই।
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৮২ নম্বর পৃষ্ঠায় কিলোমিটারকে ‘কীলোমিটার’ লেখা হয়েছে। ১৫৭ ও ১৫৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘ঝুঁকী’ সংশোধন করে ‘ঝুঁকি’ লেখা হলেও ১৩০ নম্বর পৃষ্ঠায় সেটি সংশোধন করা হয়নি। বইয়ের ১০৪ নম্বর পৃষ্ঠায় নারীরা এখন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রী বলা হয়েছে। বইটি গত বছর যখন লেখা হয়েছে, তখনকার সময়ের জন্য ভুল না হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় রদবদলের কারণে তথ্যটি এখন আর সঠিক নয়। একই শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে ‘সুস্থ’ বানানকে লেখা হয়েছে ‘সুস্থ্য’। গত বছর ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ বইয়ের ‘চাঁদ সূর্যের পালা’ অধ্যায়ে অভিশপ্ত চাঁদ বাদ দিয়ে ‘চাঁদের গল্প’ নাম দেওয়ার সুপারিশ করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। কিন্তু এ বছরও সেটি একই রাখা হয়েছে।
মাদ্রাসা স্তরের ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম ও দশম শ্রেণির ‘কাওয়াইদুল লুগাতুল আরাবিয়্যাহ’ বইয়ের মলাটে এসব শ্রেণির আরবি নামের ক্ষেত্রে ব্যাকরণগত ভুল করা হয়েছে; কিন্তু সেগুলো পরিবর্তন করা হয়নি।
এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, তথ্যগত ও বানানগত বড় ভুলগুলোর সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। তবে একই শব্দ কয়েক জায়গায় ভুল হয়েছে, সেগুলো বারবার উল্লেখ করতে হবে বলে সংশোধনী দেওয়া হয়নি। শিক্ষকরা সেটি সংশোধন করে পড়াবেন। শিক্ষামন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর বিষয়টিও একই, শিক্ষক ক্লাসে সঠিকটি পড়াবেন। এর পরও কোনো ভুল চোখে পড়লে আমরা সেগুলোর সংশোধনী পাঠিয়ে দেব। তিনি বলেন, শরীফার গল্পের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় সেটি সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, বছরের মাঝামাঝি এসে সংশোধন করার পরও ভুল থাকা দায়িত্বহীন কাজ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতে কোনো তথ্য একবার শিখে ফেললে পরবর্তী সময়ে অনেক পরে যদি সংশোধনী দেওয়া হয়, তাতে লাভ হয় না।কালবেলা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com