ডেস্ক রির্পোট:- যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসে যে বিতর্কিত বিল পাস হয়েছে, তা নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি বিল পাস হয়। এ বিল অনুযায়ী, ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরোধিতা করাটাও ইহুদিবিদ্বেষ বলে গণ্য হবে। নাগরিক স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার থাকা সংগঠনগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও বুধবার বিলটি পাস হয়। বিলটি যখন পাস হচ্ছিল তখন দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের তাঁবু সরিয়ে ফেলে পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশের। প্রায় সব ক্যাম্পাস নিজেদের নিয়ন্ত্রেণ নিয়েছে পুলিশ। যদিও বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এটাই শেষ নয়। তারা আবার ফিরে আসবেন। সমালোচকরা বলছেন, প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া আইনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভ দমনে ব্যবহার করা হতে পারে। আর এ কারণে অনেকটা তড়িঘড়ি করে এটি পাস করানো হয়েছে। খবর সিএনএনের।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি বিল পাস হয়েছে।
নাগরিক স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার থাকা সংগঠনগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও বুধবার বিলটি পাস হয়। এটি এখন অনুমোদনের জন্য কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাঠানো হবে। প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাসের পক্ষে ভোট দেন ৩২০ জন সদস্য। আর বিলটির বিপক্ষে ভোট দেন ৯১ জন। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলার বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বিক্ষোভ চলছে, তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিলটি পাস করা হয়েছে। সিনেটে পাস হওয়ার পর বিলটি যদি আইনে পরিণত হয়, তবে এর মধ্য দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল হলোকস্ট রিমেমব্র্যান্স অ্যালায়েন্সের (আইএইচআরএ) দেওয়া ইহুদিবিদ্বেষের সংজ্ঞাকে বিধিবদ্ধ করা হবে। আইএইচআরএর সংজ্ঞাকে আইনে যুক্ত করা হলে ইহুদিবিদ্বেষের চর্চা হওয়ার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তহবিল বন্ধ করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ। সমালোচকরা বলছেন, আইএইচআরএর ইহুদিবিদ্বেষের সংজ্ঞাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ দমনে ব্যবহার করা হতে পারে। আইএইচআরএর সংজ্ঞা অনুযায়ী, ইহুদিবিদ্বেষ হলো ‘ইহুদিদের নিয়ে একটি নির্দিষ্ট ধারণা, যা ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশে ব্যবহার করা হতে পারে।’
বিলটি যখন পাস হচ্ছিল তখন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইসরায়েলবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছিল। গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুই সপ্তাহ ধরে যে ছাত্রবিক্ষোভ চলছে, তা দমন করতে বুধবার বেশ মারমুখী হয়ে উঠে পুলিশ। বুধবার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে রাতভর অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় তাদের। তাঁবু গুটিয়ে ফেলে আন্দোলন বন্ধ করার যে আহ্বান জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, তাতে সাড়া না দেওয়ায় পুলিশ এসে ব্যারিকেড ভেঙে ক্যাম্পাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের তাঁবু সরিয়ে ফেলে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ইন লস অ্যাঞ্জেলেসসহ (ইউসিএলএ) বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বুধবার রাতে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় তাদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য শিক্ষার্থীদের বাইরে বের করে এনে বাসে করে সে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে ইউসিএলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় যেখানে, সেই কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়ে তাঁবু সরিয়ে ফেলেছে পুলিশ। এদিন রাতে বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটাই শেষ নয়। তারা আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না গাজায় গণহত্যা ও ইসরায়েলে মার্কিন সহায়তা বন্ধ হয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিতর্কিত বিল পাস হয় বুধবার। এ বিল অনুযায়ী, ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরোধিতা করাটাও ইহুদিবিদ্বেষ বলে গণ্য হবে। সমালোচকরা বলছেন, এ আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ দমনে ব্যবহার করা হতে পারে। খবর সিএনএন ও আলজাজিরার।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও দেশটিকে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করার দাবিতে দুই সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভের সূচনা হয়। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাঁবু টানিয়ে দিনরাত অবস্থান করে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছেন। পরে এ বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলন বন্ধ করে তাঁবু সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেও তারা তাতে অস্বীকৃতি জানায়। শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আন্দোলন দমাতে পুলিশও বেশ মারমুখী অবস্থান নেয়। তৃতীয় সপ্তাহে গড়ানো এ আন্দোলন থেকে ১১০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে দেখে বুধবার রাতে আরও কঠোর অবস্থানে যায় পুলিশ। শুধু এ রাতেই মারমুখী পুলিশ বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে আরও তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। এ দিন রাতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢোকে পুলিশ। প্রথমে মই লাগানো ‘বেয়ার’ নামের এক বিশাল গাড়ির সাহায্যে হ্যামিল্টন হলের দোতলার জানালা দিয়ে ভেতরে ঢোকে তারা। এ হলটি দুদিন আগে দখলে নেয় বিক্ষোভকারীরা। সেখানে যে আন্দোলনকারীরা ছিলেন তাদের হল থেকে বেরিয়ে যেতে বলে পুলিশ। যারা হল ছেড়ে যেতে সম্মত হননি, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ক্যাম্পাসে তাঁবু টানিয়ে যারা অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছিলেন, তাদেরও তুলে দেয় পুলিশ। কিছু আন্দোলনকারী বিনা বাধায় চলে যান। কিন্তু যারা পুলিশকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশের। সারা রাত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় নিউইয়র্ক পুলিশ। রাত পৌনে ১টার মধ্যে ক্যাম্পাস চত্বর থেকে সব আন্দোলনকারীকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ধরপাকড়ের সময়ে কেউ জখম হননি বলে দাবি করেছে পুলিশ।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও (ইউসিএলএ) পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের তাঁবু সরিয়ে ফেলে। এখানেও তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ক্যাম্পাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের ম্যাডিসন ক্যাম্পাসে পুলিশ এসে প্রথমে আন্দোলনকারীদের অবস্থান তুলে নেওয়ার জন্য ১৫ মিনিট সময় দেয়। আন্দোলনকারীরা তাতে কর্ণপাত করেননি। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তাদের। এই ক্যাম্পাস থেকে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এটাই শেষ নয়। তারা আবার ফিরে আসবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না গাজায় গণহত্যা বন্ধ ও ইসরায়েলে মার্কিন সহায়তা বন্ধ হয়।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com