ডেস্ক রির্পোট:- দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বনিম্ন ব্যয় হয় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। ইউনিটপ্রতি গড় ব্যয় মাত্র ২৮-৩০ পয়সা। তবে তীব্র তাপপ্রবাহে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দেশের একমাত্র পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন নেমে এসেছে তলানিতে। হ্রদে পানিপ্রবাহ না বাড়লে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বিদ্যুৎ বিভাগের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল বেলা ২টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানির রুলকার্ভ ছিল ৮২ মিন সি লেভেল (এমএসএল)। অথচ পানির স্তর ছিল ৭৩ দশমিক ৭৮ এমএসএল। একই দিন বিকাল সাড়ে ৪টায় পানির রুলকার্ভ নেমে যায় ৮১ দশমিক ৮১ এমএসএলে এবং পানির স্তর ছিল ৭৩ দশমিক ৬৮ এমএসএল। বর্তমানে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি মাত্র ইউনিটে দিনে ৩০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানির স্তর কমে যাওয়ায় উৎপাদন উপযোগী পানির অভাবে কয়েক মাস ধরেই একটি ইউনিট দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) দেয়া তথ্যে জানা গেছে, কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র চট্টগ্রামে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য উৎস। কেন্দ্রটির পাঁচটি ইউনিটে সর্বোচ্চ ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। যদিও কেন্দ্রটির অফিশিয়াল সক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট। তীব্র তাপপ্রবাহে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় বর্তমানে উৎপাদন নেমে এসেছে ৩০ মেগাওয়াটে। সর্বশেষ গত ২৬ এপ্রিল কেন্দ্রের পানির স্তর নেমে এসেছিল ৭৫ দশমিক শূন্য ১ এমএসএলে। ৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে প্রতিদিনই দশমিক ২৫ থেকে দশমিক ৩০ শতাংশ হারে পানি কমছে হ্রদ থেকে। পানির রুলকার্ভ ৭০ এমএসএলের নিচে নামলে কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হবে। এ হিসাবে ১৫ দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে কাপ্তাই কেন্দ্র থেকে আর বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন বিপিডিবির কর্মকর্তারা।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা বলছেন, টানা তাপপ্রবাহের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমছে খুবই দ্রুত। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টি হলেও পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া তীব্র শুষ্ক মৌসুমের কারণে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হলেও সেটি কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না। মূলত উজান ও পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ঢলের পানিই কাপ্তাই হ্রদের পানিপ্রবাহ বাড়াতে ভরসা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রতি বছরই হ্রদের পানি কমে যায়। ফলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শতভাগ উৎপাদনে থাকা পাঁচটি ইউনিট থেকে এ সময় কমাতে কমাতে একটিতে নিয়ে আসে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। রেশনিংয়ের মাধ্যমে পানি ব্যবহার করায় মে মাস পর্যন্ত কেন্দ্রটি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ ছিল। সর্বশেষ দুই মাস ধরে কেন্দ্রটির একটি মাত্র ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু এবার টানা এক মাস ধরে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আশঙ্কার চেয়েও বেশি কমেছে হ্রদের পানি। ফলে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রশাসন ও হিসাব বিভাগের তথ্যে জানা গেছে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৩০ পয়সা। তবে দুই মাস ধরে একটি মাত্র ইউনিট দিয়ে প্রতিদিন মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় উৎপাদন খরচ বেড়ে হয়েছে ১ টাকার বেশি। বর্ষায় সব ইউনিট চালুর মাধ্যমে দৈনিক ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে গড় উৎপাদন ২৮-৩০ পয়সায় নেমে আসে।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের বলেন, ‘রুলকার্ভ অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর বিপজ্জনক পর্যায়ে নেমে এসেছে। ধরে রাখা দুই-তিন এমএসএল পানি দিয়ে আমরা অন্তত ১০ দিন উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারব। কিন্তু তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে তাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কম সময়ে উৎপাদন উপযোগী পানি থাকবে না। রুলকার্ভ ৭০ এমএসএলের নিচে নামলে আমরা উৎপাদন বন্ধ করে দেব। এখন প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।’ বণিক বার্তা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com