খাগড়াছড়ি:- জাপান, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের আমের চাষ হচ্ছে পাহাড়ে। খাগড়াছড়ির পাহাড় বা টিলা ভূমিতে বিদেশি রঙিন জাতের আম চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন চাষিরা। সাম্প্রতিককালে বিদেশি আম চাষের প্রবণতাও বাড়ছে। তাই খাগড়াছড়ির পাহাড়ি মাটিতে বিদেশি প্রজাতির আমের চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। পাহাড়ের আবহাওয়া উপযোগী এবং মাটির গুণাগুণের কারণে বিদেশি আম চাষ করে সফল কৃষক। দেশি আমের তুলনায় ৫–৬ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিদেশি আম। কৃষি বিভাগ বলছে, পাহাড়ে বিদেশি জাতের আধিক্য দেখা যায়। এতে আমের আমদানি নির্ভরতা কমার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।
খাগড়াছড়ির মহালছড়ির কৃষক হ্ল্যাশিমং চৌধুরী বিদেশি আমের চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। উপজেলার ধুমনিঘাট এলাকায় ঢালু পাহাড়ে দেশি আমের পাশাপাশি বিদেশি জাতের আমের চাষ করেছেন তিনি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯শ ফুট উঁচুতে আমের বাগান গড়ে তুলেছেন। তার বাগানে প্রায় ৪০ প্রজাতির বিদেশি আমের আবাদ হয়েছে। জাপানের বিখ্যাত আম মিয়াজাকি, আমেরিকান পামলার, থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই, ব্যানানা ম্যাংগো, কার্টিমন, কিউজাই, রেড লেডি, আপেল ম্যাংগো, দোকমাই, কেসিংটন প্রাইড, মেট্রোস তোতা, আলফানসোসহ বিভিন্ন প্রজাতির আমের আবাদ করেছেন তিনি। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফল হওয়ার পর বাণিজ্যিকভাবে আবাদ শুরু করেছেন।
হ্ল্যাশিমং জানান, গত মৌসুমের তুলনায় এবার আমের ফলন কম হয়েছে। তাই এবার বিক্রিও অর্ধেকে নেমে আসবে। তবে দেশি আমের তুলনায় বিদেশি আমের কদর বেশি। স্থানীয় বাজারে বিক্রি কম হলেও বিদেশি আমের চাহিদা ঢাকা ও চট্টগ্রামে। গত মৌসুমে প্রতি কেজি মিয়াজাকি আম বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার টাকায়। ব্যানানা ম্যাংগো, কার্টিমন ও কিউজাই বিক্রি হয় ২শ থেকে আড়াইশ টাকায়।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কৃষক মংশিতু চৌধুরী বলেন, আমার বাগানে অন্তত ১ হাজার বিদেশি জাতের আমের গাছ রয়েছে। ফলন ভালো হয়। গত মৌসুমে ১০ লাখ টাকার বিদেশি জাতের আম বিক্রি করেছি। এবার দেশি–বিদেশি উভয় জাতের আমের ফলন কম হয়েছে। সেই কারণে এবার আমের দাম গত বছরের তুলনায় বাড়বে। গত মৌসুমে মিয়াজাকি বিক্রি করেছি কেজি ৮শ থেকে ৯শ টাকায়। এবার ১২শ টাকা কেজি বিক্রি করতে হবে। চিয়াংমাই বিক্রি করতে হবে কেজিপ্রতি হাজার টাকায়। তিনি বলেন, বিদেশি জাতের আম স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা যায় না। আমরা অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাই।
খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও কৃষক সুজন চাকমা বলেন, চলতি মৌসুমে আমের ফলন কম। তবে আম্রপালি বা দেশি আমের তুলনায় বিদেশি আমের ফলন বেশি হয়েছে। গত বছরে ৩শ বিদেশি জাতের আমের গাছ থেকে ৬ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এবারও ভালো বিক্রির আশা করছি। আমেরিকান পালমার, ব্যানানা ম্যাংগো, কিউজাই, কাটিমনসহ বিভিন্ন বিদেশি জাতের আমের আবাদ করেছি। ব্যানানা ম্যাংগোর ভালো ফলন হয়েছে।
জানা যায়, খাগড়াছড়িতে চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ১শ ৩০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২শ ৬০ হেক্টর জমিতে বিদেশি জাতের আমের আবাদ হয়েছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম বলেন, বর্তমানে প্রচলিত জাতের পাশাপাশি বিদেশি জাতের আম চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষ করে কিউজাই, ব্যানানা ম্যাংগো, আমেরিকান পালমারসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি আমের চাহিদা বেশি। পাহাড়ের আবহাওয়া এসব বিদেশি জাতের জন্য উপযোগী।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com