ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন:- প্রশ্ন:আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ৬ বছর আগে। দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে। ২০২০ সালে আমার স্বামী না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে। পরে গ্রাম্য সালিসে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে আলাদা জায়গায় রাখার শর্তে আমি সংসারে ফিরে আসি। প্রায় ৭ মাস আগে আমাকে না জানিয়ে গোপনে তৃতীয় বিয়ে করেছে। এই বিয়ে নিয়ে কথা বললে আমাকে প্রায় প্রতিদিনই মারধর করে। আমি আর সংসার করতে চাইছি না। তার বিরুদ্ধে আইনি কী পদক্ষেপ নিতে পারি?
উত্তর: আইন অনুযায়ী, স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করা যাবে না। এটি ফৌজদারি অপরাধ। তবে কোনো ব্যক্তির এক স্ত্রী বর্তমান থাকাকালে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হলে তাঁকে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের মধ্যে শেষ স্ত্রীর এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারামতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য ফি দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। অনুমতি দিতে যেসব বিষয় বিবেচনা করা হবে:
বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব
শারীরিক মারাত্মক দুর্বলতা
দাম্পত্যজীবন-সম্পর্কিত শারীরিক অক্ষমতা
দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য আদালত থেকে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা ডিক্রি বর্জন মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি।
এসব কারণের কোনোটি না থাকলে এবং অনুমতি ছাড়াই আপনার স্বামী তৃতীয় বিয়ে করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
আপনার স্বামী যদি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া তৃতীয় বিয়ে করেন, তবে তিনি অবিলম্বে তাঁর বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন। বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীরা আদালতে মামলা করে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন।
তৃতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী, অর্থাৎ আপনি আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন। আপনার সঙ্গে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে আপনার স্বামী আইনত বাধ্য।
ভরণপোষণের পাশাপাশি আপনি স্ত্রী হিসেবে ও সন্তানেরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করবে। মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায় করা হবে।
অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে আপনার স্বামী এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পাশাপাশি দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে, স্বামী যদি স্ত্রীর জীবনকালে পুনরায় বিয়ে করেন, তবে সেই ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে, তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
নির্যাতনের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আপনার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।
পরামর্শ দিয়েছেন ,ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন, অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সম্পাদক : এসএম শামসুল আলম।
ফোন:- ০১৫৫০৬০৯৩০৬, ০১৮২৮৯৫২৬২৬ ইমেইল:- smshamsul.cht@gmail.com
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com