ডেস্ক রির্পোট:- রোগীর সুস্থতার জন্য চিকিৎসকেরা বিভিন্ন ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতাল এলাকা থেকে সংগৃহীত ফল পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে না খাওয়ায় অনেকেই উল্টো বিভিন্ন জীবাণুতে সংক্রমিত হচ্ছেন।
দেশীয় চিকিৎসকদের এ গবেষণায় দেখা গেছে, ফলে থাকা ২৭ ধরনের জীবাণুতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ। মূলত সংক্রমণের উৎসগুলো জানতে এ গবেষণা চালানো হয়। গতকাল সোমবার সহকারী গবেষক, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাকলী হালদার বলেন, হাসপাতালে অনেক রোগজীবাণু থাকে। রোগীদের পাশাপাশি এখানে চিকিৎসক–নার্স, ওয়ার্ডবয়, স্বজনসহ প্রত্যেকের হাঁচি–কাশির মাধ্যমেও জীবাণু ছড়াচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একদল চিকিৎসক হাসপাতাল এলাকায় ফলের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণের গবেষণাটি করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আফ্রিকান জার্নাল অব মাইক্রোবায়োলজি রিসার্চে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, হাসপাতালের আশপাশ থেকে সংগ্রহ করা ফল থেকে যে ২৭ ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ ঘটছে, তার মধ্যে ৪৮ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী।
গবেষকরা ফলের মাধ্যমে জীবাণুতে সংক্রমিত হওয়ার কারণ হিসেবে হাসপাতালের দুর্বল সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (আইপিসি) ব্যবস্থা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের প্রভাবকে দায়ী করছেন। ঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালে যাওয়া রোগী, স্বজনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ফল ভালোভাবে ধুয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
কাকলী হালদার বলেন, অনেক সময় চিকিৎসকরা ব্যস্ততার কারণে এক রোগীকে দেখার পর হাত না ধুয়ে অন্য রোগীকে ধরেন। প্রতি রোগী আলাদা জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত। এতে একজন রোগীর জীবাণু দ্বারা আরেকজন সংক্রমিত হচ্ছে। এছাড়া বাইরে থেকে আসা রোগীর স্বজনদের হাতের স্পর্শ কিংবা শ্বাস–প্রশ্বাসের মাধ্যমেও অন্য জীবাণুর সংক্রমণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তির ৭২ ঘণ্টা পর রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, তারা এক ধরনের জীবাণু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর অন্য জীবাণু দ্বারা নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। এতে একদিকে রোগীদের সুস্থ হতে বেশি সময় লাগছে। অন্যদিকে চিকিৎসা খরচ ও মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
কাকলী হালদার বলেন, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলের আশপাশের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হওয়া ফল সংগ্রহ করা হয়। এ হাসপাতালে আসা রোগীরা নিয়মিত সেখানকার ফল খেয়ে থাকেন। এসব ফল পানিতে ধুয়ে সে পানি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়। এভাবে মোট ৩৫ বার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, মোট ২৭টি নমুনার সবটিতেই রোগ তৈরি করার মতো জীবাণু ছিল। এসব জীবাণুর মধ্যে ৫২ শতাংশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর হলেও ৪৮ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না।
এ গবেষক বলেন, প্রবাহিত পরিষ্কার পানি দিয়ে অনেকক্ষণ ধুয়ে নেওয়ার পর জীবাণু থাকার তেমন সম্ভাবনা থাকবে না। তবে হাসপাতালে সুবিধা কম থাকে বলে ফল বাড়ি থেকে ভালোভাবে ধুয়ে কেটে নিয়ে আসা সবচেয়ে উত্তম। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো হাত ধুয়ে ফল খাওয়া। শুধু হাত ধোয়ার কাজটি যদি সঠিকভাবে করা যায় তাহলে ৫০ শতাংশ সংক্রমণ কমানো সম্ভব। কিন্তু তা বেশিরভাগ লোক মানেন না।
তিনি বলেন, হাসপাতালে থাকা জীবাণু অনেক বিপজ্জনক। এজন্য আমরা শিশু ও বৃদ্ধদের চিকিৎসা ছাড়া হাসপাতালে আসতে নিরুৎসাহিত করি। হাসপাতালে থাকার সময় রোগী ও স্বজনদের যতবার সম্ভব হাত ধোয়া ও মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। রোগীর বিছানার আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। রোগীর একজনের বেশি স্বজন হাসপাতালে থাকা উচিত নয়। এছাড়া রোগীর কক্ষে প্রবেশের আগে মাস্ক পরার পাশাপাশি রোগীর সঙ্গে হাত মেলানো বা গায়ে হাত বোলানো এবং তার বিছানায় বসা থেকে বিরত থাকা জরুরি।বাংলানিউজ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com