ডেস্ক রির্পোট:- আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জেরে শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেছেন, ‘কে আমার ভাই, কে আমার শ্বশুর, কে আমার ভাগিনা, কে আমার ভাতিজা কিংবা শ্যালক, এটা কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। এটা নিয়ে আমি আসলেই বিব্রত, লজ্জিত, দুঃখিত এবং আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে গিয়ে আজ শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যখনই আমি দেশে ফিরেছি, আমি মনে করেছি আমার দ্রুত আসা দরকার। আমার কর্মীর (দেলোয়ার) পাশে থাকা দরকার এবং স্পষ্ট বার্তাটা সবার কাছে দেওয়া দরকার। সে আমার দলের নেতা-কর্মী হোক, সে আমার আত্মীয় হোক, যেই হোক, আমি নিশ্চিত করতে চাই, এখানে কোনো ব্যক্তিগত কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ব্যবহার করে বাড়তি কোনো সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নাই। এই পরিচয় যদি কেউ ব্যবহার করতে চায়, তাহলে আরও কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে। সে রকম বার্তাই কিন্তু আমাদের নেত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।’
বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে জানিয়ে পলক বলেন, ‘উনি সরাসরি বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন এবং তিনি কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তারা যারাই হোক, পরিচয় যাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর আইন প্রয়োগ করা হয়। ইতিমধ্যে দুজন গ্রেপ্তার হয়েছে। আরও বাকি যারা জড়িত আছে, তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান এবং তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। আহত দেলোয়ার হোসেন পাশা ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য আমি দেশের বাইরে থেকেই হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী একটি উন্মুক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে দেলোয়ার রাজনৈতিক কারণে হামলার শিকার হয়েছেন, সে কারণে আমার দ্রুত আসাটা দায়িত্ব মনে করেছি। যারা এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং পেছনে যারা আছে, তাদের যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের আওয়ামী লীগের উপজেলা কিংবা পৌর শাখার যদি কেউ জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে যেন সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। যারা অন্য সহযোগী সংগঠনের আছে, তাদেরও যেন বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়।’
এ সময় পলক আরও বলেন, ‘আমি নৌকার বিজয়ী সংসদ সদস্য ও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মনে করেছি, এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমেই আমরা এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই, যেন কেউ কারও পরিচয় বহন করে আমাদের দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার দুঃসাহস করতে না পারে।’
এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সময়ও লুৎফুল হাবিব রুবেলের সঙ্গে নির্বাচন না করার জন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্থানীয় নেতা আসাদুজ্জামানকে তুলে নিয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। তাই আসাদুজ্জামান মনোনয়নপত্র জমা দেননি। রুবেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রতিমন্ত্রীর প্রভাবে শ্যালক রুবেল এমন বেপরোয়া কাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পলক বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় কী ঘটেছিল তা আমি জানি না। এবার কেন্দ্র থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন দলীয় প্রার্থী না দেওয়া হয় এবং কোনো এমপি-মন্ত্রী যেন কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ না করেন। যে প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক, তা তো আমি অস্বীকার করতে পারব না। সিংড়ার রাজনীতিতে আমি কখনোই ব্যক্তিগত, আত্মীয়, গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করিনি।’
এই অপহরণ ও নির্যাতনের সঙ্গে শ্যালক রুবেলের নাম ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে বলা হলেও মামলায় আসামি হিসেবে তাঁর নাম না থাকার বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে পলক বলেন, ‘যিনি হামলার শিকার, তাঁর আপন ভাই মামলার বাদী। তাঁর সঙ্গে আমার দল বা ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। বাধা দেওয়া হয়নি। তারা মামলাটা করেছে। পুলিশের কাছে মামলাটা তদন্তাধীন। কারা জড়িত তা আপনারা দেখেছেন। আদালতে দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। প্রাথমিক যে তথ্য-প্রমাণ, ভিডিও ফুটেজ আছে, যারাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুক, পুলিশ প্রভাবমুক্ত-নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা নেবে। আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই, কারও নাম ভাঙিয়ে কেউ যেন কোনো অপরাধ করতে না পারে।’
নাটোরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে তুলে নিয়ে ব্যাপক মারধর, আইসিইউতে ভর্তি, পুলিশের মুখে কুলুপনাটোরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে তুলে নিয়ে ব্যাপক মারধর, আইসিইউতে ভর্তি, পুলিশের মুখে কুলুপ
আগামী ৮ মে নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গত সোমবার জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে থেকে আরেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও আওয়ামী লীগ কর্মী দেলোয়ার হোসেনকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক। নির্যাতনের পর বিকেলে একটি মাইক্রোবাসে তুলে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর দেলোয়ারকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই রাতে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাঁকে সাধারণ ওয়ার্ডে দেওয়া হয়।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেলোয়ারের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন প্রতিমন্ত্রী পলক। তখন দেলোয়ার হোসেন ঘুমাচ্ছিলেন। প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। পলকের সঙ্গে এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহম্মদসহ চিকিৎসক ও সিংড়ার দলীয় নেতা-কর্মীরা।আজকের পত্রিকা
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com