ডেস্ক রিপেৃাট:- মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে সেনাবাহিনী পিছু হটছে এমন খবর এখন নিয়মিতই পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সঙ্গে আরাকান আর্মির ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের এখন যে অবস্থা তাতে আরাকান আর্মির সঙ্গেও পর্দার অন্তরালে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন মায়ানমারের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রেখেছে আবার বিকল্প হিসেবে আরাকান আর্মির সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছে। যুদ্ধ পরবর্তী রাখাইনে আরাকান আর্মি শক্তিশালী হবে সেটা একরকম নিশ্চিত জেনেই এমন অবস্থান দেশটির।
চীনের মতো বাংলাদেশেরও আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত বলে মত আন্তর্জাতক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের। কারণ বাংলাদেশে মায়ানমারের অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে এবং দেশটির বর্তমান সরকার এসব নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি করছে। এ অবস্থায় আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে পিছু হটছে সরকারি বাহিনী। সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ভবিষ্যৎ যাতে অনিশ্চিত হয়ে না যায় তাই আরাকান আর্মির সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করার পরামর্শ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে পর্দার অন্তরালে আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা। এটা বাংলাদেশের স্বার্থেই করতে হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক চায় আরাকান আর্মিও
তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক চায় আরাকান আর্মিও। সংগঠনটির প্রধান মেজর জেনারেল তোয়ান মারত নাইং বছর দেড়েক আগে হংকংভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এশিয়া টাইমসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তাদের এমন অবস্থানের কথা জানান।
মেজর জেনারেল তোয়ান মারত নাইং বলেন, ‘বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ না। তবে ততটা ভালোও নয়। আমরা এখনো এমন কিছু লক্ষ্য করিনি যাতে বুঝতে পারি আমাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের জন্য বাংলাদেশের কোনো নীতি আছে।’
আরাকান আর্মি প্রধান আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সম্পর্কের উন্নতি করা উচিত। তবে এ জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’
সাক্ষাৎকারে জেনারেল তোয়াং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আমাদের সমস্যা নেই। তবে রোহিঙ্গা শব্দটি নিয়ে আরাকানিদের আপত্তি আছে।’
এ প্রসঙ্গে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘অফিশিয়ালি তো আমরা আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি না। যেহেতু মায়ানমারে ভালো হোকে খারাপ হোক একটা সরকার আছে। তবে অবশ্যই স্বার্থের জন্য পর্দার অন্তরালে আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক থাকা উচিত। চীন যেটা করছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে আমাদের যে একেবারেই যোগাযোগ নেই তা নয়। ইতিমধ্যে আমাদের সাংবাদিকরা গিয়েছেন এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাছাড়া রোহিঙ্গাদেরও ছোট ছোট কিছু দলের সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক রয়েছে।’
সম্প্রতি নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে। সেখানে যুক্ত থেকে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। তারাও অভিমত দেন, মায়ানমারের অন্যপক্ষের সঙ্গেও অর্থাৎ আরাকান আর্মির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা খুব জরুরি।
বিশ্ববিখ্যাত কূটনৈতিক ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাটে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের কি তার মায়ানমার নীতি, বিশেষ করে আরাকান সেনাবাহিনীর পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্বিবেচনা করা উচিত?’ শিরোনামের লেখায় বলেছেন, ঢাকার সামনে তিনটি বিকল্প রয়েছে- স্থিতাবস্থা বজায় রাখা, আরাকান আর্মির সঙ্গে কাজ করা অথবা আরাকান আর্মির অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রোঅ্যাকটিভ অবস্থান নেওয়া।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মায়ানমারের সেনাদের সংখ্যা বাড়ছে
আরাকান আর্মির ধাওয়া খেয়ে মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি) নিয়মিত পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৬১৮ বিজিপি ও সেনা সদস্যকে দুই দফায় দেশটিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পালিয়ে সীমান্ত পার হয়ে আশ্রয় নেওয়ার মতো ঘটনা থেমে নেই।
গত শনিবারও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে দেশটির বিজিপি ও সেনা সদস্যরা। গতকাল রবিবার ভোরেও ১০০ জনের বেশি পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মায়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির বলছেন, এই সংখ্যার তারতম্য হতে পারে। যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। নিরস্ত্রীকরণের পর এসব বিজিপি ও সেনাসদস্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হেফাজতে রয়েছে।খবরের কাগজ
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com