ডেস্ক রির্পোট:-‘৯ মাস যাবত ঘরছাড়া ২০০ পরিবার’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে এমন সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নড়াইলের পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
রোববার (২১ এপ্রিল) বিষয়টি লিখিতভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকেও অবহিত করা হয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান জানান, রোববার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘২০০ পরিবার ৯ মাস ঘরছাড়া’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি নজরে আসার পর অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হয়নি তার ব্যাখ্যা দিতে নড়াইলের পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগী প্রায় ২০০ পরিবারকে নিজ নিজ বাসস্থানে বসবাস করার এবং চাষাবাদ করার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে আগামী ১৮ মের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতেও বলা হয়েছে। এ আদেশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকেও।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে আরও বলা হয়, ঘটনাটি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী গ্রামের। একটি হত্যাকাণ্ডের জেরে মামলার আসামি হয় এলাকার নিরীহ মানুষ। তাদের কেউ কৃষিকাজ করেন, কেউ-বা দিনমজুর। আসামি হয়ে হাজত খেটে জামিনে বের হয়ে এলেও ঘরে ফেরার ভাগ্য হয়নি ভুক্তভোগী সেসব মানুষের। এ ছাড়া হামলার ভয়ে বাড়িঘর ফেলে পথে পথে ঘুরছে একই গ্রামের ২০০ পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সুয়োমোটো গ্রহণ করেছে।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই গ্রামটিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুন হন যুবলীগকর্মী আজাদ শেখ (৩০)। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মানুষগুলো গ্রামের ভিটামাটিছাড়া। গত ১৫ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কাছে বাড়িঘরে ফেরার আকুতি নিয়ে তার কার্যালয়ে যান ভুক্তভোগীরা। তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেন। পিরোলী গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাবু শেখ ও শহীদুল মোল্যা গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন যুবলীগকর্মী আজাদ শেখ। তিনি বাবু শেখ গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ওই ঘটনায় ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন আজাদের বড় ভাই সাজ্জাদ শেখ। আজাদ হত্যা মামলার ছয় আসামি ছাড়া বাকি সবাই আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে জামিনের পরও তারা ঘরে ফিরতে পারছেন না।
এ হত্যাকাণ্ডের জেরে নিহতের দলীয় প্রতিপক্ষ ২০ জন আসামি হলেও গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে পরিবারগুলোর সদস্যদের গ্রামছাড়া করা হয়। সেই থেকে বাড়িঘরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পেরে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে পরিবার-পরিজনসহ পথে পথে মানবেতর দিন পার করছেন তারা।
পিরোলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জারজীদ মোল্যা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে বলেছেন, ‘২০০ পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জমিজমাও চাষ করতে পারছে না। আমরা চেষ্টা করছি তাদের বাড়িতে তুলে দেওয়া যায় কিনা। পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।’ এ বিষয়ে নড়াইলের পুলিশ সুপার মো. মেহেদী হাসান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে বলেছেন, ‘এটি ৯ মাস আগের একটি খুনের ঘটনা। নড়াইলের দীর্ঘদিনের রীতি হলো, আসামিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করা। আদালতে মামলা চলমান। আদালত যে রায় দেবেন, সেটাই চূড়ান্ত হবে।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুয়োমোটোতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাসস্থান একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। প্রায় ২০০ পরিবারের বাসস্থান থাকার পরও নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে বসবাস করতে না পারার বিষয়টি বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের ভাষ্য মতে, নড়াইলের দীর্ঘদিনের রীতি হলো, আসামিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করা। এক্ষেত্রে, খুনের ঘটনার সাথে সাথেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি তা কমিশনের বোধগম্য নয়। তাছাড়া মানুষের নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপত্তার সাথে বসবাস করার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com