রহমান মৃধা:- যখন গণতন্ত্রের ভাঙন শুরু হতে চলেছে পশ্চিমা দেশগুলোতে, ঠিক তেমনি এক সময়ে বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ গণতন্ত্রের স্বাদ পেতে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিলীন করতে ডিজিটাল পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে আবেগ ভরা মতামত পোষণ করে চলছে।
সত্যি হলেও দুঃখের বিষয় যে ডিজিটাল ভালোবাসা যেমন আবেগ এবং বিবেক ছাড়া অকেজো, গণতন্ত্রের চর্চাও ঠিক আবেগ এবং বিবেক ছাড়া মূল্যহীন। তবে সুইডেনে ডিজিটাল পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে এরা ডিজিটাল ইনডেক্স ফোরামের মাধ্যমে পুরো তরুণ প্রজন্মের গণতন্ত্র এবং রাজনীতিবিদদের ওপর গভীর হতাশার বাণী প্রকাশ করেছে। নতুন প্রজন্ম বর্তমান প্রেক্ষাপটের চরম অবনতির জন্য বরং গণতন্ত্র এবং রাজনীতিকে দায়ী করেছে। বেশ কিছুদিন আগে এ রকম একটি প্রতিবেদন দেশের টিভি চ্যানেলসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। ঠিক একই খবরে বলা হয়, একটি গ্রেনেড-বোমা সুইডেনের উপসালা শহরের গ্রেনবি নামের একটি গ্রামে কে বা কারা সেট করে রেখে সম্ভবত পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে অথবা সন্ত্রাসী হামলা ঘটানোর চেষ্টা করেছে। পুরো গ্রামসহ সারা দেশে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে তখন। পবিত্র কোরআন পোড়ানো, তুর্কি প্রেসিডেন্টের মূর্তি ওপর থেকে নিচু করে ঝোলানো, গণহত্যা, ডাকাতি, গোলাগুলিসহ ভাঙচুরের ঘটনাগুলো গণতন্ত্রকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলেছে। রাজনীতিবিদদের দক্ষতা প্রশ্নের মুখোমুখি, ন্যাটো জোটে সুইডেনের পদার্পণ, রাশিয়ার হুমকি সুইডেনকে নিয়ে, যা তরুণ প্রজন্মকে বেশ উদ্বিগ্নে ফেলেছে। এরপর বেকার সমস্যা এবং সুদের হার বৃদ্ধি সুইডিশ জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে, সব মিলিয়ে তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিবিদ ও গণতন্ত্রের প্রতি এই অনীহা প্রকাশ।
সেদিন সকালে আমার মেয়ের সঙ্গে একটি কাজে শহরে যেতে ট্রেন স্টেশনে এসে দেখি, যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে শিডিউল অনুযায়ী যে ট্রেনটি যাওয়ার কথা, সেটা ক্যানসেল হয়েছে। পরের ট্রেন ২০ মিনিট পরে আসবে। ফলে আমাদের মিটিংয়ের যে সময়টি ধার্য করা রয়েছে, সেটা সময়মতো ধরতে পারব না। কী করা? মেয়ে জেসিকা দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সি কল করলে ট্যাক্সি এসে গেল।
সুইডেনে ইদানীং কয়েক বছর ধরে ট্রেন সিস্টেম সঠিকভাবে সেবা দিতে পারছে না নানা কারণে—প্রচণ্ড শীত বা গরম অথবা যান্ত্রিক সমস্যা, যার ফলে যাত্রীরা বড্ড বিরক্তি পোষণ করে চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এখানে নিয়ম রয়েছে যদি ২০ মিনিটের বেশি যানবাহন দেরি করে, তবে ট্যাক্সি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ঝামেলাও আছে, যেমন কোন ট্রেনে কখন, কীভাবে এবং কোথায় যাত্রী যাবে ইত্যাদিসহ নানা ধরনের ফরমাল রুটিন এবং ক্রাইটেরিয়া যদি শতভাগ দেখানো যায়, তবে এ ধরনের সুযোগ ব্যবহার করা যেতে পারে। ঝামেলার কারণে অনেকে এসব এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে।
যা-ই হোক, পথে যেতে যেতে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জেসিকার সঙ্গে একটু কথা বললাম তার মতামতটি জানতে। মেয়ে আমার মতো বেশি কথা বলে না। তবু জানতে চাইলাম তার মতামত। সে শুধু বলল, ‘বাবা, চারদিকে যুদ্ধ, তারপর গোটা বিশ্বজুড়ে মানুষে মানুষে ঝগড়া, গণমাধ্যম সব সময় তুলে ধরে বিশ্বের নানা সমস্যা, এসব ঘটনার সঙ্গে নতুন প্রজন্ম জড়িত না অথচ তাদের নজরে এসব ফেলতে গণমাধ্যম তৎপর। কারণ তারা জানে, নতুন প্রজন্ম বেশির ভাগ সময় টেলিফোন, টেলিভিশন বা গণমাধ্যমে বেশি সময় দেয়, ফলে যেকোনোভাবে তাদের চেষ্টা প্রভাবটা যেন তরুণ সমাজে পড়ে এবং এতে করে এই তরুণ সমাজটা দিনে দিনে হতাশায় ভুগছে। ফলস্বরূপ নতুন প্রজন্ম বড়দের তথা সমাজের দায়িত্বশীলদের প্রতি বিশ্বস্ততা হারাচ্ছে। সঙ্গে গণতন্ত্রকে প্রশ্নের সম্মুখীন করছে।’
মেয়ের কথাগুলো মনে ধরল। তাই ট্রেনে ফিরতি পথে ভাবলাম বসেই তো আছি, কথাগুলো লিখে ফেলি। বলা তো যায় না কখন কী হয়! সবকিছুর পরও কেন যেন মনে হচ্ছে, গণতন্ত্রের বিদায়ের সময় খুব কাছে, কারণ ক্যাপিটালিজম নতুন প্রজন্মের মনের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে। নতুন প্রজন্মের ধারণা, গণতন্ত্র হচ্ছে মূর্খ এবং অযোগ্যদের জীবিকা নির্বাহের একটি মাধ্যম মাত্র। জানি না কী ভাবছে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। তারাও কি এদের মতো ভাবছে? খুব জানতে ইচ্ছে করে।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com