ডেস্ক রির্পোট:- দাবদাহে পুড়ছে দেশ। মৌসুমের তাপমাত্রা দিনকে দিন রেকর্ড ভাঙছে। তীব্র তাপপ্রবাহ এখন অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। গরমে ওষ্ঠাগত জনজীবন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের অন্ত নেই। গতকাল চলতি বছরের সর্বোচ্চ ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যশোরে। রাজধানীতেও ছুঁয়েছে ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষিত হিট এলার্ট জারির দ্বিতীয় দিনে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন ৩ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।
যানজটের শহর রাজধানীর রাস্তাগুলোও গতকাল ছিল ফাঁকা। ব্যস্ত মোড়গুলোতে গাড়ির জটলা দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বের পরামর্শ চিকিৎসকদের। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে এক সপ্তাহ স্কুলগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত গরমের মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া বয়স্ক ও শিশুদের বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, তাপপ্রবাহের সময় আমাদের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সেগুলো সব জায়গায় দেয়া হবে।
সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত আবহাওয়া বার্তায় জানানো হয়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী ও পাবনা জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে আরও জানানো হয়, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আগামী ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলেও আবহাওয়া বার্তায় জানানো হয়। আগামী ২৪ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে তাপপ্রবাহের তীব্রতা কমে আসলেও এপ্রিলের পুরোটা জুড়েই তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা।
এদিকে অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোক করে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন চুয়াড়াঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার বাসিন্দা আর একজন পাবনা শহরের। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় সাত ঘণ্টার ব্যবধানে হিটস্ট্রোকে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন কৃষক ও একজন বৃদ্ধ মহিলা। সকাল ৮টার দিকে কৃষিকাজ করতে গিয়ে হিটস্ট্রোক করেন জাকির হোসেন (৩৪) নামে ওই ব্যক্তি। অন্য কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। জাকির উপজেলার দর্শনা থানার সীমন্ত সংলগ্ন ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে ও ঠাকুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি। নিহতের পিতা আমির হোসেন জানান, ধানের জমিতে সেচ (পানি) দেয়ার জন্য জাকির সকাল ৮টার দিকে মাঠে যায়। মাঠে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর খবর পাই ছেলে মাঠে স্ট্রোক করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে সে মারা যায়। ওই কৃষকের মৃত্যুর সাত ঘণ্টা পর উপজেলায় হিটস্ট্রোকে আরও এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মর্জিনা খাতুন (৬০) নামে ওই মহিলা মারা যান। তিনি সদর ইউনিয়ন পরিষদপাড়ার আজিম উদ্দীনের স্ত্রী। নিহতের ছেলে কামরুল ইসলাম কামু জানান, বেলা ৩টার দিকে অতিরিক্ত তাপে আমার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার উদ্দেশ্যে অটোরিকশায় উঠানোর পর মারা যান তিনি। অন্যদিকে পাবনায়ও হিটস্ট্রোকে সুকুমার দাস (৬০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। দুপুরে শহরের রূপকথা রোডে একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় হিটস্ট্রোক করেন তিনি। এসময় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল ৪২.৩ ডিগ্রি। যেটি অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। পাবনায় ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বনিম্ন্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ২২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া সিলেটে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত বছর পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। ১৯৯৫ ও ২০০২ সালেও সমান তাপমাত্রা উঠেছিল, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এদিকে অতিরিক্ত গরমের কারণে জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। তাই প্রতি মুহূর্তে ব্যবস্থা নিতে হবে এর থেকে বাঁচতে। অযথা কেউ যেন বাসা থেকে বের না হয়। প্রয়োজনীয় কাজগুলো সকাল সকাল শেষ করতে পারলে ভালো। তবে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষকে পেটের তাগিদে বের হতে হবে সেক্ষেত্রে তাদের সাবধানে থাকতে হবে। বিশেষ করে ছাতা নিয়ে বের হলে ভালো এবং একটানা যেন কাজ না করে। কিছু সময় পর পর কাজ থেকে বিরতি নিতে হবে। তিনি বলেন, পানি খেতে হবে বেশি করে। কারণ এসময়ে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। মানুষের শরীর থেকে লবণ ও চিনি বের হয়ে যায়। তাই সেলাইন ও তরল খাবার খেতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।মানবজমিন
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com