ডেস্ক রির্পোট:- ইরান-ইসরাইলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলায় উত্তেজনার বারুদ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। একটুখানি ঘষা লাগলেই শুরু হয়ে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ইরানের হুঙ্কার, বিশ্বনেতাদের হুঁশিয়ারি, জাতিসংঘের সাবধানবাণীর পরও গতকাল ইরানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টায় ইসরাইল ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে পশ্চিমা মিডিয়া খবর দেয়। কিন্তু একে ইসরাইল ও আমেরিকার প্রোপাগান্ডা বলে উড়িয়ে দিয়েছে ইরান। তারা বলেছে, ইরানে অনুপ্রবেশকারীরা ড্রোন উড়িয়েছিল আকাশে। তা ইরানের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবহার করে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। ফলে বিষয়টিকে তেমন আমলে নিচ্ছে না ইরান। লেবাননে নিযুক্ত বৃটেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত টম ফ্লেচার বলেছেন, ইরানের সঙ্গে উঁচু দরের জুয়া খেলছে ইসরাইল। ওদিকে কোনো রকম ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর নাকচ করেছে ইরান। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা।
ইরান এবং জাতিসংঘ বলেছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা নিরাপদে আছে। প্রাথমিকভাবে ইরানের বিমানবন্দরগুলো থেকে ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু যখন তারা দেখতে পেয়েছে সবকিছু নিরাপদ তখন আবার সচল হয়েছে বিমান চলাচল। ইরানের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রতিশোধ নেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই ইরানের।
ওদিকে বিবিসি দিয়েছে আরেক নতুন খবর। তাতে বলা হয়েছে, ইরানে হামলা চালানোর আগে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু তাদেরকে সমর্থন দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এমন অবস্থায় ইরানে হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বিবিসি জানাচ্ছে, তিনি বলেছেন, কোনোরকম সামরিক অভিযানের সঙ্গে যুক্ত নয় যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি তারা উত্তেজনা প্রশমনের জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যকার সম্পর্ককে কীভাবে মূল্যায়ন করেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়মিত সম্পর্ক বজায় আছে। ইসরাইলকে আত্মরক্ষায় সহায়তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। ওদিকে উত্তেজনা প্রশমনের উপায় খুঁজতে গত রাতে জি-৭ এর বৈঠকে বসার কথা। এর আগে ইরানে হামলার নিন্দা জানিয়েছে ওমান। উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বৃটেন, চীন, মিশর, তুরস্ক, জার্মানি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ভয়াবহ প্রতিশোধের চক্রকে এখনই বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। যেকোনো রকম প্রতিশোধমূলক হামলার নিন্দা জানান তিনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানান পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আগে একসঙ্গে কাজ করার।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সেখানকার মিডিয়া খবর দেয় যে, ইরানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে তোলপাড় হয়। এশিয়ার শেয়ারবাজারে এর প্রভাব পড়ে। তেলের দাম বেড়ে যায়। দাম বাড়ে স্বর্ণের।
ইরানি এক কর্মকর্তা বলেন, হামলার ঘটনাটি যে বিদেশি কোন উৎস থেকে হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা বাইরে থেকে কোনো আক্রমণের সম্মুখীন হইনি। চলমান আলোচনা হামলার চেয়ে অনুপ্রবেশকারীরাই করেছে বিবেচনায় নিয়ে সেদিকেই বেশি ঝুঁকছে ইরান। একজন ইরানি বিশ্লেষক রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেছেন, ইস্পাহানে বিমান প্রতিরক্ষা দিয়ে যে মিনি ড্রোনগুলোকে গুলি করা হয়েছে, তা ইরানের ভেতর থেকেই অনুপ্রবেশকারীরা উড়িয়েছিল।
দু’টি দেশের মিত্ররাও বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক মেরূকরণ করা। ইসরাইল-ইরান পাল্টাপাল্টি হামলা হলে তাতে জড়িয়ে যাবে এই বিপরীত মেরূর রাজনৈতিক পক্ষ। ফলে পরিস্থিতিকে ভঙ্গুর ও উত্তেজনাকর বলে বর্ণনা করছেন আল-জাজিরার সাংবাদিক ডোরসা জব্বারি। তিনি বলছেন, সবচেয়ে উত্তেজনাকর অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি আরও বলছেন, ইরানের মিডিয়া এই হামলাকে ছোট করে দেখছে। তারা বলছে, তিনটি ছোট আকারের উড়ন্ত অজ্ঞাত বস্তুকে স্থানীয় সময় ভোর ৪টায় ইস্পাহানের আকাশে দেখা গেছে। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা শনাক্ত করে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই স্থানটি হলো ইস্পাহান প্রদেশে ইরানের একটি সামরিক বিমানঘাঁটি বরাবর। সেটা দেশটি সেনাবাহিনী ব্যবহার করে, রেভ্যুলুশনারি গার্ড ব্যবহার করে না। এই ঘাঁটিতে আছে এফ-১৪ টোমক্যাট যুদ্ধবিমানের অনেক সংগ্রহ। এই স্থাপনাটি ইস্পাহান বিমানবন্দরের কাছেই। এসব ঘটনার পর ইরানের আকাশসীমাকে পরিষ্কার ও নিরাপদ করেছেন কর্মকর্তারা। ওদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে উদ্ধৃত করে ইসরাইলের হারেৎজ পত্রিকা বলছে, ইরানের তিনজন কর্মকর্তা বলেছেন- ইস্পাহানের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। তবে তেহরানের কর্মকর্তারা এ খবরকে মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, ইস্পাহানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ইরানে হামলার রিপোর্ট হলো ইসরাইল ও আমেরিকান মিডিয়ার প্রচারণা ছাড়া কিছু নয়। এ ছাড়া ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল জরুরি বৈঠক তলব করেছে মর্মে যে খবর বেরিয়েছে, তাও প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। রাষ্ট্রীয় টিভি বলেছে, শহরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এর বাইরে যেসব রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে তা ভুয়া।
এমন প্রেক্ষাপটে লেবাননে নিযুক্ত বৃটেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত টম ফ্লেচার বলেছেন, ইরানের সঙ্গে উঁচু দরের জুয়া খেলছে ইসরাইল। তিনি বিবিসি’র রেডিও ৪-কে বলেছেন, পুরো বিষয়টি এখনও বেশ ঝাঁপসা এবং একই সঙ্গে ওই অঞ্চলের অনেকেই সত্যিকারের ভয় থেকে জেগে উঠছে। তিনি আরও বলেন, এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ইরানের সঙ্গে জুয়া খেলা চালিয়ে যেতে চায় ইসরাইল। ওই অঞ্চলের কূটনীতিকরা এবং যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন সবাই এখন এই বিষয়ের তীব্রতা বা উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজছেন। তার ভাষায়, আমরা জানি না, এখন উত্তেজনা কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ইরান স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে যে, এটি খুব বড় কোনো বিষয় নয়। তারা এটিকে খাটো করে দেখছে। ইসরাইল অবশ্য আরও নাটকীয় কোনো পথ বেছে নিতে পারতো। ইরানকে স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছে ইসরাইল। তা হলো, তারা চাইলে যেকোনো জায়গায় হামলা করতে পারে। সেক্ষেত্রে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোও এর বাইরে নয়।
জাতিসংঘের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইইএই)। তারা নিশ্চিত করেছে যে, ইরানের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র বা স্থাপনাগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি। এগুলো নিরাপদে আছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে জোর দিয়ে বলেছেন- পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সামরিক সংঘাতের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। তিনি সবাইকে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারণ করার আহ্বান জানান। এর আগে ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন- ইস্পাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি আইআরআইবি হামলার খবরটিকে গুরুত্ব দেয়নি বা খারিজ করে দিয়েছে। তারা টেলিগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। সেই ভিডিওতে এই টিভি’র একজন সংবাদদাতাকে ইস্পাহান শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ভবনের শীর্ষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, শহরটি নিরাপদ। মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com