ডেস্ক রির্পোট:- গত বছরের তুলনায় বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ আরও দুই ধাপ পিছিয়েছে। এই নিয়ে পরপর তিন বছরে সূচকে বাংলাদেশের ১৩ ধাপ অবনমন ঘটল। এই তিন বছরে ১৫২তম থেকে ১৬৫তম অবস্থানে নেমে গেল বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক সময়ে এই সূচকে বাংলাদেশের বড় অবনমন ঘটেছিল ২০২২ সালে। ওই বছর ২০২১ সালের তুলনায় ১০ ধাপ অবনমন হয়েছিল বাংলাদেশের। পরের দুই বছর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যথাক্রমে আরও এক ধাপ ও দুই ধাপে পেছায় বাংলাদেশ।
শুক্রবার (৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২৪ সালের হালনাগাদ সূচক প্রকাশ করেছে। এতে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম, স্কোর ২৭ দশমিক ৬৪। ২০২৩ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৩তম। স্কোর ছিল ৩৫ দশমিক ৩১।
এদিকে গতবারের মতো এবারও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। এবার নরওয়ের পর রয়েছে ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও ফিনল্যান্ড। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে যথাক্রমে আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া (১৮০তম), সিরিয়া (১৭৯তম), আফগানিস্তান (১৭৮তম), উত্তর কোরিয়া (১৭৭তম) ও ইরান (১৭৬তম)।
এদিকে এবারের সূচকে প্রতিবেশী দেশ ভারত দুই ধাপ অগ্রগতি হয়ে ১৫৯তম অবস্থানে আছে। আর দুই ধাপ অবনমন হয়ে পাকিস্তান আছে ১৫২তম অবস্থানে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ১৫০তম, মালদ্বীপ ১০৬তম, ভুটান ১৪৭তম ও নেপাল ৭৪তম অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৫৫তম, রাশিয়ার ১৬২তম এবং চীনের অবস্থান ১৭২তম।
আরএসএফ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, তার ওপর ভিত্তি করে এই সূচক প্রকাশ করে আসছে। রাজনীতি, সামাজিক, আইনি সুরক্ষা, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা- এ বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে এই সূচক তৈরি করা হয়। গত বছরের তুলনায় সামাজিক ও নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আছে আগের মতো। আর অন্য তিন ক্ষেত্রে অবনমন হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনায় আরএসএফ বলেছে, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি নাগরিকের মধ্যে এক-পঞ্চমাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। মূলধারার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাদের সংযোগ সামান্য। সংবাদ ও তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোর ভূমিকা বাড়ছে।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ও বাংলাদেশ বেতার সরকারি প্রচার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত মালিকানায় ৩ হাজার প্রিন্ট মিডিয়া (দৈনিক ও সাময়িকী), ৩০টি রেডিও স্টেশন, ৩০টি টিভি চ্যানেল ও কয়েক শ নিউজ সাইট রয়েছে।
আলোচনায় আরএসএফ বলছে, ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা পছন্দ না হলেই সাংবাদিকদের ওপর সহিংস হামলা চালিয়ে আসছেন। কোনো সাংবাদিককে চুপ করিয়ে দিতে বা সংবাদমাধ্যমকে বন্ধ করতে বিচারিক হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। সম্পাদকরা এ ধরনের বৈরী পরিস্থিতিতে সরকারি ভাষ্যকে চ্যালেঞ্জ করে, এমন বিষয় সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে যান।
আলোচনায় আরএসএফ সাইবার নিরাপত্তা আইনেরও (সিএসএ) সমালোচনা করেছে। আরএসএফের মতে, বাংলাদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমের বেশির ভাগই হয়েছে এ দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যে আত্মপ্রকাশ করা বড় ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। তারা নিজেদের সংবাদমাধ্যমকে দেখেন প্রচারণা, প্রভাব বিস্তার ও মুনাফা তৈরির একটি হাতিয়ার হিসেবে। এ ক্ষেত্রে তারা সম্পাদকীয় স্বাধীনতা বজায় রাখার চেয়ে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com