ডেস্ক রির্পোট:- প্রশাসনে সচিব পদে আগামী সপ্তাহে রদবদল আসছে। আগামী ৩০ মে থেকে বেশ কয়েকজন সচিবের অবসরে যাওয়া শুরু হবে। আগামী ১৯ মে অবসরে যাচ্ছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সচিব সেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র সচিবের চুক্তির মেয়াদ আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ হচ্ছে। সেখানেও নতুন মুখ্য সচিব নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসনের যাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে তারাই আবার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। এদিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনে অসন্তোষ এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো.হাসানুজ্জামান কল্লোলকে বিদ্যুৎ বিভাগে দেয়া হচ্ছে এবং আর বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমানকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বদলী করা হতে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদসহ বেশ কয়েকজনের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পরিবর্তন করা হতে পারে। এছাড়া সচিবের শূন্য পদে প্রশাসনের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্যমতে, প্রশাসনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও ভিবাগে ৮৫ জন সচিব কর্মরত আছেন। তাঁদের মধ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অন্তত ১৮ থেকে ২০ জনই চুক্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে অন্তত শতাধিক কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রশাসনে বদলী ও পদোন্নতি হচ্ছে একটা রুটিন ওয়ার্ক। কোন মন্ত্রণালয়ে কাকে সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হবে তা এখন বলতে পারছি না। তবে যাদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেখানে নতুন সচিব পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান।
জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে অভিজ্ঞ ও নতুনদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভা। এতে ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১৮জন প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা ১১ জানুয়ারি থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। সচিব পদে অভিজ্ঞ ও দক্ষতার পরিচয় দেওয়া কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হবে। যারা ইতোমত্যে সচিব পদে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তাদের ভালো মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে জনপ্রশসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রশাসনে সচিব পদে চলতি সপ্তাহে না হলে আগামী সপ্তাহে রদবদল আসছে। আগামী ৩০ মে এর মধ্যে কয়েকজন সচিব অবসরে যাচ্ছেন। এরা হচ্ছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব সেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ, পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার আগামী ১১জুলাই অবসরে যাচ্ছেন, আগামী ১৪ জুলাই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, আগামী ২৭ আগষ্ট পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড, শাহনাজ আফরিন, আগামী ২৮ আগষ্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) ড, আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন অবসরে যাচ্ছেন। আগামী ১৮ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আগামী ২৪ মে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফিজুর রহমানের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বিএম আমিন উল্লাহ নুরীর মেয়াদ আগামী ৩০জনু শেষ হচ্ছে। এছাড়া আগামী ৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চাকরি মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোলসহ বেশ কয়েকজনের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পরিবর্তন হতে পারে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো.মোস্তফা কামাল অথবা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানাকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেনকে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে দেয়া হতে পারে। পার্বত্য চ্ট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো.মশিউর রহমানকে জননিরাপত্তা বিভাগে বদলী করা হতে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসনে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে কর্মকর্তা রয়েছেন ৭৯ জন। মাঝের কয়েক বছর জনপ্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কমেছিল। বিশেষ করে নিয়মিত পদগুলোতে চুক্তিতে কম নিয়োগ দেওয়া হতো। কিন্তু নির্বাচনের বছরে এসে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়ছে। কাউকে চুক্তিতে নিয়োগের ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এই শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়। এ নিয়ে শীর্ষ পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে চুক্তিতে নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতে সরকারের বাড়তি ব্যয় হয়। সরকারি চাকরিতে অবসর নিতে হয় ৫৯ বছর বয়সে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরও এক বছর বেশি চাকরি করার সুযোগ পান। জনপ্রশাসনে শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে অবসরের সময় এলে চুক্তিতে নিয়োগ পেতে চেষ্টা-তদবির করছেন বলে জানা গেছে।
সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান বলেন, প্রশাসনে যাদের সচিব পদে নিয়োগ করা হবে। তাদের যোগ্যতা আছে বলে নিয়োগ দিচ্ছে। একেবারে অপরিহার্য না হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া ঠিক নয়। যেসব কর্মকর্তা চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ পাচ্ছেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে দারুণ কিছু করেছেন, তা নয়, বরং কাজ চলছে গতানুগতিকভাবেই। জনপ্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় যোগ্যতা আসলে সরকারের ঘনিষ্ঠ থাকা।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই করতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালের সরকারি কর্মচারী অবসর আইনের আওতায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিল বঙ্গবন্ধুর সরকার। সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগ, সেই পরিস্থিতি এখন না থাকলেও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করে ২০১৪ সালের ১ মার্চ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চিঠি দিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং এর জন্য একটি নীতিমালা করারও কথা বলেছিলেন। তারপর কিন্তু প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চলছেই। চুক্তিতে বর্তমানে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ছাড়াও চুক্তিতে আছেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সচিব পদে সম্পদ বড়ুয়া। বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচের মো. আখতার হোসেন আছেন এসডিজির মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্বে এবং মাসুদ বিন মোমেন আছেন পররাষ্ট্রসচিবের দায়িত্বে। চুক্তিতে আরও আছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আবদুস সালাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে সংযুক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান ও পর্যটনসচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে রাষ্ট্রদূত ফজলুল বারী।ইনকিলাব
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com