ডেস্ক রির্পোট:- সংসদ ভবনের পরিবর্তে বিমান হাঁকিয়ে রাঙ্গামাটিতে গিয়ে বৈঠক করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক হলেও আলোচনায় স্থান পায়নি পাহাড়ের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতি। পাহাড়ে চলমান যৌথ বাহিনীর অভিযান বা অস্থিতিশীলতা নিয়ে বৈঠকে কোনো ধরনের আলোচনাই হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর উ শৈ সিং।
গত ১৯ মার্চ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বাস্তব পরিস্থিতি ভালোভাবে বুঝতে পাহাড়ের তিন জেলায় সংসদীয় কমিটির তিনটি বৈঠক করা হবে। কমিটির বৈঠক ‘সফল’ করতে বুধবার ঢাকা থেকে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলসহ পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, একজন উপসচিবসহ বড় একটি বহর পৌঁছে যায়। দুপুরের আগেই বৈঠক শেষ হলে কমিটির সদস্যরা বিমানে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তবে মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা এখনও রাঙ্গামাটিতে অবস্থান করছেন। অনেকেই কমিটির এই তৎপরতাকে জনগণের করের পয়সায় ‘প্রমোদভ্রমণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর ছাড়াও বৈঠকে সদস্যদের মধ্যে আরও অংশ নেন মন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙ্গামাটির এমপি দীপংকর তালুকদার, যশোর-১ আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের এমপি মঈন উদ্দিন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা। ১০ সদস্যের এই কমিটির অন্যরা অংশ নেননি।
বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য বরিশাল-৪ আসনের এমপি পংকজ নাথ সমকালকে বলেন, ব্যক্তিগত ব্যস্ততা থাকায় তিনি বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি। তবে পাহাড়ের তিন জেলায় কমিটির তিনটি বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন তিনি। পংকজ নাথ বলেন, স্থানীয় সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো বাইরে থেকে দেখার চেয়ে ওই স্থানে গিয়ে ভালোভাবে বুঝতে পাহাড়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পাহাড়ে সম্প্রতি ‘কেএনএফ’ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী তৎপরতা ঠেকাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে সেনা, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশও সম্পৃক্ত রয়েছে।
তবে সংসদীয় কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর মনে করেন, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখতিয়ার। এখানে অনুমাননির্ভর কোনো সুপারিশ করার সুযোগ নেই। তাই এ নিয়ে কমিটিতে কোনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি বৈঠকের কার্যতালিকায় ছিল না। আলাপকালে তিনি বলেন, কমিটি শুধু উন্নয়নকাজ তদারকি করবে।
তবে সংসদ সচিবালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাহী বিভাগের কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং তাদের নীতি-নির্ধারণে সুপারিশ করা সংসদীয় কমিটির অন্যতম কাজ। এ বিষয় থেকে সংসদ ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে সদস্যরাও এখন আর এসব বিষয়ে নিজেদের জড়িত করতে চান না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদবিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে আইন সভার কাজের পার্থক্য বর্তমান এমপিদের অনেকেই বোঝেন না এবং বোঝার চেষ্টাও তাদের মধ্যে নেই। তবে পাহাড়ে সৃষ্ট বর্তমান অস্থিতিশীলতার বিষয়টি রাজনৈতিক ইস্যু হওয়ার কারণে নিজেদের নিরাপদ রাখতে হয়তো কমিটির সদস্যরা এই আলোচনায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে আগ্রহী হননি।
বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে তিন পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন, সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার সর্বশেষ অগ্রগতি এবং পর্যটন শিল্পের অবস্থা সম্পর্কে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন এবং বিবিধ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে পার্বত্য এলাকায় কৃষকদের তিল চাষে আগ্রহী করতে বিনামূল্যে তিলের বীজ সরবরাহ এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সারাবছর ব্যবহারের ব্যবস্থা করার একটি প্রকল্প প্রণয়নের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।সমকাল
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com